হয় ‘বেল’, না-হয় ‘জেল’!
পুর-নির্বাচনের প্রচারে বহরমপুর জুড়ে চরকি পাক দেওয়া কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রীর জনসভাটি ছিল কাশিমবাজার এলাকায়। শুক্রবার সন্ধেয় সেখানেই মঞ্চে উঠে তিনি শুরু করলেন, “কাল, হয় জেল না হয় বেল। কিন্তু যাই হোক না কেন, আপনারা শাসক দলের খেল সফল হতে দেবেন না।”
বহরমপুরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের লাগোয়া মাঠটায় তখন উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু নিজের খাসতালুকে খোদ অধীর চৌধুরীর মুখে নিজের জেল হাজতের কথায় খানিক থমকে যায় জনতা। পরক্ষণেই অবশ্য উচ্ছাস, ‘‘বেলই হবে, আপনার বেলই হবে।’’
না থেমে অধীর তখন বলে চলেছেন, “আড়াই বছর আগে খুন হল শাসকদলের ওই কর্মী। আর তাতেই আমাকে ফাঁসিয়ে রাজনৈতিক খেলা শুরু করল তৃণমূল। লক্ষ্য একটাই, যে কোনও ভাবে কংগ্রেসের এই শক্ত ঘাঁটিতে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে পুর-নির্বাচনের আগে জেলে ঢোকানো। যাতে দলের কর্মীদের মনোবল ভেঙে যায়। হতাশ হয়ে পড়ে। আর সেই সুযোগে পুলিশের মদতে শাসকদল পুরসভা দখল করে। কিন্তু তাদের আশা কি পূরণ হবে?” জনতা ফের গর্জে ওঠে, “না।”
আজ, শনিবার তাঁর অন্তর্বর্তী জামিনের শেষ দিন। কাল জেলা জজ কোর্টে অধীরের আগাম জামিনের শুনানি। সেখানে বেল পাওয়ার প্রশ্নেই অধীর অবশ্যই ‘হ্যাঁ’ শুনতে চাইছেন। তবে বহরমপুর জেলা আদালতের বার কাউন্সিলের আইনজীবীদের একাংশের ধারণা আজ, ওই তাঁর আগাম জামিনের ফয়সালা না-ও হতে পারে।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তী জামিন খারিজ করার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছে। বিচারপতি নিশিথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি গ্রহণও করেছেন। সে ক্ষেত্রে আইনজ্ঞদের একাংশ মনে করেছেন হাইকোর্টে সে ব্যাপারে শুনানি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালত সিদ্ধান্ত নাও জানাতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্য রেল প্রতিমন্ত্রীর অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ ফের বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
২০১১ সালের ১৩ মে বহরমপুর নিমতলা মোড়ে খুন হয়েছিলেন বহরমপুরের স্থানীয় তৃণমূল কর্মী কামাল শেখ। ওই ঘটনায় অধীর চৌধুরীকে ‘ফেরার’ দেখিয়ে মুর্শিদাবাদের সিজেএম আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানায় জেলা পুলিশ। বিচারক ওই আবেদন মঞ্জুর করেন। এর পরেই জেলা জজ আদালতে অধীরের আগাম জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী। বহরমপুর জেলা দায়রা আদালত পুজোর আগে অধীরের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছিল। আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারকের নির্দেশ ছিল, ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত রেল প্রতিমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা যাবে না। পরে ওই মেয়াদ বাড়িয়ে ১৬ নভেম্বর করা হয়।
|