স্পিডব্রেকারে বিভীষিকা
ঠাৎ রাস্তার উপর গজিয়ে উঠেছে স্পিডব্রেকার। সেটা টপকে কয়েক মিটার এগোতেই আর একটা। কিছুটা দূরে আবার সেই স্পিডব্রেকার।
সোনামুখী থেকে বিষ্ণুপুর রাস্তায় যত্রতত্র একের পর এক এই ‘স্পিড ব্রেকার’ গাড়ি চালকদের কাছে কার্যত বিভীষিকা হয়ে উঠেছে। যেখানে সেখানে এই ধরনের স্পিড ব্রেকার তৈরি করায় গাড়ি চালাতে যেমন তাঁদের সমস্যা হচ্ছে, তেমনি গাড়ির যন্ত্রাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে ওই বাম্পারের সামনে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ছোট গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটঠে। তা ছাড়া গাড়ির আরোহী ও বাসের যাত্রীরাও গাড়ির ঝাঁকুনিতে কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু না প্রশাসন, না স্থানীয় বাসিন্দা কোনও তরফেই অবাঞ্ছিত স্পিডব্রেকার ভাঙার উদ্যোগ নেই বলে তাঁদের অভিযোগ।
—নিজস্ব চিত্র।
সোনামুখী থেকে বিষ্ণুপুর বাইপাস পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার। রাস্তাটির অবস্থা একপ্রকার ভাল। কিন্তু ওই রাস্তার বুকে ঘনঘন তৈরি করা বাম্পারের ঠেলায় ওই পথ খানাখন্দে ভরা রাস্তার সমান দুর্ভোগে হয়ে উঠেছে। সোনামুখীর কল্যাণপুরের পর থেকেই দেখা যায় ‘স্পিড ব্রেকারের’ ছড়াছড়ি। গাড়ির গতি কমাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশই গা-জোয়ারি করে এই সব ‘স্পিড ব্রেকার’ তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ। আর এই মাত্রা ছাড়া উঁচু ঢিপির জন্য সমস্যায় পড়ছেন গাড়ি চালকেরা। তাঁদের অভিযোগ, অনেক জায়গায় স্পিডব্রেকারের ধাক্কায় ছোট গাড়ির নীচে তেলের ট্যাঙ্কে আঘাত লাগছে। ট্যাঙ্ক ফেটে তেলও পড়ে যাচ্ছে। সোনামুখী থেকে বিষ্ণুপুর রাস্তার মধ্যে কল্যাণপুর, জয়রামপুর, রতনপুর, রাধানগর, কাঁকিল্যা, জয়কৃষ্ণপুর, অবন্তিকা, দ্বারিকা ও বাইপাস মোড়ে একের পর এক ‘স্পিড ব্রেকার’ চোখে পড়ে। কোথাও ছয় ইঞ্চি থেকে এক ফুট, আবার কোথাও তার থেকেও বড়। কোথাও রাস্তার উপর আড়াআড়ি ভাবে বিদ্যুতের ভাঙা ঢালাইয়ের খুঁটি দিয়ে বাম্পার তৈরি করা হয়েছে। আবার কোথাও সরু গাছের গুঁড়ি ফেলে, তার উপর পিচ ও বোল্ডার বিছিয়ে দিয়ে বাম্পার তৈরি করা হয়েছে।
গাড়িচালকদের অভিযোগ, কোনওরকম নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই রাস্তার উপরে একের পর এক ‘স্পিড ব্রেকার’ গায়ের জোরে তৈরি করেছেন এলাকার কিছু বাসিন্দা। এর ফলে আধ ঘন্টার পথ লাগছে এক ঘণ্টা লাগছে। সময় অপচয়ের সঙ্গে তেল খরচ বেশি হচ্ছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙছে হামেশাই। পাত্রসায়রের সোমনাথ দত্ত, গাড়ি ব্যবসায়ী মুকুল কুণ্ডু বলেন, “প্রায় সময় ওই রাস্তায় গাড়িতে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়ছি। এত বড় বড় ‘স্পিড ব্রেকার’ টপকাতে গিয়ে গাড়ির নিচের পাটাতনে ঘষা লাগছে। যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বুক কাঁপে।” বাঁকুড়ার এক ঠিকাদারের আক্ষেপ, “রাস্তা সংস্কারের কাজ করতে গেলেই স্থানীয় কিছু বাসিন্দা একটা করে বাম্পার তৈরির আবদার করেন। ওঁদের দাবি না মানলে কাজ করতে বাধা দেন। তাই বাধ্য হয়ে ওটা করে দিই।”
রাজ্য পূর্ত দফতরের (সড়ক) বাঁকুড়া ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সৌগত সরকার বলেন, “সোনামুখী-বিষ্ণুপুর রাস্তায় দু’টি খালের উপরে সেতুর মুখে ছোট ছোট ‘স্পিড ব্রেকার’ তৈরি করা হয়েছে। দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্যই ওটা করা হয়েছে। তবে রাস্তার বাকি অংশে যে সব ‘স্পিড ব্রেকার’ রয়েছে সে গুলি এলাকার মানুষ তৈরি করেছেন। আমরা তাঁদের এ ব্যাপারে অনুমতি দিইনি।” তা হলে অপ্রয়োজনীয় বাম্পারগুলি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে না কেন? তাঁর দাবি, মাঝে মাঝেই তাঁরা ওই বেআইনি বাম্পার ভেঙে দেন। কিন্তু কিছু দিন পরে এলাকার বাসিন্দারাই ফের ওই জায়গায় নতুন করে বাম্পার তৈরি করে দেন। তিনি বলেন, “এ সব না করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ আমাদের কথায় কান দিচ্ছে না।” বাসিন্দাদের যুক্তি, বসতি এলাকা দিয়েও দ্রুতগতিতে গাড়ি যাতায়াত করে। বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তাই গতিতে লাগাম টানতেই ওই ব্যবস্থা। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “এ নিয়ে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। প্রয়োজনে সবার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.