অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্যা
বাড়ির চত্বরে চোলাই ঠেক, হাঁ এসডিও
যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে ময়াল!
বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার রাধামোহনপুর গ্রামে অবৈধ চোলাই ঠেক ভাঙতে গিয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার বাড়িতেই চোলাই কারখানা আবিষ্কার করলেন তিনি! যে সদস্যা আবার দাবি করলেন, এটা নাকি তাঁদের ‘পারিবারিক ব্যবসা!’
ঝুমাদেবীর বাড়ির লাগোয়া চোলাইয়ের ঠেকে পুলিশ।
গোপন সূত্রে চোলাই বানানোর খবর পেয়ে মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বৃহস্পতিবার কাকভোরে হানা দেন রাধামোহনপুর, বলরামপুর ও রামপুর গ্রামে। সঙ্গে ছিলেন এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) পরাগ ঘোষ। স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে রাধামোহনপুর গ্রামে সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্যা ঝুমা সাহার বাড়িতে চোলাই ঠেকের সন্ধানে যান মহকুমাশাসক। সেখানে গিয়ে দেখেন চোলাই কারবার রীতিমতো জাঁকিয়ে বসেছে বাড়ির লাগোয়া চত্বরে। সেখান থেকে ৪৫ লিটার চোলাই এবং চোলাই তৈরির উপকরণ বাজেয়াপ্ত করেছেন মহকুমাশাসক। পলাশবাবুর কথায়, “ভাবতেই পারছি না, এক জন নির্বাচিত জন-প্রতিনিধি সরাসরি এই বেআইনি কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন! ঝুমাদেবী ও তাঁর শ্বশুর বুধন সাহার বিরুদ্ধে আবগারি দফতরকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ভোর ৪টে নাগাদ বিষ্ণুপুর থেকে তদন্তকারীদল বলরামপুর গ্রামে গিয়ে একটি চোলাইয়ের ঠেক ভাঙা দেয়। সেখান থেকে দলটি যায় রাধামোহনপুর গ্রামে। মহকুমাশাসককে কাছে পেয়ে গ্রামবাসীরা ঝুমাদেবীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ঝুমাদেবীর বাড়িতে ঢোকে তদন্তকারী দল। প্রশাসনের দল বাড়িতে আসছে দেখেই বাড়ি থেকে চম্পট দেন ঝুমাদেবীর শ্বশুর। কিন্তু, বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন ঝুমাদেবী। মহকুমাশাসক পুলিশবাহিনী নিয়ে ওই বাড়িটিতে যান। কাছেই ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায় হাঁড়ি, বাখর, গুড়ের মতো চোলাই তৈরির আবশ্যিক সরঞ্জাম। বাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হয় প্যাকেট-বন্দি চোলাই। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, “বাম আমল থেকেই ঝুমাদেবীর বাড়িতে চোলাই ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। ওই কারবার করে ফুলেফেঁপে উঠেছে গোটা পরিবার। আমরা অনেকবার প্রতিবাদ করেও এই ব্যবসা বন্ধ করতে পারিনি। প্রশাসন এই বাড়িতে অভিযান চালানোয় আমরা খুশি হয়েছি।”
নিজের বাড়ির সামনে ঝুমাদেবী।
আর ঝুমাদেবীর নিজের বক্তব্য, “এটি আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। শ্বশুরমশাই মূলত এই ব্যবসা দেখাশোনা করেন।” জন প্রতিনিধি হয়েও এই বেআইনি কারবার বাড়িতে চলতে দিচ্ছেন কেন, ঝুমাদেবীকে এ প্রশ্ন করেন মহকুমাশাসক। এই প্রশ্নের কোনও জবাব ছিল না ঝুমাদেবীর কাছে। তবে, এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে সিপিএম। দলের সোনামুখী জোনাল কমিটির সম্পাদক শেখর ভট্টাচার্য বলেন, “ওদের বাড়িতে চোলাই ব্যবসা হয় বলে আমাদের জানা ছিল না। এটি বেআইনি কাজ। দোষী সাব্যস্ত হলে উপযুক্ত শাস্তি হোক।” যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা সোনামুখী পুরসভার কাউন্সিলর সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “সিপিএমের প্রশ্রয়েই এত দিন বেআইনি কারবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন ঝুমাদেবী। বানিয়েছেন প্রাসাদোপম বাড়ি। দলীয় নেতৃত্ব সব জেনেও এখন না জানার ভান করছেন।”
ঝুমাদেবী ও তাঁর শ্বশুরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সোনামুখী আবগারি দফতরের ওসি বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়।

ছবি: শুভ্র মিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.