বাঁকুড়ায় ডাকাতি করে গাড়ি নিয়ে পুরুলিয়ার হুড়ায় আসা দুষ্কৃতীদের ধরতে গিয়ে কার্যত নাস্তানাবুদ হল পুলিশ। ডাকাতদের ধাক্কায় গর্তে পড়ে চোট পেলেন হুড়া থানার ওসি। ছিটকে পড়লেন অন্য পুলিশকর্মীরাও। বাঁকুড়ার ছাতনা থেকে ডাকাতদের ধাওয়া করে আসা পুলিশের গাড়ি আবার গর্তে পড়ে উল্টে গেল। তাতেও জখম হলেন কিছু পুলিশকর্মী। শেষে কিছু ট্রাকচালকের সাহায্যে এক দুষ্কৃতীকে ধরে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এমনই ঘটল হুড়া থানার শামুকগড়িয়া সেতুর কাছে, বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জাতীয় সড়কে। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে শামুকগড়িয়া সেতু থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়ার ছাতনা থানার ঝাঁটিপাহাড়িতে লগ্নি সংস্থার অফিসে হানা দিয়েছিল পাঁচ ডাকাত। প্রথমেই তারা অফিসের রক্ষীকে মারধর করে তাঁর বন্দুক কেড়ে নেয়। কর্মীদের কাছ থেকে মোবাইল, টাকা, গয়না কেড়ে নিয়ে তাঁদের বাথরুমের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। সংস্থাটির অভিযোগ, লক্ষাধিক টাকা নিয়ে ডাকাতেরা পালায়। লগ্নি সংস্থার ওই অফিসের ম্যানেজার অনন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাথরুমের দরজা ভেঙে বেরিয়ে থানায় খবর দিই।” খবর যায় আশপাশের থানায়ও। ছাতনার পুলিশ পুরুলিয়ার দিকে গাড়ি ছোটায়। তবে কমলপুরের কাছে গর্তে পড়ে গাড়িটি উল্টোনোয় জখম হন পুলিশকমীরা। এ দিকে, শামুকগড়িয়া সেতুর কাছে রাস্তায় পর পর আলু বোঝাই ট্রাক দাঁড় করিয়ে পরীক্ষা করছিলেন হুড়া থানার পুলিশকর্মীরা। সাদা রঙের গাড়িতে চেপে ডাকাতেরা তাঁদের দিকে আসছে, সে খবর তাঁরাও পান। দেখতে না দেখতে সার দিয়ে দাঁড়ানো ট্রাকের পিছনে এসে পড়ে একটা সাদা গাড়ি। হুড়ার পাঁচ পুলিশকর্মী চ্যালেঞ্জ করতেই আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসে পাঁচ ডাকাত।
পুলিশ সূত্রের খবর, তিন পুলিশকর্মীকে ডাকাতেরা কার্যত ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। হুড়ার ওসি কবিরঞ্জন সিংহ রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে ডান হাতে চোট পান। ঘটনায় হকচকিয়ে যান অন্য দুই পুলিশকর্মী। পুলিশ বনাম দুষ্কৃতীদের মুখোমুখি হতে দেখে শামুকগড়িয়া সেতুর কাছে মোটরবাইক থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন পুরুলিয়ার কাশীপুরের বাসিন্দা এক যুবক। পুলিশকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতেই তিন ডাকাত তাঁর মোটরবাইক কেড়ে নিয়ে পালায় বলে অভিযোগ। দুই দুষ্কৃতী দৌড় লাগায় সেতু লাগোয়া শামুকগড়িয়া গ্রামের দিকে। গণ্ডগোল দেখে সেখানে ততক্ষণে জড়ো হয়েছিলেন আলু বোঝাই ট্রাকের চালকেরা। তাঁরাই পিছু ধাওয়া করেন এক দুষ্কৃতীর। ছোটেন পুলিশকর্মীরাও। দু’পক্ষের যৌথ চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে ঝাড়খণ্ডের সুদামডির বাসিন্দা বনওয়ারিলাল সিংহ। রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে বাকি চার ডাকাতের সন্ধান পায়নি পুলিশ। তবে মোটরবাইকটির খোঁজ মিলেছে।
পাঁচ পুলিশকর্মী এঁটে উঠতে পারলেন না কেন পাঁচ ডাকাতের সঙ্গে? জবাব এড়িয়ে পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “এক জনকে তো ধরা গিয়েছে।” |