বঙ্গোপসাগরের তীরে বিষাক্ত শৈবাল
ড়ই বিষাক্ত। খেলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায় মাছেরা। আবার ওই মাছ খেয়ে মৃত্যু হতে পারে মানুষেরও। জাপান-কোরিয়ায় তার জ্বালায় প্রতি বছর একশো মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয় মাছ ব্যবসায়। এ বার সেই বিষাক্ত জলজ শৈবাল ‘কোক্লোডিনিয়ামে’র দেখা মিলল এ রাজ্যে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর ছয় সদস্যের এক বিজ্ঞানীদল সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরের উপকূলে সমীক্ষা চালিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের শঙ্করপুর, জুনপুট ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগরের জলে বিষাক্ত এই জলজ শৈবালের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে থাকা ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকে এই নিয়ে সমীক্ষা রিপোর্টও পাঠিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দলের নেতৃত্বে থাকা বিজ্ঞানী পুণ্যশ্লোক ভাদুড়ি জানান, এখনও এই শৈবালের উপস্থিতি খুবই সামান্য। তবে বঙ্গোপসাগরের জলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার দরুণ (গত ৩০ বছরে প্রায় ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেড়েছে) অতি দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলজ এই শৈবালের বংশবিস্তার-সহ খুঁটিনাটি দিকগুলি খতিয়ে দেখতে আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে এক বছর টানা সমীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা।
কোক্লোডিনিয়াম কী? এলই বা কোথা থেকে?
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সহজ কথায় এটি বিষাক্ত জলজ শৈবাল। সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র অনুযায়ী এদের খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে মাছেরা। পুণ্যশ্লোকবাবু জানান, আনুবীক্ষণিক এই শৈবালের দেহে ‘বিষ’ তৈরি হয়। এতে এদের নিজেদের ক্ষতি না হলেও যারা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে, তাদের দেহে গিয়ে তীব্র বিষক্রিয়া হয়। প্রথমে ক্যারিবিয়ান সাগর ও উত্তর আটলান্টিকে এই শৈবালের হদিশ মিললেও পরবর্তী কালে উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর বিশেষ করে জাপান ও কোরিয়ার উপকূলে এদের ব্যাপক বংশবৃদ্ধি হয়েছে। যার জন্য এই দুই দেশে মৎস্য-ব্যবসায় কোটি-কোটি টাকার ক্ষতি হয়। প্রতি বছর প্রায় আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছের জোগান দেওয়া বঙ্গোপসাগরের উপকূলও এই শৈবালের ক্ষতিকর প্রভাবে ‘মৎস্যশূন্য’ হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগর থেকে বঙ্গোপসাগরে এল কী ভাবে?
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, প্রশান্ত মহাসাগর থেকে বঙ্গোপসাগরে আসা কোনও জাহাজের ট্যাঙ্কের জলে এ দেশে এসেছে ‘কোক্লোডিনিয়াম’। জ্বালানি নেওয়ার সময় বিদেশি ওই জাহাজ ট্যাঙ্কের জল ছেড়ে দেওয়ায় তা বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।
এই শৈবালের ‘বিষ’ দেহে গেলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় মাছের। এই ভাবে সমুদ্রে মাছের মড়ক লেগে যায়। আর বিষাক্ত ওই মাছ যদি মানুষ খায় তা হলে ডায়েরিয়ার মতো উপসর্গ হবে প্রথমে। এমনকী মানুষের মৃত্যুও হতে পারে বলে সাবধান করে দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হল, এর কোনও চিকিৎসা নেই। অর্থাৎ নিরাময়ের উপায় এখনও পর্যন্ত অজানা। শুধু তাই নয়, বিষাক্ত এই শৈবাল নির্মূল করারও পন্থা মেলেনি।
বিষাক্ত মাছ বাজারে ঢোকা থেকে অবশ্য আটকানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রফতানির আগে মাছের যে গুণগত মান পরীক্ষা হয়, তা করলেই ‘টক্সিনে’র উপস্থিতি টের পাওয়া যাবে। কোরিয়া-জাপানে এ ভাবেই শ’য়ে শ’য়ে মাছ নষ্ট করে দেওয়া হয় প্রতি বছর। কিন্তু দিঘা মোহনা থেকে যে মাছ রাজ্যের বাজারে বা দেশের অন্যত্র যায়, তা পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই। বিজ্ঞানীদের মতে, সাবধানতা হিসাবে আপাতত সমস্ত সামুদ্রিক মাছের গুণগত মান পরীক্ষা করাটা জরুরি। কারণ, বঙ্গোপসাগর যে ভাবে ক্রমশ উষ্ণ হয়ে পড়ছে, তাতে রাজ্যের উপকূলে আগামী দিনে ‘রেড টাইড’ (বিষাক্ত শৈবালের ঝাঁক) তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মৎস্য দফতরের উপ-অধিকর্তা (পশ্চিমাঞ্চল) উৎপলকান্তি সর জানান, এই রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে সামুদ্রিক মাছ ধরা হয় বলে অন্তর্বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুণগত মান পরীক্ষার জন্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায়নি। তাঁর কথায়, “বিজ্ঞানীরা তাঁদের সমীক্ষায় যা পেয়েছেন তা-র পাশাপাশি প্রতিকারের উপায় বললে, সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.