|
|
|
|
কর্তা-কর্মী কম, মানবাধিকার কমিশনে সঙ্কট
অশোক সেনগুপ্ত • কলকাতা |
চেতনতা বাড়ছে। অধিকার লঙ্ঘিত হলে প্রতিকারের আশায় অনেকেই এখন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তাই কমিশনে আবেদনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু দ্রুত ফয়সালার বদলে জমে যাচ্ছে আবেদনের স্তূপ। কর্তা থেকে কর্মী কমিশনের সর্বস্তরে লোকাভাবই যথাসময়ে সুবিচারের পথে বড় বাধা। এতটাই যে, বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে আবেদনের শুনানি।
অবস্থা এত খারাপ হল কেন?
কমিশন সূত্রের খবর, কর্মীর অভাব দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কর্তার অভাবও। কমিশনের কর্তা বলতে চার জন। চেয়ারম্যান, সদস্য-সচিব এবং অন্য দুই সদস্য। চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের অবসরের বয়ঃসীমা ৭০ বছর। চলতি মাসে অবসর নিয়েছেন দুই সদস্য নারায়ণচন্দ্র শীল ও সৌরীন রায়। আর সদস্য-সচিব জে সুন্দরশেখর স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন এ মাসেই। ফলে চেয়ারম্যান এখন কার্যত একা কুম্ভ। শুনানি চালাতে হলে চেয়ারম্যান ছাড়াও বেঞ্চে অন্তত অন্য এক সদস্যের উপস্থিতি আবশ্যিক। কিন্তু কমিশন-প্রধান অশোক গঙ্গোপাধ্যায় একা পড়ে যাওয়ায় আপাতত শুনানি সম্ভব হচ্ছে না।
আর শুনানি না-হলে কোনও আবেদন সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না কমিশন।
কর্তা-সঙ্কটের সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হয়েছে কর্মীর অভাবও। আবেদন প্রাথমিক ভাবে খতিয়ে দেখা, সেগুলির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ঠিকঠাক নথিভুক্ত করা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজ চালানোর লোক নেই যথেষ্ট সংখ্যায়। কমিশনের নিজস্ব কর্মী মাত্র ৪৭ জন। আছেন ১১ জন উচ্চপদস্থ অফিসার। কোষাধ্যক্ষ এবং সহকারী স্তরের পদে আছেন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে ডেপুটেশনে পাঠানো ন’জন। কমিশন বলছে, যে-হারে আবেদন আসছে, তাতে অবিলম্বে কর্মী-সংখ্যা দ্বিগুণ না-করলেই নয়। কর্মী চাওয়া হয়েছে সরকারের কাছে। কবে ক’জন নতুন কর্মী পাওয়া যাবে, সবই অনিশ্চিত।
আবেদনের হার কতটা বেড়েছে?
২০১১-’১২ আর্থিক বছরে কমিশনের কাছে যত আর্জি এসেছে, ’১২-’১৩ অর্থবর্ষে এসেছে তার চেয়েও ৫০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবর্ষে সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে কমিশনের অনুমান। তাদের প্রশ্ন, এত কাজ সামলাবে কারা? কমিশনের রেজিস্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্ত বলেন, ‘‘কোন কোন অভিযোগপত্র গ্রহণযোগ্য, খতিয়ে দেখে সেগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য আছেন মাত্র চার জন কর্মী। ঝাড়াইবাছাইয়ের পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে তৈরি হয় অর্ডার শিট। সেই কাজ এবং আইনি কাজ সামলানোর লোক খুব কম। কম্পিউটারে কাজ করার মতো দক্ষ লোকেরও অভাব।” কমিশন সূত্রের খবর, এর ফলে ফাইলবন্দি অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান অশোকবাবু বলেন, “এত দিন মাসে গড়ে ২০ দিন বৈঠক বসত। সদস্য ও সচিব না-থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। এ-সব পদের সংখ্যা বা পরিস্থিতি সরকার জানে। রোজকার সাধারণ কাজের জন্যও আরও লোক দরকার। আপাতত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে কমিশনে ছুটি কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।” অশোকবাবু জানান, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে ছুটির তালিকা কলকাতা হাইকোর্টের মতোই। কাজের দিন সর্বাধিক ২১০টি। তবে কর্মীদের অনেকেই কাজের প্রয়োজনে অনেক ছুটির দিনেও আসেন। কী ভাবে কর্মদিবস বাড়ানো যায়, কমিশনের বেঞ্চে আলোচনা করে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কমিশনে কর্তা ও কর্মীর অভাব মেটাতে রাজ্য সরকার কী ভাবছে?
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “কমিশনের সদস্য হিসেবে রাজ্য পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে মনোনীত করা হয়েছে। এই ধরনের মনোনয়নের ব্যাপারে কিছু পদ্ধতি মানতে হয়। সেগুলো খতিয়ে
দেখা হচ্ছে।”
|
আর্জি পাহাড় |
|
’১১-’১২ |
’১২-’১৩ |
নয়া আবেদন |
৫৪৫৬ |
৯৪১৫ |
বকেয়া |
১৩২৬ |
৮২২ |
মোট |
৬৭৮২ |
১০,২৩৭ |
খারিজ |
৪০২৬ |
৫৬১২ |
সুপারিশ |
১৯২৩ |
২৯২০ |
তদন্ত চলছে |
৮২২ |
১৬৭৩ |
|
|
|
|
|
|