কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর অন্তর্বর্তী জামিন খারিজ করার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে পাল্টা মামলা করল রাজ্য সরকার।
বহরমপুর জেলা দায়রা আদালত পুজোর আগে অধীরের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছিল। আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারকের নির্দেশ ছিল, ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত রেল প্রতিমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা যাবে না। কিন্তু, ২৯ তারিখ মন্ত্রীর আগাম জামিনের আবেদন গ্রাহ্য হবে কিনা সে বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য হলেও ওই দিন আদালতের বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে কর্মবিরতির ডাক দেওয়ায় বিচারক অধীরের অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ বাড়ান ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত। রাজ্য সরকার বহরমপুর আদালতের মঞ্জুর করা সেই অন্তর্বর্তী জামিন খারিজ করার আবেদন জানিয়েই এ দিন হাইকোর্টে আবেদন করে। বিচারপতি নিশিথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি গ্রহণ করেছে।
রাজ্য সরকারের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার বলেন, “অধীরবাবু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলে বহরমপুর আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে তা হওয়ার কথা নয়। দেশের শীর্ষ আদালত বলছে, অপরাধের ক্ষেত্রে পদ দেখার অবকাশ নেই। রাজ্য সরকার এই যুক্তিতে মন্ত্রীর জামিন খারিজের আবেদন করেছে।” বহরমপুর আদালতে অধীরের আইনজীবী নীলাব্জ দত্ত অবশ্য বলেন, “হাইকোর্ট থেকে এ ব্যাপারে আমরা এখনও কোনও নোটিস পাইনি। হাইকোর্ট থেকে নোটিস পেলে আইনি লড়াইয়ের কথা ভাবা যাবে।”
এ দিন সন্ধ্যায় হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের আবেদনের খবর জানতে পারেন অধীর। তাঁর মন্তব্য, “পুরভোটের আগে আমাকে জেলে পাঠাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসক দল। তবে বিচার ব্যবস্থার উপরে আমার আস্থা রয়েছে। ওঁরা নিশ্চয় রাজ্য সরকারের অভিসন্ধি অনুমান করতে পারবেন।” তবে, তাঁর জামিন অগ্রাহ্য হলেও তার প্রভাব যে পুর নির্বাচনে পড়বে না এ দিন সে কথাও জানিয়ে দিচ্ছেন অধীর।
বিচার ব্যবস্থার প্রতি অধীর ‘আস্থা’ প্রকাশ করলেও মুর্শিদাবাদে তাঁর ঘোর প্রতিপক্ষ, প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুন কবীর কিন্তু এ দিন তোপ দেগেছেন বহরমপুর আদালতের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “অধীর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সেই প্রভাব খাটিয়েই তিনি জামিন পেয়ে গিয়েছে। বার কাউন্সিল এমনকী জজ কোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচারকদেরও তিনি প্রভাবিত করেছেন। সে জন্যই তাঁর অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।” দলের এক প্রভাবশালী নেতা অবশ্য বলেন, “এই মন্তব্য একান্ত ভাবেই হুমায়ুনের। দলের নয়।”
তবে, কংগ্রেস তথা অধীরের খাসতালুক বহরমপুরের পুর নির্বাচনকে শাসক দলও যে পাখির চোখ করেছে দলীয় সূত্রেই তা জানা গিয়েছে। জামিন পেয়ে দিল্লি থেকে বহরমপুরে ফিরে শহরের আনাচে কানাচে পুর-প্রচার করে বেড়াচ্ছেন অধীর। তারই পাল্টা জবাব দিতে আজ, বুধবার বহরমপুরে আসছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। এ দিনের সভাস্থল হিসেবেও শাসকদল বেছে নিয়েছে সেই মাঠ, দিন কয়েক আগে প্রদেশ কংগ্রেস যেখানে জমায়েত করেছিল। যে জনসভায় শাসক দলের ‘মাথা গুঁড়িয়ে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল অধীরের বিরুদ্ধে। এ দিন, তার পাল্টা মুকুল কী বলেন, তা দেখতেই মুখিয়ে রয়েছে বহরমপুর।
|