শিয়রে পুরভোট। অথচ পুর-পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই কৃষ্ণনগরের মানুষের। অঞ্জনা নদীর দু’পাশেই ইটের রাস্তা আগাছায় ভরা। দীর্ঘ দিন সে রাস্তার কোনও সংস্কার হয়নি। রাস্তার কিছু জায়গা এমনভাবে ভেঙে গিয়েছে যে দিনের বেলাতেও সে পথ দিয়ে হাঁটা রীতিমত কষ্টের। কৃষ্ণনগর পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের এমন বহু বিষয় নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। অঞ্জনার একদিকে রুদ্রনগর অন্য দিকে নগেন্দ্রনগর ফিফথ লেন। ওই দুই রাস্তার মতো বেহাল এলাকার নিকাশি ব্যবস্থাও। রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো নেই। জমা জলের সৌজন্যে বেড়ে চলা মশার দাপটে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। |
নগেন্দ্রনগর ফিফথ লেনের পাশের রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে খুব প্রয়োজন না পড়লে মানুষ সে রাস্তা মাড়ান না। শেষ কবে এই রাস্তার সংস্কার হয়েছে তা মনে করতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারাই। রুদ্রনগরের রাস্তার এতটা বেহাল দশা না হলেও বর্ষাকালে ভয়াবহ চেহারা নেয়। স্থানীয় বাসিন্দা বিথীকা দত্ত বলেন, “বৃষ্টি একটু বেশি হলেই রাস্তায় জল জমে যায়। তখন আর এই রাস্তায় হাঁটার উপায় থাকে না। নিয়মিত রাস্তার পাড় ভেঙে পড়ছে।” ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিংহ ভাগ মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। শ্মশান কালীবাড়ি থেকে রাস্তা দুটি এসে উঠেছে উইমেন্স কলেজের সামনে। সেখান থেকে সহজেই যাওয়া যায় জেলা প্রশাসনিক ভবন এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। ভোট চলে আসায় দিন কয়েক আগে রুদ্রনগরের দিকের রাস্তা সামান্য সংস্কার করা হলেও নগেন্দ্রনগরের দিকের রাস্তার কোনও পরিবর্তন হয়নি। এলাকার বাসিন্দা বিজয় দাস বলেন, “রাস্তা দুটো যে আছে সেটাই যেন গত পাঁচ বছরে কারও মনে ছিল না। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার যে সংস্কার করা উচিত সেটা একবারের জন্যও কারও মনে হল না! অথচ ভোট এগিয়ে আসতেই সবাই এসে রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার কথা বলছেন।”
এলাকার মানুষের দাবি, ভোট এলেই যেন সব দলের এই রাস্তার কথা মনে পড়ে। সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া স্থানীয় কাউন্সিলর শশীগোপাল সরকার বলছেন “ওই রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনা আমার ছিল। কিন্তু রোলার ঢুকবে না বলে রুদ্রনগরের দিকের রাস্তাটায় পিচ ফেলতে পারছি না।” তিনি বলেন, “নগেন্দ্রনগরের দিকের রাস্তাটা জেলা পরিষদের। তবুও আমরা ওই রাস্তাটাও কীভাবে পিচের করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।”
২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএমের প্রার্থী অভিজিৎ রায় বলেন, “ওই রাস্তাটা দেখলেই বোঝা যায় গত বছরগুলিতে এই পুরসভা কী কাজ করেছে। এরকম আরও নজির রয়েছে। আর সেই কারণেই মানুষও বুঝতে পারছেন পুরসভাতে একটা পালাবদলের দরকার।”
কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন “স্থানীয় কাউন্সিলর ওই দুটি রাস্তার ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনও প্রস্তাব পাঠাননি। সেই কারণে ওই রাস্তা এখনও সংস্কার করা হয়নি।”
পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশু রায় রোডের অবস্থাও তথৈবচ। রাস্তার উপরের পিচের আস্তরণ উঠে গিয়েছে অনেকদিন আগেই। এই কঙ্কালসার রাস্তা বেয়েই বৃহস্পতিবার পথসভা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা দিয়েই শক্তিনগর এলাকার বাসিন্দাদের বগুলা রোডে উঠতে হয়। অথচ এই রাস্তার সংস্কারের ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেই পুরসভার। স্থানীয় বাসিন্দা বিজন সাহা বলেন, “শেষ কবে এই রাস্তায় পিচ পড়েছিল তা মনে করতে পারছি না। এই গুরুত্বপূর্ণ সারানোর ব্যাপারে পুরসভার কাছে বারবার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।” এলাকার কাউন্সিলর তৃণমূলের দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুরপ্রধানকে রাস্তা সংস্কারের জন্য বার বার তাগাদা দিয়েও কোনও কাজ হয়নি।” পুরপ্রধান অসীম সাহার পাল্টা দাবি, “আমরা চাইলেও ওই দেবাশিসবাবু ওই রাস্তা করতে দেননি। উনি বলতেন, সাংসদ বা বিধায়ক কোটার টাকায় রাস্তা বানিয়ে নেব।” |