|
|
|
|
ক্ষোভ পাঁশকুড়ায় |
উদ্বোধনের দেড় বছর পরও অচল সিগন্যাল |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
কখনও হলুদ, কখনও সবুজ, কখনও বা টানা লাল। আপন মর্জিতে রং পাল্টাচ্ছে পাঁশকুড়ার পুরাতন বাজারের মোড়ের ‘স্বয়ংক্রিয়’ ট্রাফিক সিগন্যাল। দেখেও দেখে না কেউ। দেখার দরকারও নেই। কারণ দেড় বছর আগে ঘটা করে তার উদ্বোধন হলেও বাস্তবে ‘চালু’ হয়নি স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা। কোনও পথচারীর আঙুলের খোঁচায় সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রে বৈদ্যুতিক সংযোগ হয়েছে মাত্র। এমনটা প্রায়ই হয়। সিগন্যাল ব্যবস্থা নিয়ে এই ছেলেখেলায় ক্ষুব্ধ পাঁশকুড়া পুরসভার বাসিন্দারা। ঠিকাদার কাজ শেষ করতে পারেনি বলে দায় সেরেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। কাজ যদি না-ই হয়েছে, পুরভোটের আগে তড়িঘড়ি উদ্বোধন হয়েছিল কেন? জবাব মেলেনি তার।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদর শহর তমলুক-সহ কাঁথি, মেচেদার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রধান রাস্তাগুলিতে যান-নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রায় বছর দু’য়েক আগে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাঁশকুড়ায় ঠিক হয়, পুরসভার মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক, তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়ক-সহ গুরুত্বপূর্ণ চারটি জায়গায় ওই সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা হবে। কারণ, এই সব ব্যস্ত সড়কে প্রচুর লরি, বাস, ট্যাক্সি-সহ নানা গাড়ি চলাচল করে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও অফিসের সময়ে গাড়ির চাপ আরও বাড়ে। আগের পুরবোর্ড যান-নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হলে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়তে পাঁশকুড়া পুরসভাকে রাজ্যের পরিবহণ দফতর প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। |
|
বাংলো মেড়ে চালু হয়নি সিগন্যাল। নেই ট্রাফিক পুলিশ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
পুরসভা ও ট্রাফিক পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঁশকুড়া শহরের পুরাতন বাজারে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ও তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের সংযোগস্থলে, তমলুক-পাঁশকুড়া সড়কে বিডিও অফিসের কাছে রেলগেটে, স্টেশন রোড সংলগ্ন প্রতাপপুর বাংলো মোড়ে ও প্রতাপপুর ভীমতলা মোড়ে সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর জন্য সড়কের ধারে লাল, সবুজ, হলুদ আলোর ট্র্যাফিক সিগন্যাল খুঁটি বসানো হয়। তৈরি করা হয় অপারেটিং রুম। গত পুর-নির্বাচনের আগে শহরের প্রতাপপুর বাংলো মোড়ে সিগন্যাল ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। পরে পুরসভা নির্বাচনে জিতে ফের ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। কিন্তু পাঁশকুড়ায় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা আর চালু হয়নি।
উদ্বোধনের পরেও সিগন্যাল কাজ না করায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পাঁশকুড়া পুর-এলাকায়। শহরের এক বাসিন্দা বলেন, “আমি মোটর বাইক চালাই। পুরাতন বাজারের কাছে রাস্তা পার হতে খুব সমস্যা হয়। সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু হলে যানজট অবশ্যই কমত। কিন্তু, আমাদের কথা আর কে শুনবে!” অসুবিধার কথা জানিয়েছেন, স্থানীয় দোকানদার থেকে বাসচালক সকলেই। স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, “সিগন্যাল কাজ না করলে এত টাকা খরচ করে তা বসানো হল কেন?
পাঁশকুড়া পুরসভা কর্তৃপক্ষ সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু না হওয়ার জন্য দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাকে। পুরবাসীর সমস্যার কথা স্বীকার করে তৃণমূল পরিচালিত পাঁশকুড়া পুরসভার পুরপ্রধান জাকিউর রহমান খান বলেন, “শহরের চারটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাফিক সিগন্যাল চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। তবে, এখনও কিছু কাজ বাকি আছে।” তাঁর সাফাই, “দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার কাজ সম্পূর্ণ না করায় ওই ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু করা যায়নি। দ্রুত সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর ব্যপারে উদ্যোগী হব।”
কাজে গড়িমসির অভিযোগ মানতে নারাজ সিগন্যাল ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থার কর্তা বিমল দুয়ারি। তাঁর দাবি, “গোটা সিগন্যাল ব্যবস্থা তৈরি হয়ে যাওয়ার পর পাঁশকুড়া শহরের ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে পুরাতন বাজারের কাছে কন্ট্রোল কেবিন লরির ধাক্কায় ভেঙে গিয়েছিল। আর তমলুক রেলগেটের কাছে কেবল লাইনের তার কেটে গিয়েছিল। দু’টিই পরে সংস্কার করা হয়। এতে কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া তমলুক-পাঁশকুড়া রাস্তা সংস্কারের কাজ এখনও সম্পুর্ণ না হওয়ায় রাস্তার দিক নির্দেশের কাজ শেষ করা যায়নি।” তিনি জানান, বাকি কাজ দ্রুত শেষ করে জেলা ট্রাফিক পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তারপর তারাই সিগন্যাল ব্যবস্থার দেখভাল করবেন। |
|
|
|
|
|