জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে উত্তরবঙ্গে সচিবালয় উদ্বোধন করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই জন্যই শিলিগুড়ির ফুলবাড়ির ওই নির্মীয়মাণ মিনি মহাকরণের চত্বর থেকে ২৪টি দখলদার পরিবারকে পুনর্বাসনের শর্তে সরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছিল প্রশাসন। তাঁদের নতুন জায়গা চিহ্নিত করে ঘর তৈরির জন্য সরকারি তরফে কিছু টাকাও দেওয়া হয়। কিন্তু ফুলবাড়ি থেকে দশ কিলোমিটার দূরে শালুগাড়ায় যেখানে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে, সেখানকার অধিবাসীরা আপত্তি তোলায়, বৃহস্পতিবার প্রথম দিনেই হোঁচট খেল প্রশাসনের উদ্যোগ। ওই পরিবারগুলির কয়েকটিকে নতুন ঠিকানায় নিয়ে গিয়ে সেখানে তাঁদের বসবাসের ব্যবস্থা করা গেল না।
এদিন সকালে কিছু পরিবার সরকারের দেওয়া পাট্টা নিয়ে কামরাঙ্গাগুড়ির পাট চুকিয়ে বিকাশ নগরে নতুন জায়গায় হাজির হন নিজের এলাকার দখল নিতে। খতিয়ান অনুযায়ী জায়গা খুঁজে খুঁটি পুঁততে গিয়েই দেখা দেয় বিপত্তি। এলাকার প্রায় তিনশো লোক এসে তাঁদের বাধা দেয়। ডাবগ্রাম ১ পঞ্চায়েতের প্রধান বীণা সুব্বা বলেন, “এলাকার খেলার মাঠ দখল করে কাউকে বসতে দেওয়া হবে না। তা ছাড়া আমাদের সঙ্গে সরকার কোনও আলোচনা করেনি। বাইরে থেকে কারা এসে এলাকায় ঢুকছে আমার জানি না। আমরা এর প্রতিরোধ করব।” এলাকার এক বাসিন্দা বিশাল বর্মন বলেন, “আমরা ২৫ বছর ধরে এলাকায় রয়েছি। আমরা এখনও পাট্টা পাইনি। নতুন কেউ এলাকায় এসে পাট্টা নিয়ে জমি পাবে, এটা আমরা মেনে নেব না।” |
শালুগাড়ার বিকাশনগরে ভূমিহারারা জমি নিতে গেলে বিক্ষোভ
দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
সিপিএম জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার অভিযোগ করেন, বিকাশনগরের বাসিন্দাদের হঠাতে সে সময় পুলিশ লাঠিও চালিয়েছে। পুরো বিষয়টিকে তুঘলকি সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তিনি। জীবেশবাবুর দাবি, “খেলার মাঠ দখল করে কাউকে দখল দেওয়া নিন্দনীয়। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল।
যদিও সিপিএমের মদতেই এই সমস্যা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। গৌতমবাবু অবশ্য.সরকারি কাজে বাধা দিলে তা বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছেন। গৌতমবাবু এ দিন বলেন, “কেউ যদি সরকারি কাজে বাধা দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ভাবে এর মোকাবিলা করব। সিপিএম পঞ্চায়েত প্রধান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে উত্তেজনায় মদত দিয়েছে। ওটি কোনও খেলার মাঠ নয়। ওটি পতিত জমি। তা নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।” তবে শুক্রবার বিকাশ নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এ দিকে লাঠি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেন শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার কে সাভারি রাজকুমার। তিনি বলেন, “পুলিশ সরকারি নির্দেশ পালনে সাহায্য করেছে। লাঠিচার্জের অভিযোগ ঠিক নয়।”
এদিন সকালে প্রথমবার বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পরে ফিরে যান কামরাঙ্গাগুড়ির বাসিন্দারা। পরে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের আশ্বাসে ফের আর একবার বিকেলের দিকে ঢোকার চেষ্টা করে ফের ব্যর্থ হন তাঁরা। এরপরে ফিরে গিয়ে কামরাঙ্গাগুড়িতে পুরোনো জায়গায় ভাঙা বাড়ির স্তুপের উপরেই জিনিসপত্র নিয়ে বসে থাকেন তাঁরা। এক ভুক্তভোগী দুলাল পাল বলেন, “আমরা এখন কি করব, কোথায় যাব কিছুই বুঝতে পারছি না। রাতে জেগেই কাটাতে হবে।” |