লবণ-সংকটের গুজবে জেরবার উত্তর-পূর্বও
ত কাল রাত থেকে যে গুজব আংশিকভাবে মাথাচাড়া দিয়েছিল মানুষের মুখে-মুখে, আজ সকাল থেকে লবণ-সংকটের সেই গুজবই এসএমএস আর ফেসবুকের হাত ধরে উত্তর-পূর্বের সব রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল। লবণ অমিল হওয়ার আশঙ্কায় মানুষের ভিড় বাড়ল শপিং মল থেকে পাড়ার দোকানে। দেখা গেল লম্বা লাইন। আর সেই সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চড়া দামে ব্যবসা করে নিল। অবশ্য বিভিন্ন রাজ্য সরকার দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেমে পড়ায় দিনের শেষে গুজব প্রতিহত হয়েছে। অসম, মেঘালয়, মণিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশে রাত পর্যন্ত ১১ জন অসাধু ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত কাল অসমে রটে যায়, দ্রুত বাজার থেকে উধাও হবে লবণ। কবে ফের মিলবে তার ঠিক নেই। গুজব রটে, দেশের লবণ কারখানাগুলিতে না কী আগুন লেগে গিয়েছে। গুজরাত থেকে লবণের জোগান বন্ধ। শীঘ্রই দেড়শো টাকা কিলো দরে লবণ কিনতে হবে। গুজব ছড়ানোয়, উজানি অসমের শিবসাগর, তিনসুকিয়া, যোরহাটের মানুষ মুদি দোকানে ভিড় জমান। গতকাল রাত অবধি উজানি অসমের মানুষ লাইন দিয়ে, ২৫-৩০ টাকা মূল্যে ৫-৬ কিলো করে লবণ কিনে নিয়ে যায়। গুয়াহাটিতেও গুজবের জের পৌঁছয়। চটজলদি বহু ব্যবসায়ী লবণের সঞ্চয় সরিয়ে ফেলে।
মিলবে না লবণ গুজব ছড়াতেই রসদ সংগ্রহে ব্যস্ত
সাধারণ মানুষ। করিমগঞ্জে শুক্রবার উত্তম মুহরীর তোলা ছবি।
সকাল থেকে গুয়াহাটি, ধুবুরি, কোকরাঝাড়, মরিগাঁও, বঙাইগাঁও, কাছার, করিমগঞ্জ, বরপেটাসহ বিভিন্ন জেলায় নুনের কালোবাজারি শুরু হয়। পুলিশ ও প্রশাসন গুজবের বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রচার চালাতে থাকে। গুয়াহাটির গণেশগুড়ি, অভয়াপুরী, চামারিয়া, গরৈমারি, কুকুরমারা থেকে মোট পাঁচ জন ব্যবসায়ীকে কালোবাজারির অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। গোলাঘাট থেকে নুন পাচারের সময় একটি ট্রাক আটক করা হয়। নামনি অসমের কোকরাঝাড়ের কোথাও দেড়শো টাকা কিলোতেও নুন বিক্রির খবর এসেছে। গ্রামের দোকানে নুন না পেয়ে আবালবৃদ্ধবণিতা কেবল নুন কিনতে কোকরাঝাড় শহরে ভিড় জমান। পরিস্থিতি সামলাতে জেলা প্রশাসনকে হেল্পলাইন ঘোষণা করতে হয়। সেখানেও তিন ব্যক্তিকে চড়া দামে নুন বেচার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ধুবুরিতে নুন বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কিলো দরে। গোলোকগঞ্জ পুলিশ তিন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে।
বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ী সংগঠন চটজলদি বৈঠকে বসে। চেম্বার অফ কমার্স ও বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে ঘোষণা করা হয়, জেলাগুলিতে ছ’মাস থেকে এক বছরের নুন মজুত রয়েছে। রাজ্য বা দেশে কোনও নুনের সংকট নেই। কাছার, করিমগঞ্জ, কোকরাঝাড় গুয়াহাটি, বরপেটা প্রশাসন রাস্তায় মাইক নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধে প্রচারে নামে। করিমগঞ্জের জেলাশাসক সঞ্জীব গোঁহাইবরুয়া জানান, জেলায় এক বছরের লবণ মজুত রয়েছে। গুজব মোকাবিলায় তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির সঙ্গেও বৈঠক করেন। কাছাড়ের সরবরাহ বিভাগের তরফে জানানো হয়, গত কালই জেলায় ৫০ হাজার প্যাকেট লবণ এসেছে।
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, “এক শ্রেণির ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য গুজব ছড়িয়ে চলেছে। জনগণকে ভুল বোঝাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ করার চক্রান্ত চলছে। লবণের বেআইনি সঞ্চয় ও কালোবাজারির বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।” খাদ্য ও গণবন্টন মন্ত্রী নজরুল ইসলাম জনগণকে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন,“লবণের কোনও সংকট নেই। সব গুজব। কোথাও কোনও ব্যবসায়ী নুনের দাম বেশি নিলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দিন। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।” রাজ্যের খাদ্য ও গণবন্টন দফতরের প্রধান সচিব এস এল মেওয়ারা জানান, “রাজ্যে ৬,৭৯,৫৩৬ ব্যাগ নুন রয়েছে। কোনও দোকানদার প্যাকেটে লেখা সর্বাধিক বিক্রয় মূল্যের বেশি দামে নুন বেচলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেঘালয়ে লবণ-সংকট সংক্রান্ত গুজব ঠেকাতে সকাল থেকে রাস্তায় প্রচার চালিয়েছে প্রশাসন। সেখানে সংকট বড় আকার নেয়নি। তবে মণিপুরে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। সেখানে বহু জায়গায় ৫০ থেকে ২০০ টাকা কিলো দরে লবণ বিক্রি হয়েছে। সকাল থেকে মুদি দোকানের সামনে ছিল লাইন। পুলিশ মাইক নিয়ে প্রচার চালাতে থাকে। রাজ্যের খাদ্য ও গণবন্টনমন্ত্রী এম ওকেন্দ্র সিংহ ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি ও দফতরের কর্তাদের জরুরি বৈঠক করেন। তিনি জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করে ঘোষণা করেন, রাজ্যে লবণের পর্যাপ্ত সঞ্চয় মজুত রয়েছে।
মিজোরামেও লবণ-সংকটের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনের তরফে আইজলের চাঁদমারি, খাটলা, তুইখুয়াতলাং-সহ বিভিন্ন বাজারে নজরদারি ও মাইকে প্রচার চালানো হয়। আজ সকালে ১৬ টাকার প্যাকেট বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। শিলচরের বাজারে লবণের ‘আকাল’ হওয়ায় মিজোরামের ব্যবসায়ীরা চড়া দামে সেখানেও লবণ পাঠান। পরিস্থিতি সামলাতে কোলাশিব ও শিলচরের সীমানায় পুলিশের বিশেষ চেকিং শুরু হয়েছে। নাগাল্যান্ডে গত কাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি গুজবের জেরে ১৫০ টাকায় নুনের প্যাকেট বিক্রি হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে ডিমাপুরের বাজারে খুচরো দোকানে লবণ শেষ হয়ে যায়। অনেকে লবণ আনতে অসমেও চলে আসেন। আজ সকাল থেকে প্রশাসন মাইকে প্রচার চালিয়েছে। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন অনেকটা আয়ত্বে। অরুণাচল প্রদেশে প্রতি কেজি লবণ গড়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে বাজারগুলিতে অভিযান চালায়। পরে পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.