গ্রাহক সেজে ব্যাঙ্কে ঢুকে ম্যানেজার-সহ কর্মী ও গ্রাহকদের মারধরের পর সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা লুঠ করে পালানোর সময় ধরা পড়ে গেল ৭ দুষ্কৃতী। মালদহের রতুয়ার দেবীপুরে বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ঘটনাটি ঘটে। ব্যাঙ্কে নির্বিঘ্নে লুঠপাট সেরে পালালেও মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করে পুলিশ। বাইকে আসা ওই দুষ্কৃতী দলটি পুলিশ ও গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে রতুয়া থেকে ২০ কিমি দূরে বিহার সীমানা ঘেঁষা হরিশ্চন্দ্রপুরে সহরাবহরায় ঢুকে পড়ে।
সেই সময় পুলিশ ও গ্রামবাসীদের লক্ষ করে যথেচ্ছ বোমা-গুলি দুষ্কৃতীরা ছোড়ে বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, শেষে এলাকার একটি দোকানে ঢুকেও পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ছুড়তে থাকে দলটি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। চার দিক থেকে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ, গ্রামবাসীরা। ধরা পড়ে ৭ জন। ধৃতদের কাছ থেকে দুই লক্ষ ২৬ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন ও তিনটি বাইক উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে দুই জন পালিয়ে যায়। তাদের কাছেই বাকি টাকা রয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পালানোর সময় সময় তাড়া করে ৭ দুষ্কৃতীকে ধরা হয়।”
পুলিশ ও ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, ব্যাঙ্কের ওই শাখায় কোনও নিরাপত্তা রক্ষী নেই। ম্যানেজার-সহ ৫ জন কর্মী রয়েছেন। ভরদুপুর হওয়ায় রাস্তায় বিশেষ লোকজন ছিলেন না। ব্যাঙ্কে ভিতরে ছিলেন জনা দশেক গ্রাহক। তাঁদের মধ্যেই গ্রাহক সেজে ছিলেন ৩ দুষ্কৃতী। আড়াইটা নাগাদ ম্যানেজার টিফিন করতে উঠে দাঁড়াতেই তাঁর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে এক দুষ্কৃতী। সঙ্গে সঙ্গে হেলমেট পড়ে আরও ৩ দুষ্কৃতী ব্যাঙ্কে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে চিৎকার না করার হুমকি দেয়। আতঙ্ক ছড়াতে ব্যাঙ্ক কর্মী, গ্রাহকদেরও মারধর শুরু করে দুষ্কৃতীরা। ম্যানেজারের কাছ থেকে ভল্ট ও ক্যাশবাক্সের চাবি নিয়ে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। তারপর ম্যানেজারের গলার সোনার হার-সহ কর্মীদের মোবাইল ও পকেট থেকে টাকাও ছিনিয়ে নিয়ে বাইকে চেপে পালায় দুষ্কৃতী দলটি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তিনটি বাইকে ৯ জন দুষ্কৃতী এসেছিল। ৬ জন ভিতরে ঢুকলেও বাইরে পাহারায় ছিল ৩ জন। সেই সময় ব্যাঙ্কে পেনশনের টাকা তুলতে এসেছিলেন লক্ষ্মীনারায়ণ সিংহ। তাঁর মোবাইল কেড়ে তাঁকে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। তিনি বলেন, “মাথায় বন্দুক ধরে চুপ করে থাকতে বলা হয়। ডাকাতির পর ফুলহার বাঁধের রাস্তা ধরে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।” ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বরুণ শাহি বলেন, “মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে ভল্টের চাবি চায়। দিতে রাজি না হওয়ায় মারধর শুরু করে। বাধ্য হয়ে চাবি দিয়ে দিই।” ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার সঞ্জয় রায় বলেন, “ভাড়া বাড়িতে ব্যাঙ্কের ওই শাখা রয়েছে। ছোট শাখা। এই ধরনের শাখায় নিরাপত্তারক্ষী রাখার ব্যবস্থা নেই।” সন্ধ্যায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহকে নিয়ে ব্যাঙ্কে যান মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি সিএস লেপচা। ডিআইজি বলেন, “ডাকাতি করতে গিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুরে ৭ জন ধরা পড়েছে। দলটি বিহার থেকে এসেছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।” |