|
|
|
|
দেনা থেকে বাঁচতে কমিশনকে আর্জি রাজ্যের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিপুল দেনার দায়ে ঝুঁকে পড়া রাজ্য এ বার সরাসরি দরবার করল অর্থ কমিশনের কাছে। বৃহস্পতিবার নিউ টাউনের হিডকো ভবনে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দই শুধু চাইলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তুললেন ঋণ মকুবের বিষয়টিও। কমিশনকে রাজ্যের তরফে স্পষ্ট বলা হয়, ঋণ শোধের বিষয়টি পুনর্বিন্যাস করা না হলে এই ফাঁদ থেকে বেরোতে পারবে না রাজ্য। ফলে আটকে যাবে উন্নয়নের কাজও।
আর কিছু দিনের মধ্যে লোকসভা ভোট। তার আগে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের আর্থ-সামাজিক এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কেন ২ লক্ষ ৫৫ হাজার কোটি টাকা অনুদান চাইল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশ কিছু দিন ধরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন মমতা। ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই সেই সুর চড়াচ্ছেন তিনি। এই বৈঠকটিকেও তিনি সেই কাজে লাগাতে চেয়েছেন। |
|
অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান ওয়াই ভি রেড্ডি এবং সঙ্গী আরও চার সদস্যের সামনে মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং অর্থ দফতরের কর্তারা দেখাতে চেয়েছেন, রাজ্যের রাজস্ব আদায় বাড়ানো সত্ত্বেও বাম জমানার বিপুল ঋণের চাপে উন্নয়নের কাজ কী ভাবে আটকে যাচ্ছে। সে জন্য এ দিন আরও এক বার তিন বছরের মরেটোরিয়াম বা ঋণ মকুবের কথা তুলেছেন তাঁরা। এই ঋণের চাপেই যে উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে, তা-ও কমিশনকে স্পষ্ট করে দেন মমতা। বৈঠক শেষে অমিতবাবু জানান, “অর্থ কমিশনের কাছে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের জমানায় রাজস্ব আদায় ২১ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে এ বছর ৪০ হাজার কোটিতে পৌঁছবে। কিন্তু রাজ্যের ঘাড়ে যে ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা রয়েছে, সে জন্য বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা চলে যাবে সুদ-আসল বাবদ।” তাঁর প্রশ্ন, “আমাদের তরফ থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য যা করার করেছি, কিন্তু কেন্দ্র বিপুল টাকা কেটে নিলে রইলটা কী? মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এ কথা বলেছেন কমিশনকে।”
প্রশ্ন হল, কেন্দ্র-বিরোধী রাজনীতির মঞ্চ হিসেবে অর্থ কমিশনের বৈঠককে কেন কাজে লাগালো রাজ্য? কেনই বা অর্থ কমিশনকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন মমতা? অমিতবাবু বলেছেন, “অর্থ কমিশন হল একটি সাংবিধানিক সংস্থা। স্বাধীনতার পর বি আর অম্বেডকর যখন সংবিধান রচনা করেন, তখনই অর্থ কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছিল। যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আর্থিক সম্পর্কের বিন্যাস কী হবে, তার সমাধানের দায়িত্ব কমিশনকেই দেওয়া হয়েছিল।” সেই দায়িত্ব মেনে অনুদান, ভর্তুকি এবং কেন্দ্রীয় করের ভাগ নিয়ে অর্থ কমিশন যে সূত্র তৈরি করে দেয়, মোটামুটি ভাবে সেটাই মেনে নেয় কেন্দ্র। তার ছাপ পঞ্চবার্ষিকী যোজনাতেও পড়ে। তাই মনে করা হচ্ছে, এ দিন অর্থ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক থেকে (ভুলবশত বৃহস্পতিবারের আনন্দবাজারে শিরোনামে এটিকেই যোজনা-বৈঠক বলা হয়েছে, যে ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত) যদি ইতিবাচক কিছু উঠে আসে, তা যোজনা কমিশনকেও মেনে নিতে হতে পারে। সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কেন্দ্র আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, চর্তুদশ অর্থ কমিশন যদি পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে বিশেষ কিছু সুপারিশ করে, তা মেনে তারা আলাদা প্যাকেজ দিতে পারে।
রাজ্যের অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করার দায়িত্ব দেন অর্থ কমিশনকে। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও পঞ্জাব সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রস্ত রাজ্য। তাই তাদের বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হোক। অর্থ কমিশনের সুপারিশ খতিয়ে দেখতে অর্থ মন্ত্রকের তৎকালীন ব্যয়-বরাদ্দ সচিব সুমিত বসুর নেতৃত্বে একটি কমিঠি গঠন করেন প্রণববাবু। কমিটি যখন রিপোর্ট পেশ করে, ততদিনে প্রণববাবুর জায়গায় এসেছেন পি চিদম্বরম। তিনি বসু কমিটির রিপোর্টকে কার্যত উপেক্ষা করে রঘুরাম রাজন কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করেন। এতে বেঁকে বসে তৃণমূল। তারা চিদম্বরমের কাছে প্রতিবাদ জানায়। এই প্রেক্ষাপটেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে নতুন করে শান দিতে অর্থ কমিশনের বৈঠককে বেছে নিয়েছে রাজ্য।
এ দিনের বৈঠকের পরে অর্থ কমিশনের বক্তব্য কী? অমিতবাবু বলেন, “কমিশন মেনে নিয়েছে, দেশের মধ্যে এমন কোনও রাজ্য নেই, যাদের ঘাড়ে দু’লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে কমিশন একমত।” রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির কথা জেনে তার প্রশংসাও করেছেন রেড্ডিরা। আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়ে রাজ্য যে ‘প্রেজেন্টেশন’ দিয়েছে, তাতেও সন্তোষ প্রকাশ করেন কমিশনের চেয়ারম্যান। পরে মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে কমিশনের সদস্যরা বলেন, তিনি জোরের সঙ্গে তাঁর দাবির কথা জানিয়েছেন। অমিতবাবুর বক্তব্য, “রেড্ডি নিজেও বলেন, এমন উৎসাহী বৈঠক তাঁরা খুব কম দেখেছেন।”
রাজ্য অর্থ দফতর সূত্রের খবর, আগামী বছর অক্টোবরের মধ্যে অর্থ কমিশন সব রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি এবং দাবি সম্পর্কিত রিপোর্টটি পেশ করবে। তার ভিত্তিতে শুরু হবে পরবর্তী পঞ্চবার্ষিকী যোজনার কাজ। তখনই ঠিক হবে, কেন্দ্রীয় কর থেকে রাজ্যগুলির প্রাপ্য এবং রাজ্যগুলির জন্য কেন্দ্রীয় অনুদান ও ভর্তুকির পরিমাণ কত হবে।
|
পাঁচ দাবি
• পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১ লক্ষ কোটি
• ৪১টি দফতরের জন্য ১ লক্ষ ৫৫ হাজার কোটি
• ১৪,৩৩৮ কোটি কেন্দ্রীয় ঋণ মকুব
• ঋণ শোধের মেয়াদ ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫-২০ বছর
• রাজ্যগুলিকে দেওয়া কেন্দ্রীয় করের অংশ ৩২% বাড়িয়ে ৫৪% |
|
পুরনো খবর: যোজনা-বৈঠকে আজ ঋণমুক্তি চাইবেন মমতা |
|
|
|
|
|