সক্রিয় হলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। কড়া হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামল প্রশাসনও। তবু শুক্রবার দিনভর নুন নিয়ে গুজবে মেতে রইল এ রাজ্যও। বিহার, অসমের মতোই!
বৃহস্পতিবার রাতেই নুন নিয়ে গুজবের কথা কানে এসেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শুক্রবার মহরমের ছুটি থাকলেও মমতা পুলিশ-প্রশাসনের কাছে রাজ্যে নুনের জোগান এবং চাহিদা নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর করেন তিনি। এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ তাঁকে জানায়, কোথাও নুনের জোগানে ঘাটতি নেই। গুজব এবং কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর চক্রান্তেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের থেকে এমন রিপোর্ট পেয়েই জেলাশাসক এবং এসপিদের কড়া হাতে নুন-সঙ্কট মোকাবিলার নির্দেশ দেন মমতা। অসাধু ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। নুন নিয়ে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে তা ঠেকাতে বিশেষ দায়িত্ব দেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে।
কিন্তু এর পরেও রাজ্যের বহু জায়গাতেই নুন নিয়ে হাহাকারের ছবি দেখা গিয়েছে। পাহাড়ে সকাল থেকেই নুন কিনতে বিভিন্ন দোকানের সামনে লাইন পড়ে। কালোবাজারির অভিযোগে ফারেনভিলা এলাকার একটি মুদি দোকান বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। আটক করা হয় ১০ জন ব্যবসায়ীকে। শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থেকে এক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে মালদহের চাঁচলের মালতীপুর থেকে রাতে অন্তত ৫০ বস্তা নুনের প্যাকেট চুরি হয়ে যায় বলে অভিযোগ। কালোবাজারি এবং গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মালদহের ৫ ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বেশি দামে নুন বিক্রির অভিযোগে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থেকে ২ জন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নুনের কালোবাজারি রুখতে সকালে প্রায় দু’ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে ডুয়ার্সের শামুকতলায়।
কমবেশি একই ছবি দেখেছে কলকাতা ও আশপাশের জেলাগুলিও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ ব্লকে শুক্রবার বিকেল থেকে ৪০-৫০ টাকা কিলো দরে নুন বিক্রি হয়। মন্দিরবাজার ব্লকে বেশি দামে নুন বিক্রিকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী-ক্রেতা বচসা বাধে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
পুরমন্ত্রী জানান, রাজ্যে প্রয়োজনের বহু গুণ বেশি নুন মজুত রয়েছে। তাঁর ব্যাখ্যা, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দ্রুত মুনাফার জন্য নুন নেই বলে গুজব ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, “বেশ কিছু বছর আগে সারা দেশে গণেশের দুধ খাওয়ার গুজব রটেছিল। এ বারও সে রকম করার চেষ্টা চলছে।” রাজ্যবাসীর কাছে নুন সঙ্কট মোকাবিলার বিশেষ দায়িত্বপ্রাত্ব মন্ত্রীর আবেদন, “কাকে কান নিয়ে গিয়েছে শুনেই কাকের পিছনে ছুটবেন না। আগে দেখুন কান অক্ষত রয়েছে কি না। নুন পাওয়া যাচ্ছে না বলে কেউ গুজব ছড়ালে তাতে ধরে জানতে চান, কীসের ভিত্তিতে এ কথা বলা হচ্ছে। আর কোথাও দোকানদার বেশি দামে নুন বিক্রি করলে প্রশাসনকে জানান।” পুরমন্ত্রীর অভিযোগ, নুন নিয়ে কেউ কেউ চক্রান্ত করছে।
এ দিনও অসম এবং বিহারের কিছু স্থানে নুনের বাজারে কালোবাজারি সমানে চলেছে। এ দিন গুজব ছড়িয়ে নুনের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার অপরাধে ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে বিহার সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার নিজে বিষয়টি দেখভাল করেছেন। বিহারের পরিস্থিতির দেখতে কেন্দ্রীয় লবণ সরবরাহ দফতরের সহকারি কমিশনার শনিবার বিহার আসছেন। অসমেরও নানা প্রান্তে নুন নিয়ে ব্যাপক ফাটকাবাজি চলেছে। |
নুন-গুজব সামলাতে কড়া মমতা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিহার-অসমের পর নুন নিয়ে গুজব ছড়াল এ রাজ্যেও। সেই গুজবে ভর করেই শুক্রবার সকাল থেকে দোকানে দোকানে লম্বা লাইন। দার্জিলিং থেকে ডায়মন্ড হারবার সর্বত্রই ঘরে নুন মজুত করার হিড়িক। তার ফলে নুনের দাম এ দিন কোথাও উঠেছে কেজি প্রতি ২৫-৩০ টাকা, কোথাও বা তারও বেশি!
নুন-গুজবের ফায়দা তুলতে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী যে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, তা নজর এড়ায়নি রাজ্য প্রশাসনের। ফলে আলু-পেঁয়াজের পরে এ বার নুন-সঙ্কট মোকাবিলাতেও নামতে হচ্ছে সরকারকে। শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দিনভর পরিস্থিতির উপর নজর রাখেন এবং প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আসরে নামেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নুনের কালোবাজারি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
এত কিছু সত্ত্বেও জেলায় জেলায় এ দিন নুন নিয়ে হাহাকার চরমে ওঠে। বাদ যায়নি কলকাতা এবং শহরতলিও। গুজবকেই সত্যি ধরে নিয়ে অনেকেই প্যাকেট-প্যাকেট নুন কিনতে শুরু করেছেন। এই নুন-সঙ্কট সামাল দিতে শপিং মলগুলিতে মাথা পিছু এক প্যাকেটের বেশি নুন বিক্রি করা হচ্ছে না বলে জানা গিয়েছে। এক মলের কর্তা জানান, ক্রেতাদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক কমাতেই এই ব্যবস্থা। পুরমন্ত্রী পরে বলেন, “রাজ্যে প্রতিদিন ৫ হাজার বস্তা নুন লাগে। কিন্তু বড়বাজার, পোস্তা, কাশীপুরের গুদামে এখন অন্তত তিন লক্ষ বস্তা নুন মজুত। ফলে যা নুন ভাঁড়ারে রয়েছে, খেয়ে শেষ করা যাবে না!” |