পুরভোটের মুখে ভোট প্রচারের প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে পানীয় জল। শহরের ২৮টি ওয়ার্ডের সর্বত্রই রয়েছে পানীয় জলের অপ্রতুল সরবরাহ। প্রোমোটারদের তৈরি বহুতল আবাসনে সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে জল তোলার ফলে ভূগর্ভের জলস্তর নেমে যাচ্ছে। ফলে গ্রীষ্মে সাধারণ নলকূপে জল মিলছে না।
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী শহরের পাড়ায় পাড়ায় নির্বাচনী পথসভায় গিয়ে নরম সুরে এক রকম নিয়ম করেই বলছেন, “নাগরিক পরিষেবার একটি দিক বহরমপুর পুরসভা এখনও পূরণ করতে পারেনি। তা হল পানীয় জলের সমস্যা।” অধীরবাবুর দাবি, “৫ বছর নয়। মাত্র ২টি মাস চাই। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পাড়ায় পাড়ায় কল, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঘরে ঘরে জল।” নিজের তৈরি ওই স্লোগানের ব্যাখ্যা দিতে তারপর তিনিই জনতার উদ্দেশে বলছেন, “গোরাবাজার শ্মশানঘাট থেকে শুরু করে ভাগীরথীর পাড় হয়ে কাশিমবাজার পর্যন্ত শহরের সর্বত্র কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় বড়সড় জল প্রকল্পের কাজ চলছে। সেটি প্রায় শেষের পথে। ভাগীরথীর জল তুলে শোধন করে পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে সামনের ডিসেম্বরের মধ্যে।”
১৮৭৬ সালের ১ জুলাই বহরমপুর পুরসভার পত্তন হয়। তার কয়েক বছর পর বহরমপুর শহরের উত্তর প্রান্তে ১৮৯৪ সালে মহারানি স্বর্ণময়ীর দানে গড়ে ওঠে কুঞ্জঘাটায় জলকল প্রকল্প। দৈনিক জল সরবরাহের ক্ষমতা সাড়ে ৩ লক্ষ গ্যালন। ভাগীরথীর জল তুলে শোধন করে পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ওই ঐতিহাসিক জল প্রকল্প বহরমপুর শহরের মানুষের কাছে আজও ‘রানিকল’ নামে পরিচিত। |
তারপর ভাগীরথী দিয়ে শতবর্ষ ধরে যত জল গড়িয়ে শহরের মানুষের পানীয় জলের সঙ্কটও তত বেড়েছে। বতর্মানে শহরের লোকসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ। এবং প্রতিদিন জেলার সদর শহরে ব্যবসা, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আদালত ও অফিসের কাজে আসেন আরও প্রায় এক লক্ষ লোক। সব মিলিয়ে দৈনিক তিন লক্ষ মানুষের জন্য প্রয়োজন ২৭ লক্ষ গ্যালন জল।
রানির দানে গড়ে ওঠা রানিকল, পরে গ্রান্টহলের কাছে গড়ে তোলা জলট্যাঙ্ক ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় আর যে সব জল প্রকল্প রয়েছে, সেই সব মিলিয়ে বর্তমানে দৈনিক মোট ১১ লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহের ক্ষমতা রয়েছে। এ কথা জানিয়ে পুরপ্রধান নীলরতম আঢ্য বলেন, “ফলে প্রয়োজনের তুলনায় জল সরবরাহে বর্তমানে বিপুল ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি মেটাতে সাংসদ অধীরবাবুর উদ্যোগে বহরমপুরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের প্রকল্প গড়তে ৩১ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। ওই প্রকল্প থেকে দৈনিক ৩০ লক্ষ গ্যালন বিশুদ্ধ পানীয় দল সরবরাহ করা হবে। তার ফলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই শহরের পানীয় জলের সমস্যা থাকবে না। প্রকল্পটি ডিসেম্বরে চালু করা হবে।”
উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী তৃণমূলের সুব্রত সাহা বলেন, “পুরসভার মদতে শহরে বেআইনি প্রোমোটারদের তৈরি বহুতল আবাসনে সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে জল তোলার ব্যবস্থা হচ্ছে। ফলে ভূগর্ভের জলস্তর নেমে যাচ্ছে। তখন বহুতল বাড়ির পাশের একতলা দোতলা বাড়ির সাধারণ নলকূপে জল মিলছে না।” প্রমোটারদের বেআইনি নির্মাণের অনুমতি কোথাও দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন নীলরতনবাবু। |