অন্তর্বর্তিকালীন জামিন পেলেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।
বুধবার, বহরমপুর জজকোর্টের পুজো অবকাশকালীন দায়রা বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁর অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছেন। অধীরের আগাম জামিনের শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৯ অক্টোবর। সে দিনই তৃণমূল কর্মী কামাল শেখ খুনে অভিযুক্ত রেল প্রতিমন্ত্রী আগাম জামিন পাবেন কি না তা স্পষ্ট হবে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বহরমপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অলি বিশ্বাসের আদালতে ওই খুনের মামলার চার্জশিট জমা দিয়েছিল পুলিশ। অন্য আট অভিযুক্তের সঙ্গে সেই চার্জশিটে নাম ছিল অধীর চৌধুরীর। যা শুনে অধীরের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘আগাম জামিনের জন্য আবেদন করার প্রশ্ন নেই।”
তবে, দলের হাইকমান্ড, বিশেষত রাহুল গাঁধীর সঙ্গে পরামর্শের পরে, গত ১ অক্টোবর দলীয় ভাবে মন্ত্রীর আগাম জামিনের জন্য আবেদন জানানো হয়। কিন্তু গত ন-দিনে পর পর তিন বার সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পরে শেষ পর্যন্ত বুধবার, ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁর অন্তর্বর্তিকালীন জামিনের আবেদনে সাড়া দিল আদালত।
এ দিন সন্ধেয় সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই বহরমপুর শহর জুড়ে পঞ্চমীতেই ‘বোধনের’ উৎসব শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ থেকে পাড়ার মোড়ে তুমুল শব্দে ফাটতে থাকে বাজি। তবে, দলীয় কর্মীদের এই প্রবল উচ্ছাসের মাঝেই দিল্লি থেকে রেল প্রতিমন্ত্রী জানান, দশমীর আগে বহরমপুরে আসতে পারছেন না তিনি। অধীর বলেন, “নবমী পর্যন্ত রেলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকব। আগে থেকে সেই সব কর্মসূচি ঠিক করা রয়েছে। তাই দশমীর আগে বহরমপুর যেতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।”
এ দিন বিকেলে, কলকাতায়, অধীরকে গ্রেফতারের ‘চক্রান্তের’ প্রতিবাদে তাঁরই খাস তালুক ‘বহরমপুর চলো’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল প্রদেশ কংগ্রেস। পুজোর পরে আগামী ২৭ অক্টোবর ওই কর্মসূচির দিনও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। সন্ধ্যায় তাঁর জামিনের খবর জানতে পেরে প্রদীপবাবু বলেন, “আমরা আন্দোলন থেকে সরছি না। তবে ২৭ তারিখেই ওই কর্মসূচি নেওয়া হবে কিনা তা অধীরের সঙ্গে কথা বলেই স্থির করা হবে।” বুধবার কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে অধীরকে গ্রেফতারের ‘চক্রান্তের’ বিরুদ্ধে সমাবেশ ডেকেছিল প্রদেশ কংগ্রেস। সেখানেই প্রদেশ নেতৃত্বের দাবি, আসন্ন বহরমপুর পুর নির্বাচনে কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলতে শাসক দল অধীরকে ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে প্রদীপবাবুর নেতৃত্বে কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে অধীর-কাণ্ডের প্রতিবাদে চিঠিও দিয়েছেন এ দিন। কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা মহম্মদ সোহরাবের লেখা সেই চিঠির মূল বক্তব্য, অধীরকে অকারণে হয়রান না করার জন্য রাজ্যপাল যেন প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। পরে প্রদীপবাবু বলেন, “রাজ্যপাল বলেছেন, তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।” প্রদেশ নেতা মানস ভুঁইয়াও এ দিন ছাত্র পরিষদ এবং যুব কংগ্রেসকে রাজ্য জুড়ে প্রতিটি ব্লকে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সভায় এআইসিসি-র তরফে উপস্থিত ছিলেন শাকিল আহমেদ খানও। তিনিও মমতাকে কটাক্ষ করে বলেন, “হাওয়াই চপ্পলের নাটক বন্ধ করুন। কাউকে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসালে এআইসিসি আইনি ও রাজনৈতিক দুই লড়াই-ই লড়বে।” ওই সভা প্রসঙ্গে এ দিন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য:“আইন আইনের পথেই চলবে।”
এ দিন বহরমপুরে অধীর চৌধুরির দুই আইনজীবী নীলাব্জ দত্ত ও শুভাঞ্জন সেনগুপ্ত অন্তবর্তিকালীন জামিনের পক্ষে সওয়াল করে এজলাসে বলেন, “তৃণমূল কর্মী কামাল শেখ খুনের মামলায় অন্য অভিযুক্তরা সবাই জামিন পেয়েছেন। জনপ্রতিনিধি অধীর চৌধুরিকে অন্তর্বর্তিকালীন জামিন দিতে আইনি বাধা কোথায়!” সরকার পক্ষের আইনজীবী দেবাশিস রায় অবশ্য জামিনের বিরোধিতা করেন। তবে, দু-পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত অধীরের অন্তর্বর্তিকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। |