বাগডোগরা বিমানবন্দরের প্রিপেড ট্যাক্সি বুথকে ঘিরে বিতর্কের পর বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ফাঁড়িটিও সরিয়ে নিতে চায় শিলিগুড়ি পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কমিশনারেটের অন্য অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তাতে আপাতত ঠিক হয়েছে, বিমানবন্দর চত্বরের মধ্যে পুলিশ ফাঁড়িটি চালু রাখার জন্য এয়ারপোর্ট অথারিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই) কর্তৃপক্ষ কোনও লিখিত সম্মতি না দিলে ফাঁড়ি দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে বিমানবন্দর ফাঁড়িটিকে তুলে নিয়ে বাগডোগরা থানা চত্বরের মধ্যে চালু করা হবে।
পুলিশ কমিশনার এদিন বলেন, “বিমানবন্দরের প্রিপেড বুথটিকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। এখন তা মিটে গিয়েছে। আমি কলকাতা হাইকোর্টের গিয়ে সব কিছু জানিয়েছি। আদালতের নির্দেশ মেনে আমরা বুথটি ছেড়ে দিয়েছি। একইভাবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে এএআই কর্তৃপক্ষ লিখিত সম্মতিপত্র না দিলে বিমানবন্দরের পুলিশ ফাঁড়িটিও সরিয়ে নেওয়া হবে।” পুলিশ কমিশনার জানান, প্রিপেড ট্যাক্সি বুথটি চালানোর জন্য রাজ্য সরকারের নির্দেশ পেয়ে আমরা এএআই কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। ওঁরা মৌখিকভাবে আমাদের বুথটি চালাতে বলে। কিন্তু লিখিত না দেওয়ায় সমস্যা বাড়ে। তবে যাই হোক, এমন ঘটনা যাতে আর না হয় তাই ফাঁড়িটিকেও সরিয়ে বাগডোগরা থানায় নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কল্যাণ কিশোর ভৌমিক বলেন, “সমস্ত আইন মেনে প্রিপেড ট্যাক্সি বুথটি যিনি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশও জায়গা খালি করে দিয়েছে। আর পুলিশ ফাঁড়ি বা থানা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। ওটা পুলিশের নিজস্ব বিষয়।” উল্লেখ্য, বিমানবন্দরের প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ সংক্রান্ত নির্দেশ অবমাননার অভিযোগে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারকে গত মঙ্গলবার সশরীরে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুধু হাজিরা নয়, পুলিশ কমিশনারকে কেন গ্রেফতার করা হবে না তাও জানতে চায় আদালত। ওই দিন মামলাটি আদালতে ওঠেনি। বুধবার হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। সেখানে পুলিশের তরফে বুথটি খালি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যিনি বুথটি চালানোর বরাত পান, সেই বাগডোগরার বাসিন্দা পঙ্কজ ঘোষকে বুথের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয় এএআই কর্তৃপক্ষ। পঙ্কজবাবুই বুথের দায়িত্ব না পেলে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। এদিন তিনি বলেন, “সমস্যা মিটে গিয়েছে। আমরা বুথের দায়িত্ব পেয়েছি। জনস্বার্থে গত ১০ বছর ধরে যেভাবে বুথটি চালাচ্ছিলাম, সেইভাবেই চালাব।”
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দেশের সমস্ত বিমানবন্দরে প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ পরিচালানোর দায়িত্ব টেন্ডারের মাধ্যমে কোনও সংস্থার হাতে তুলে দেয় এএআই। বাগডোগরা বিমানবন্দরের ক্ষেত্রেও তা হয়েছিল। পঙ্কজবাবু বুথটি চালানোর দায়িত্ব পান। কিন্তু গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকার নির্দেশিকা জারি করে বিমানবন্দর এবং এনজেপিতে নতুন করে বুথ পুলিশ চালাবে বলে জানিয়ে দেয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যান পঙ্কজবাবু। তারমধ্যেই পুলিশ বুথটির জোর করে দখল নেয় বলে অভিযোগ। তার পরেই সমস্যার সূত্রপাত।
এ দিকে বিমানবন্দর থেকে ফাঁড়ি সরিয়ে নিলে সেখান আইন শৃঙ্খলা দ্রুত রক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা বাড়তে পারে বলে পুলিশের একটি অংশ মনে করছে। তাঁরা জানান, বিমানবন্দরেরর বাইরে গোলমাল লেগেই থাকে। বেশি গাড়ি ভাড়া, যাত্রীদের হেনস্থা-সহ নানা অভিযোগ আসে। বিমানবন্দরের মধ্যেই ফাঁড়ি বা থানা থাকলে সমস্যা দ্রুত মেটানো সম্ভব হয়। আর বাগডোগরা থানা থেকে বিমানবন্দরের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। তাতে খবর পেয়ে পুলিশ কর্মীদের আসতে কিছুটা সময় লাগে। পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমরা কোনও বিতর্ক চাই না বলেই ফাঁড়িটি সরিয়ে নিতে চাই।” |