জুনিয়র সাফ অ্যাথলেটিক্সে রুপো জিতে
সাড়া ফেলেছে বনগাঁর তিতির
ছোটবেলায় অন্য শিশুরা যখন পুতুল, লুকোচুরি খেলায় মত্ত থাকত, তখন তার নেশা ছিল দৌড়োনো। ফাঁকা জায়গা পেলেই শুরু হয়ে যেত একরত্তি মেয়েটার দৌড়। আর মাঠ পেলে তো কথাই নেই। মেয়ের এমন দৌড়ের নেশাকে প্রথমে নেহাতই খেয়াল বলে গুরুত্ব দেননি বাবা-মা। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ের নেশাও বাড়তে থাকায় মেয়েকে অ্যাথলিট হিসাবে তৈরি করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তাঁরা। শুরু হয় মেয়েকে নিয়ে নিয়মিত মাঠে যাওয়া।
বয়স তখন সবেমাত্র সাত। ধীরে ধীরে মহকুমা, জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সাফল্য আসতে শুরু করে। এক সময়ের সেই ছোট্ট দৌড়বাজ তিতিরই এখন গর্ব বনগাঁর প্রতাপগড়ের বাসিন্দাদের। বছর সতেরোর তিতির হোড় সাড়া ফেলেছে আন্তজার্তিক স্তরেও। সদ্যসমাপ্ত দ্বিতীয় সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন জুনিয়র অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে ৪x৪০০ মিটার রিলেতে ভারতের হয়ে রূপো জিতেছে বনগাঁর মেয়েটি। ১০ থেকে ১২ নভেম্বর রাঁচিতে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক দেশ ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্থান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ থেকে প্রতিযোগিরা যোগ দিয়েছিল। অনূর্ধ্ব ২০ বছরের এই প্রতিযোগিতায় তিতিরের সাফল্য অনেককেই অবাক করেছে। রিলেতে তার সঙ্গে ছিল কেরলের অরুণিমা, সাহেব রানা ও মহারাষ্ট্রের অর্চনা। ৫টি দেশের প্রতিযোগীরা রিলেতে অংশ নেয়। সোনা পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। রূপো জিততে তিতিররা সময় নিয়েছে ৩ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড।

বাড়ি ফিরে দাদুর হাতে মিষ্টিমুখ তিতিরের। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
বাবা সপ্তর্ষিবাবু প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। মা নিতান্তই গৃহবধূ। রূপো জেতার খবর প্রথম বাবা-মাকেই জানায় তিতির। কারণ মেয়ে কেমন ফল করে তা নিয়েই সারাক্ষণ টেনশনে ছিলেন তাঁরা। মেয়েকে তৈরি করতে চেষ্টার কসুর করেনি হোড় দম্পতি। ফোনে মেয়ের সাফল্যের খবর পাওয়ার পর থেকেই সপ্তর্ষিবাবু ও গোপাদেবী পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে আনন্দে মেতেছেন। মিষ্টিমুখ থেকে বাদ যাচ্ছেন না কেউই। প্রতিবেশীরা ভিড় করেছেন বাড়িতে। কারণ পাড়ার মেয়ের এমন সাফল্যে গর্বিত তাঁরাও। বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই তিতিরকে নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে হইহল্লা। যদিও এই সাফল্যে গা ভাসাতে রাজি নয় সতেরোর বছরের কিশোরী। তাঁর কথায়, “আরও পথ এগোতে চাই। সামনের লক্ষ্য জুনিয়র এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড মিট থেকে সোনা তুলে আনা।” এই নভেম্বরেই ২৯ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে জুনিয়র জাতীয় অ্যাথলেটিক মিট। সেখানে সাফল্য পেলেই তার সামনে খুলে যাবে জুনিয়র এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড মিট-এর কাঙ্খিত ছাড়পত্র। আর সেই লক্ষ্যেই এখন তার নিরন্তর অনুশীলন চলছে সাই’তে দ্রোণাচার্য কোচ কুন্তল রায়ের কাছে। তিতিরের রোল মডেল নামী অ্যাথলিট সুস্মিতা সিংহ রায়। তার কথায়, “দিদির সঙ্গে কুন্তল স্যারের কাছে প্র্যাকটিস করি। দিদি নানা পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন। ওঁর সঙ্গে প্র্যাকটিস করে খুব উপকৃত হয়েছি। দিদির মতোই দৌড়তে চাই।”
বনগাঁর অ্যাথলিটের ঘরের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে নামী দেশি-বিদেশি অ্যাথলিটদের পোস্টার। এক সময় তিতিরের অলিম্পিকে যাওয়ার স্বপ্ন শুনে বাবা তাকে পয়সা জমানোর জন্য মাটির ভান্ডার কিনে দিয়েছিলেন। এখনও তাতে পয়সা ফেলে কি না জানতে চাইলে খানিকটা লজ্জা নিয়েই তিতির বলে, “আর ভান্ডার নয়, ব্যাগে টাকা রাখি।”
নিয়মিত কঠোর অনুশীলনের ফাঁকেই তিতির স্বপ্ন দেখে চলেছে এশিয়ান গেমস, অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে পদক আনার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.