যোজনা-বৈঠকে আজ ঋণমুক্তি চাইবেন মমতা
দেনার দায় থেকে রাজ্যকে উদ্ধার করার দাবি নিয়ে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের মুখোমুখি হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, বৃহস্পতিবার কমিশনের চেয়ারম্যান রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গর্ভনর ওয়াই ভি রেড্ডি-সহ পাঁচ সদস্যের সঙ্গে রাজ্যের প্রতিনিধিদের বৈঠক বসছেন নিউ টাউনের হিডকো ভবনে। বামফ্রন্ট জমানার যে বিপুল ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছেন, সেই প্রসঙ্গ তুলেই এ বারে অর্থ কমিশনের কাছে স্থায়ী সুরাহার দাবি জানাবে রাজ্য প্রশাসন।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই ঋণের প্রসঙ্গ তুলে বারবার বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়ে এসেছেন মমতা। এমনকী, কেন্দ্রীয় ঋণ এবং তার সুদ মেটানোর উপর তিন বছরের স্থগিতাদেশও (মোরাটোরিয়াম) চেয়েছিল তাঁর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র নিজেই অন্তত ১০-১২ বার কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকে দরবার করেছেন। কিন্তু রাজ্য কিছুই আদায় করতে পারেনি।
প্রথম থেকেই কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কোনও ভাবেই একটি রাজ্যকে বিশেষ কিছু দেওয়া সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়া এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার এককালীন অনুদান মঞ্জুর করেছিলেন। যদিও তাতে সমস্যা বিশেষ মেটেনি বলেই রাজ্যের বক্তব্য।
অর্থ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, তখন কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, চতুদর্শ অর্থ কমিশন যদি পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে বিশেষ কিছু সুপারিশ করে, তা মেনে কেন্দ্র আলাদা প্যাকেজ দিতে পারে। সেই চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সঙ্গে আজ বৈঠক। যোজনা কমিশনে ওয়াই ভি রেড্ডি ছাড়াও রয়েছেন সুষমা নাথ, এম গোবিন্দ রাও, অভিজিৎ সেন এবং সুদীপ্ত মুন্ডলে। প্রাক্তন ব্যয়সচিব সুষমা নাথের কাছে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক হাল অজানা নয়। এক সময় তিনিই রাজ্যকে আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর রোড ম্যাপ তৈরি করে জমা দিতে বলেছিলেন। যোজনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে অভিজিৎ সেনেরও এ রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নখদর্পণে। তাই আজকের বৈঠকে রাজ্যের পক্ষে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও অনুকূল বলে মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ। তাঁরা মনে করছেন, নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ের এটা যথেষ্ট ভাল সুযোগ। অর্থ দফতরের আশা, আজ কমিশনের সামনে যে দাবিদাওয়া জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী, তা মেনে নেবে কমিশন।
অর্থ দফতর সূত্রের বক্তব্য, আগামী বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে চতুর্দশ অর্থ কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দেবে। কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে পরবর্তী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কাজ শুরু করবে। তাতে কেন্দ্রীয় করের থেকে রাজ্যগুলির প্রাপ্য করের পরিমাণ যেমন ঠিক হবে, তেমনই রাজ্যগুলির জন্য কেন্দ্রীয় অনুদান, ভর্তুকির পরিমাণও ঠিক হবে।
আশার কথা, চতুর্দশ অর্থ কমিশনকে এ বার ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থা নিয়ে বিশেষ ভাবে নজর দিতে বলা হয়েছে। সরকারি পরিষেবা মূলক সংস্থা, যেমন বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি, পুরসভার পানীয় জল, সেচের জল ইত্যাদির মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারেও কমিশন এ বার মতামত দেবে। সরকারি কর্তারা মনে করছেন, বিনা পয়সায় বা ভর্তুকি দিয়ে পরিষেবার বদলে যে সব রাজ্য নির্দিষ্ট মূল্য ধার্য করে বিদ্যুৎ, পানীয় জল, সেচের জল বিক্রির নীতি নেবে, তারা এই সব খাতে বাড়তি অর্থ পাবে।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “আগের অর্থ কমিশন রাজ্যগুলিকে তাদের আর্থিক অবস্থা ফেরাতে (ফিসক্যাল কনসোলিডেশন রোডম্যাপ) পথ নির্দিষ্ট করতে বলেছিল। তারই সূত্র ধরে রাজ্যে রাজ্যে চালু হয়েছিল বাজেট নিয়ন্ত্রণ আইন। আর সেই আইনের মাধ্যমেই রাজ্যগুলি নানা কেন্দ্রীয় অনুদান পেয়েছিল। চতুর্দশ অর্থ কমিশনও আগের কমিশনের এই সুপারিশ ভিত্তি করেই পরবর্তী সুপারিশ করবে। তাতে ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলির কথা বিশেষ ভাবে বলা থাকবে আশা করা যায়।”
আজ কমিশনের কাছে কী দাবি জানাবে রাজ্য?
অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন,“রাজ্যের আর্থিক অবস্থা ফেরানোর ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বাম জমানার ছেড়ে যাওয়া ২ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ। ফলে ঋণজর্জর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।”
অর্থ দফতরের কর্তারা বলেছেন, দ্বাদশ অর্থ কমিশন পঞ্জাবের যাবতীয় ঋণ মকুবের সুপারিশ করেছিল। সেই সুপারিশ মেনে নেয় কেন্দ্র। পঞ্জাবকে এই সুবিধা দেওয়া হলে পশ্চিমবঙ্গকে কেন বঞ্চিত করা হবে? কেন্দ্র তো নিজেই মেনে নিয়েছে ঋণভারে ন্যুব্জ হয়ে গিয়েছে এই রাজ্য।” তিনি বলেন, “তাই কমিশনের কাছে আমাদের মূল দাবি, রাজ্যের ঘাড়ে থাকা ঋণের ভার লাঘব করা।” তিনি জানান, এ ছাড়াও নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মোট ১১টি জেলার জন্য বিশেষ প্যাকেজ চাওয়া হবে। অলাভজনক সরকারি সংস্থাগুলি, পরিবহণ নিগমগুলির সংস্কারের জন্যইও টাকা চাওয়া হবে। কেন্দ্রীয় করের ৫০ শতাংশ টাকা যাতে রাজ্যের ভাঁড়ারে আসে, তোলা হবে সেই দাবিও।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.