খেলার খবর
বল পায়ে বিদেশিদের সঙ্গে
পাল্লা বরাবাজারের ছেলেদের
ল পায়ে ইস্টবেঙ্গলের শঙ্করলাল চক্রবর্তীকে টপকে যেতে বেগ পেয়েছিলেন মোহনবাগানের চিমা ওকোরি।
উগা ওপারার বাধা পেরিয়ে ইস্টবেঙ্গলের জালে বল জড়িয়েছিলেন এরিয়ানের গোপাল দেবনাথ।
গত কয়েক বছর ধরেই কলকাতা ময়দান দাপাচ্ছেন আফ্রিকান ফুটবলারেরা। চিমা, স্যামি ওমোলো থেকে আজকের ওডাফা, চিডি, ওপারাসেই পরম্পরা চলছে। কিন্তু নানা সময়ে তাঁদের ছাপিয়ে শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন শঙ্করলাল, গোপালদের মতো বঙ্গসন্তানেরাও। সমানে-সমানে টক্কর দিয়ে এসেছেন দীপেন্দু বিশ্বাস, বাসুদেব মণ্ডল, রহিম নবি, অসীম বিশ্বাস, মেহতাব হোসেনরা। বিদেশী খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঘরের ছেলেদের পাল্লা দেওয়ার এমন জোরদার লড়াইয়েরই যেন এক টুকরো ছবি দেখল হুড়া।
সম্প্রতি হুড়ার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু স্মৃতি মাঠে নাইজিরীয় ফুটবলারদের সঙ্গে সমানে টক্কর দিলেন বরাবাজারের হিজলার নেতাজি সুভাষ সঙ্ঘের খেলোয়াড়রা। ১৬টি দল নিয়ে ওই ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল হুড়া আদিবাসী ইউনাইটেড ক্লাব। ফাইনাল ম্যাচটি হয় জেলা চালকল অ্যাসোসিয়েশনের দল ‘নাইজিরিয়া একাদশ’ আর বরাবাজারের ওই দলটির মধ্যে। ২-০ গোলে জয়ী হয় নাইজিরিয়া একাদশ। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে ৫০ মিনিট ধরে বরাবাজারের ছেলেরা যে ভাবে পাল্লা দিলেন, মুগ্ধ দর্শকেরা। তাই খেলা শেষে নাইজিরিয়া একাদশের অধিনায়ক গিলবার্ট পর্যন্ত স্বীকার করেছেন, “ম্যাচটা আমরা জিতলেও ওরা বেশ ভাল খেলেছে। ওঁদের কয়েকজন রীতিমতো পেশাদার ফুটবলারের মতো খেলল।”

কে নেবে দখল? ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো।
খেলাধুলো করে রোজগার করতে ও পড়াশোনা করতে নাইজিরিয়া থেকে অনেকেই এ দেশে এসেছেন। তাঁদের কেউ কেউ এখন জেলায় জেলায় খেলতেও আসছেন। পেটানো চেহারার ও দীর্ঘদেহী কৃষ্ণকায় এই নাইজিরীয় যুবকদের উপস্থিতি ফুটবল মাঠে দর্শকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। অনেক ক্লাব তাই নিজেদের খেলোয়াড়দের সঙ্গে অল্প কয়েকজন নাইজিরীয় যুবক নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খেলতে যাচ্ছে। কিন্তু পুরুলিয়ার চালকল অ্যাসোসিয়েশন ১১ জন নাইজিরীয় যুবকদের নিয়ে দল গড়ে খেলতে এসেছিলেন। তাই তাঁদের খেলা দেখতে প্রচুর দর্শক মাঠে এসেছিলেন।
জেলা চালকল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গৌতম কুণ্ডু বলেন, “ওঁরা নাইজিরিয়ার বিভিন্ন শহরের খেলোয়াড়। প্রতিযোগিতার আকর্ষণ বাড়াতে এবং খেতাব জিততে আমরা তাঁদের এনেছিলাম।” নাইজিরীয় ফুটবলাররা প্রত্যাশা মেটালেও বিপক্ষের খেলোয়াড়দের দক্ষতাতেও তিনি মুগ্ধ। তাঁর কথায়, “বরাবাজারের দলটি নাইজিরিয়ার দলটির সঙ্গে দারুণ লড়াই দিয়েছে। নাইজিরিয়ার ফুটবলাররা পেশাদার খেলোয়াড় হলেও তাঁদের সঙ্গে জঙ্গলমহলের ছেলেরা যে ভাবে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে, তা না দেখলে বিশ্বাস হবে না।” রানার্স হিজলা নেতাজি সুভাষ সঙ্ঘের কর্মকর্তা প্রশান্তচন্দ্র মাহাতো বলেন, “ম্যাচটায় জিততে পারলে অবশ্যই ভালো লাগত। তবে আমাদের ছেলেরা এ রকম পেশাদার একটি বিদেশি দলের সঙ্গে যে ভাবে যুঝেছে, তাতে ঠিকমতো প্রশিক্ষণ ও সুযোগ পেলে ওঁরাও যে চোখ ধাঁধানো খেলতে পারে তা সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে।”
হেরেও যেন জিতে গিয়েছে বরাবাজারের দলটি। খেলার শেষে এমনটাই মনে হচ্ছিল তাঁদের শরীরী ভাষায়। সুভাষ সঙ্ঘের খেলোযাড় বিধান মান্ডি, বিমল মান্ডি, ছুটু মুর্মুদের কথায়, “আমরা ওঁদের কাছে উচ্চতায় হেরে গেলাম। উপরের বলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওরা সুবিধা পেয়েছে।” বিধান জানান, চক্রধরপুরে এর আগে একবার নাইজিরীয়দের মুখোমুখি তিনি হয়েছিলেন। তবে সে বার বিপক্ষ দলে ওঁরা চার-পাঁচজন খেলেছিল। নাইজিরীয়দের পুরো দলের সঙ্গে এই প্রথম তাঁর খেলার অভিজ্ঞতা হল।
প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা ক্লাবের মুখপাত্র নবীন মুর্মু বলেন, “বিদেশি একটা পেশাদারি দলের বিরুদ্ধে ঘরের ছেলেদের খেলা সবাই খুব উপভোগ করেছেন।’’ দর্শকদের কেউ কেউ আবার আইএফএ শিল্ডে গোরা সাহেবদের বিরুদ্ধে গোষ্ঠ পালের মোহনবাগানের খালি পায়ে লড়াইয়ের সঙ্গেও এই ম্যাচের তুলনা টেনেছেন। সমীর মাহাতো, প্রবোধচন্দ্র মণ্ডলের মতো দর্শকের কথায়, “সেবার মোহনবাগার জিতেছিল। এ বার বারবাজারের ছেলেরা হেরে গিয়েও আমাদের মন জিতে নিয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.