ধান খেয়েছে বুলবুলিতে...।
এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। তা বলে ধান-খেত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ময়ূর?
ডুয়ার্সের গরুমারা অভয়ারণ্যের লাগোয়া বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা এখন এমনই ‘ময়ূরাতঙ্কে’ ভুগছেন। তবে যত না ধান খাচ্ছে, নষ্ট করছে তার দ্বিগুণ। গরুমারা ও মোরাঘাটের জঙ্গল লাগোয়া ওই গ্রামগুলির বাসিন্দারা তাই পটকা-গুলতি হাতে পালা করে জমি পাহারা দিচ্ছেন। রামসাই এমনই একটি গ্রাম। হাতি, বুনো শুয়োরের দাপাদাপি থেকে ফসল বাঁচাতে এত দিন রাত জাগতেন সে গ্রামের বাসিন্দারা। এ বার, এই ভরা হেমন্তে জমির পাকা ধান বাঁচাতে তাঁরা ময়ূরের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ নেমেছেন।
তাঁরা জানান, ভোর থাকতেই ময়ূরের ঝাঁক উড়ে আসছে মাঠে। তারপর, মাঠে পড়ে থাকা ধানের সঙ্গে পোকামাকড়, ব্যাঙ, ইঁদুর সাপের খোঁজে তারা পাকা ধান মাড়িয়ে ঢুকে পড়ছে খেতে। তাদের ওড়াউড়ি আর বাহারি লেজের ঝাপটে তছনছ ধানি মাঠ। ময়ূরকুলের হুটোপুটিতে মাটিতে নুইয়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান। |
খুকলুং বস্তির মণ্ডল গনাথ রাভা বলেন, “ভোর হতেই ময়ূরের ঝাঁক জঙ্গল থেকে উড়ে এসে ধান খেতে নামছে। বেলার দিকে উড়ে গেলেও শেষ বিকেলে ফের উড়ে আসছে তারা।” তাঁর দু’বিঘা জমির অনেকটাই এ বার ময়ূরের দাপটে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একই দশা অনিল রাভা, চন রাভা, ডাং রাভাদের। ঝাড়আলতা-২ পঞ্চায়েতের প্রধান জগন্নাথ রাভা বলেন, “প্রায়ই খবর আসছে, মাঠে ময়ূর নেমেছে। কিন্তু কী করব, আমরা তো আর পাল্টা ময়ূর নিধনে নামতে পারি না!” এলাকার কালামাটি, চটুঁয়া, কালীপুর গ্রাগুলি একই ময়ূরাতঙ্কে ভুগছেন। কিন্তু গরুমারা জাতীয় উদ্যান বা আশপাশের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামবাসীদের কাছে ময়ূর তো অচেনা অতিথি নয়। তাহলে কি ওই সব অভয়ারণ্যে ময়ূরের সংখ্যা বেড়েছে?
ময়ূরসুমারি সে ভাবে এখনও করে উঠতে পারেনি বন দফতর। বন বিভাগের কর্তারা তাই এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও তথ্য দিতে পারছেন না। জলপাইগুড়ির ডিএফও (বন্যপ্রাণ) সুমিতা ঘটক বলেন, “জঙ্গলে ময়ূরের সংখ্যা যে বেড়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে নিছক ধানের খোঁজেই তারা মাঠে হানা দিচ্ছে এমনটা নয়। সম্ভবত ভাল ধান হওয়ায় মাঠে পোকামাকড়ের সংখ্যাও বেড়েছে। তার খোঁজেই ওরা হানা দিচ্ছে মাঠে।”
বন দফতরের এক কর্তা জানান, সাপ এবং ইঁদুর ময়ূরের প্রিয় খাদ্য। ধানি মাঠে সে সবেই খুঁজছে ময়ূরেরা। সেই সময়ে তাদের পায়ের চাপে নষ্ট হচ্ছে ধান। আর, উপায়হীন গ্রামবাসীরা পটকা নিয়ে দিন-জাগছেন, ময়ূর এল বলে! |