পুজোর জন্য যে টাকা তারা দাবি করেছিল স্কুল শিক্ষকেরা তা দিতে রাজি ছিলেন না। আর তাই শিক্ষকদের ‘মারধর’ করে কিঞ্চিৎ ‘শিক্ষা’ দিয়েছে পুজো উদ্যোক্তারা।
বুধবার কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি এলাকার গোবরাপোতা নেতাজি স্কুলে এমনই কাণ্ড ঘটিয়েছে স্থানীয় পুজো উদ্যোক্তারা বলে অভিযোগ। আহত হয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তিও রয়েছেন এক শিক্ষক। তবে তাঁরা এ ব্যাপারে পুলিশে কোনও অভিযোগ করেননি। জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি ওই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে, তাহলেই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।”
ওই পুজো কমিটির সভাপতি শঙ্কর শীল অবশ্য খোলাখুলিই বলছেন, “প্রতি মাসে শিক্ষকরা প্রচুর টাকা মাইনে পান। চাঁদা দিতেই তাঁদের যত আপত্তি।” কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রীই তো বলেছেন পুজোর চাঁদা নিয়ে জোরজুলুম বরদাস্ত করা হবে না। তাহলে শাসক দলের ওই কর্মী এ কথা বলেন কী করে? পুলিশই বা এ ঘটনা জানা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? উত্তর মেলেনি। |
জখম শিক্ষক।—নিজস্ব চিত্র। |
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে গোবরাপোতা স্কুলে গিয়ে সাত হাজার এক টাকা চাঁদা চায় স্থানীয় পুজো কমিটির সদস্যরা। ওই কমিটির সদস্য শঙ্কর শীল স্কুলের পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি। তাঁর একটি রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে, তিনি কৃষ্ণনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল মনোনীত সদস্য। মঙ্গলবার তিনি সদলবলে স্কুলে চাঁদা আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা অত টাকা চাঁদা দিতে পারবেন না। বুধবার বৈঠক করে চাঁদার পরিমাণ তাঁরা জানাবেন বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তখনকার মতো শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে ফিরে আসে ওই উদ্যোক্তারা।
স্কুল শিক্ষকদের দাবি, বুধবার বাইকে চেপে স্কুলে আসছিলেন স্কুলের দুই শিক্ষক বৃন্দাবন ঘোষ ও সুভাষচন্দ্র সরকার। পুজো মণ্ডপের সামনে ওই পুজো কমিটির কয়েকজন সদস্য তাঁদের রাস্তা আটকায়। তাঁদের গাড়ির চাবি কেড়ে নেওয়া হয়। গালিগালাজও করা হয়। সেই সময় বাস থেকে নামছিলেন আরও কয়েক জন শিক্ষক। তাঁদেরকেও গালিগালাজ করা শুরু হয়। খবরটা পৌঁছয় স্কুলে। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ ছাত্রছাত্রীরা। তাঁরাই জখম শিক্ষকদের উদ্ধার করে স্কুলে নিয়ে যান।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে জখম শিক্ষক জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, “চাঁদা দেওয়া হবে না এ কথা তো বলা হয়নি। তারপরও কেন ওরা মারধর করল বুঝতে পারছি না।” আর, পুজো-উদ্যোক্তা শঙ্করবাবু বলেন, “ঘটনার সময় আমি ওখানে ছিলাম না। তাই কী ঘটেছে বলতে পারব না।” |