ব্যবসায়ীদের থাবা এড়াতে সস্তায় আলুবীজ রেশনেই
রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করায় আলুর দাম আর বাড়েনি বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবারেই দাবি করেছেন। এ বার একেবারে আলু চাষের গোড়া থেকেই সেই নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখে আলুচাষিদের স্বস্তি দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। বুধবার তারা জানিয়ে দিয়েছে, রেশন দোকান থেকে চাষিদের সস্তায় আলুবীজ সরবরাহ করবে সরকারই।
এই প্রক্রিয়া থেকে ব্যবসায়ীদের সরিয়ে রাখার জন্য তৃণমূল সরকার উত্তরপ্রদেশ ও হিমাচলপ্রদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছে, তারা যেন পশ্চিমবঙ্গের আলু ব্যবসায়ীদের কাছে আলুর বীজ বিক্রি না-করে। রাজ্য সরকারই বীজ কিনে নেবে। এতে আখেরে লাভবান হবেন আলুচাষিরা। মূলত ওই দু’টি রাজ্য থেকেই বীজ আনার চেষ্টা চলছে। নবান্ন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে কৃষি বিপণন দফতরের বেশ কয়েক জন অফিসার উত্তরপ্রদেশ ও হিমাচলে গিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের যাতে আলুবীজ দেওয়া না-হয়, সেই অনুরোধ জানিয়ে ওই দুই রাজ্যের কৃষিসচিব ও কৃষি কমিশনারকে চিঠি লিখেছেন কৃষিসচিব সুব্রত বিশ্বাস।
খোলা বাজারে আচমকাই আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজ্য সরকার তার দর বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু সেই দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের একাংশ সন্তুষ্ট নন। তাঁদের বক্তব্য, সরকার যে-দরে বিক্রি করতে বলছে, তার থেকে বেশি দামে তাঁরা আলু কিনেছেন। তাই সরকারি দরে আলু বিক্রি কোনও মতেই সম্ভব নয়। এর ফলে কলকাতা এবং বিভিন্ন জেলার অনেক বাজারে সরকারি দরের চেয়ে বেশি দামেই আলু বিক্রি হচ্ছে। তা সত্ত্বেও অন্য রাজ্যের তুলনায় এ রাজ্যে আলু অনেক কম দামে মিলছে। সরকারের হস্তক্ষেপের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে জানান কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা। দামে লাগাম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই রাশটা একেবারে আলু চাষের গোড়া থেকে হাতে রাখতে চায় রাজ্য।
রাজ্যে প্রচুর আলু চাষ হলেও যথেষ্ট পরিমাণে আলুবীজ তৈরি হয় না। প্রয়োজনীয় আলুবীজের ৮০ শতাংশই আসে ভিন্ রাজ্য থেকে। প্রধানত হিমাচল ও উত্তরপ্রদেশ থেকে ওই আলুবীজ আনা হয়। কিন্তু তা সরাসরি আলুচাষিদের কাছে পৌঁছয় না। আলু ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে বেশি দামে তা কিনতে হয় চাষিদের। কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তা বলেন, “শুধু বীজ বিলি নয়, আলু চাষও নিয়ন্ত্রণ করেন ব্যবসায়ীরা। তাই বহু ক্ষেত্রে উৎপাদন ভাল হলেও চাষিরা তার সুবিধা পান না। এমনকী বাজারে আলুর দামও নিয়ন্ত্রণ করেন ব্যবসায়ীরা।” সেই নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতেই রেশনে সস্তায় চাষিদের আলুবীজ বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলায় বছরে গড়ে সাত লক্ষ মেট্রিক টন আলুবীজ লাগে। নভেম্বরের শেষ থেকেই জমিতে বীজ লাগানো শুরু হয়। ফসল ওঠে জানুয়ারির শেষাশেষি। আলুবীজ লাগানোর দিন এগিয়ে আসছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কৃষি বিপণন দফতরের অফিসারেরা তিন-চারটি দলে ভাগ হয়ে অন্য রাজ্যে রওনা হয়েছেন। নবান্ন সূত্রের খবর, কৃষিসচিব সুব্রতবাবু অবশ্য তার আগেই উত্তরপ্রদেশ ও হিমাচলের কৃষিসচিব এবং কৃষি কমিশনারকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন, বাংলার ব্যবসায়ীদের কাছে যেন আলুবীজ বিক্রি করা না-হয়।
বীজ থেকে ব্যবসায়ীদের মুনাফা লোটা বন্ধ করাই সরকারের উদ্দেশ্য। কৃষি বিপণন দফতরের অফিসারেরা জানান, বাংলার আলু ব্যবসায়ীরা ওই দুই রাজ্যের বীজ নিগম থেকে আলুর বীজ কিনে রাখেন। তার পরে চাষ শুরুর আগে সেই বীজই তাঁরা চাষির কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন। বহু চাষি সেই দাম দিতে না-পেরে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই মোটা সুদে ঋণ নেন। এবং তখন থেকেই ওই চাষির খেতের ফসলের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর হাতে চলে যায়। কৃষিকর্তারা মনে করছেন, রেশন দোকানে কম দামে আলুবীজ বিলি করলে চাষিদের আর ব্যবসায়ীদের উপরে নির্ভর করতে হবে না। সরকার স্বল্প দামে বীজ বিলি করলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি দামে তা কিনতে হবে না তাঁদের। ফলে আলুচাষের গোড়া থেকেই তাঁরা অর্থ সাশ্রয় করতে পারবেন। তার প্রভাব পড়বে খোলা বাজারেও।
ভিন্ রাজ্য থেকে আলুর বীজ আনলেও এখনই অন্য রাজ্যে আলু সরবরাহ করতে দেবে না তৃণমূল সরকার। রাজ্যের খোলা বাজারে আলুর দাম ধরে রাখতে আরও কিছু দিন এই সিদ্ধান্তই বলবৎ থাকবে বলে জানান কৃষি বিপণন কর্তারা। আলুর দামের উপরে নজরদারি চালিয়ে যেতে দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী যে-সাব কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন, বুধবার তার প্রথম বৈঠক হয়। সেখানেই ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি রাখার সিদ্ধান্ত হয় বলে নবান্ন সূত্রের খবর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.