শৌচাগার ব্যবহার বাড়াতে
অভিনব প্রচার ইউনিসেফের
মাঠে-ঘাটে প্রাতঃকৃত্য আর নয়। ভারতীয়দের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এক অভিনব প্রচার শুরু করল ‘ইউনিসেফ ইন্ডিয়া’। ‘টেক পু টু দ্য লু’ বা ‘খোলা জায়গায় আর নয়, কাজ সারো শৌচাগারে’অনলাইনে তিন মাস ধরে চলবে এই প্রচার। আর এই কু-অভ্যাস ঠেকাতে তরুণ প্রজন্মকেই হাতিয়ার করতে চায় ইউনিসেফ। মানুষের মধ্যে কেবল সচেতনতা বাড়ানোই নয়, অপকম্ম দেখলে যাতে তারা রুখে দাঁড়াতে পারে, এমন সমাজ তৈরিই লক্ষ্য ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার।
সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা সু কোটসের কথায়, ভারতে প্রায় ৬২ কোটি মানুষ মল-মূত্র ত্যাগ করেন খোলা জায়গায়। প্রতিবাদ তো দূরে থাক, রাস্তায় ময়লা পড়ে থাকতে দেখলে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যান বাকি অর্ধেক লোক। ওই নোংরা থেকে যে হাজার হাজার রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে, তার দিকে ভ্রূক্ষেপ করেন না কেউই। আম-জনতার এই মনোভাবেরই আমূল বদল দরকার, মত কোটসের।
‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ জাগিয়ে তুলতে তাই অন্তর্জালেই ভরসা রাখছে ইউনিসেফ। কিশোর-কিশোরীদের বেশিরভাগই এখন রীতিমতো সড়গড় ই-দুনিয়ায়। ‘টেক পু টু দ্য লু’ প্রচারে তরুণ মনকে আকর্ষণের হাজার একটা উপাদানও মজুত রাখছে রাষ্ট্রপুঞ্জের এই সংস্থাটি। তৈরি করা হয়েছে মুখ্য চরিত্র ‘পু’এর বড়সড় এক কার্টুন। তার গায়ের রঙটিও আবার যেমন তেমন নয়, দেখলেই মনে হবে সাক্ষাৎ এক তাল ময়লা। ওয়েবসাইট তো থাকছেই, এ নিয়ে নতুন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান ও খেলাও রয়েছে ইউনিসেফের ঝুলিতে।
রাস্তাঘাটে প্রাতঃকৃত্য বন্ধ করতে ইউনিসেফের পাশে আছেন যাঁরা, সুযোগ থাকছে তাঁদের সরাসরি অংশগ্রহণেরও। সু কোটস জানিয়েছেন, যাঁরা বিশ্বাস করেন ভারতের মতো বড় দেশে এই অপকম্ম এক্ষুনি থামা উচিত। ‘টেক পু টু দ্য লু’ ওয়েবসাইটে গিয়ে সই করতে পারবেন তাঁরা। প্রচার শেষ হলে যা তুলে দেওয়া হবে রাষ্ট্রপতির হাতে। অনলাইন প্রচারের শেষে রাস্তাতে নামবে ইউনিসেফ। দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদে সরাসরি প্রচারের পথে হাঁটবে তারা।
শৌচাগার নিয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস আগেও হয়েছে। প্রচারের মুখ হিসেবে আনা হয় জনপ্রিয় অভিনেতাদেরও। গত বছরই যেমন নির্মল ভারত অভিযানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর বাছা হয়েছিল বলিউডের নামী অভিনেত্রী বিদ্যা বালনকে।
নিত্য দিনের জীবনে শৌচাগার যে কতটা দরকার, তা বোঝাতে গিয়ে মাস কয়েক আগে ফেঁসে যান কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। “ভারতে মন্দিরের সংখ্যা বেশি। তার বদলে শৌচাগারের সংখ্যা বাড়ানো উচিত” মন্তব্য তাঁর। রমেশের এই কথার পরই হইচই পড়ে যায় দেশজুড়ে। কট্টরবাদী দলগুলোর ধর্ম নিয়ে শোরগোলে চাপা পড়ে মূল সমস্যা।
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়া নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি যখন কলকাতার মেয়র ছিলেন, রাস্তাঘাটে এই কীর্তিমানদের দেখলে তাদের তাড়াতে নিজেই নেমে পড়তেন গাড়ি থেকে। ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার এই অভিনব প্রচারের কথা শুনে তাঁর মন্তব্য, “এই সামাজিক ব্যাধি দূর করতে লাগাতার প্রচারের থেকে ভালো কাজ আর কিছুই হয় না।” তবে তিনি মনে করেন, প্রচারের পাশাপাশি দরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও। শৌচাগার যে প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম, তা-ও মেনে নিয়েছেন সুব্রতবাবু। জানালেন, তাঁর আমলে এক সমীক্ষায় জানা যায়, শহরে প্রায় পাঁচ হাজার শৌচাগার তৈরি করা দরকার। পুরোটা না পারলেও সে সময় ১৯০০ শৌচাগার তৈরি করেছিলেন তিনি।
ভারতে শৌচাগার ব্যবহারের হার অবশ্য আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে, মানছে ইউনিসেফও। তাদের হিসাব মতো ১৯৯০ সালে যেখানে ৫১% মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করতেন, সেখানে ২০১০ সালে হয়েছে ৭৫%।
ইউনিসেফের এই অভিনব প্রচার আজ থেকে শুরু হলেও এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, ভারতে যত মানুষ অভ্যেসের বশে রাস্তার পাশে দাঁড়ান, তার থেকে বেশি লোক মাঠে যায় অনন্যোপায় হয়ে। বাড়িতে পাকা পায়খানা তৈরির সামর্থ্য নেই। প্রয়োজনীয় শৌচাগার তৈরি করে দেয়নি সরকার। ফলে মাঠে বসা ছাড়া কোনও উপায় নেই তাঁদের। যাঁরা শৌচাগারের সুবিধাই পান না তাঁরা ই-প্রচারে কী ভাবে সজাগ হবেন, প্রশ্ন অনেকের। ইউনিসেফের দাবি, যাঁরা এই প্রচারের আলোয় আসছেন, তাঁরাই তো সচেতন করতে পারবেন বাকিদের। আর এ পথেই সাফল্যের আশা দেখছে ইউনিসেফ ইন্ডিয়া।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.