|
|
|
|
|
পুরভোটে মেদিনীপুর |
ভোট বৈতরণী পেরোতে
নিয়ম ভাঙছে সব দলই
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
ভোট বড় বালাই। তাই অন্তত প্রচারে নিয়মের বালাই নেই।
সিপিএমের নির্দেশ রয়েছে, নির্বাচনী পোস্টার-ফেস্টুনে কারও ছবি থাকবে না। শুধু থাকবে দলের প্রতীক। তৃণমূলের নির্দেশ রয়েছে, নির্বাচনী পোস্টার-ফেস্টুনে প্রার্থী বা অন্য কোনও নেতার ছবি থাকবে না। শুধু থাকবে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। কিন্তু, কে শোনে কার কথা! সব দলেই যে নিয়ম ভাঙা চলছে! কেমন? শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন নির্মাল্য চক্রবর্তী। তৃণমূল প্রার্থীর নির্বাচনী ফেস্টুনে তাঁর মা প্রয়াত দেবী চক্রবর্তীর ছবি রয়েছে। দেবীদেবী এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। অন্যদিকে, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী পরমা বেহারার নির্বাচনী ফেস্টুনে রয়েছে জ্যোতি বসুর ছবি। নিয়ম ভাঙার এমন আরও কিছু উদাহরণ রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। |
|
নিষেধ উড়িয়ে। ভোট প্রচারে সিপিএমের প্রচারের মুখ জ্যোতি বসু। |
দলের প্রার্থীদের যে নির্বাচনী পোস্টার- ফেস্টুনে শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা মানছেন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি। তাঁর কথায়, “প্রার্থীদের ছবির দরকার নেই। মানুষ দলনেত্রীকে দেখে ভোট দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন- সংগ্রামের জন্যই রাজ্য থেকে বামফ্রন্ট সরকারকে সরানো গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রাজ্যের উন্নয়নে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন। আমাদের জেলার জঙ্গলমহলও এখন শান্ত। কেন? কোনও জাদুর স্পর্ষে এই পরিবেশ ফিরে আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেছেন। তাই অশান্ত জঙ্গলমহল এখন শান্ত হয়েছে।” তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীই সকলের নয়নের মণি। তাই তাঁর ছবিই পোস্টার- ফেস্টুনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” কিন্তু, ২ নম্বর ওয়ার্ডে যে প্রয়াত কাউন্সিলরের ছবিও ফেস্টুনে রয়েছে? দলের চেয়ারম্যান নিরুত্তর। তাঁর ছোট্ট মন্তব্য, “এলাকার মানুষ দেবী চক্রবর্তীকে ভালবাসতেন।” দলীয় সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে জেলা নেতৃত্বের অনুমতি নিয়েই এমন ফেস্টুন তৈরি করেন এলাকার তৃণমূল কর্মীরা। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, “দেবী চক্রবর্তী নামটার সঙ্গে এলাকার মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।” দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার- ফেস্টুনে যে সাধারণত কোনও নেতার ছবি থাকে না, তা মানছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারও। তাঁর কথায়, “আমাদের কাছে ব্যক্তির থেকে দল বড়। পোস্টার- ফেস্টুনে দলের প্রতীক থাকে। কিন্তু, সাধারণত কারও ছবি থাকে না।” কিন্তু, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে যে সিপিএম প্রার্থীর নির্বাচনী ফেস্টুনে জ্যোতি বসুর ছবি রয়েছে? দীপকবাবুর কথায়, “এটা অন্য ব্যাপার। জ্যোতি বসু, সুকুমার সেনগুপ্তদের মতো নেতার ছবি থাকতেই পারে। এখন তো জ্যোতি বসুর জন্ম শতবর্ষ চলছে।” দলীয় সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রেও জেলা নেতৃত্বের অনুমতি নিয়ে এমন ফেস্টুন তৈরি করেন এলাকার সিপিএম কর্মীরা। |
|
তৃণমূলের প্রচারেও দলনেত্রী নন, রয়েছেন প্রার্থী। |
আসলে, ভোট বৈতরণী পেরোতে যেখানে যেমন প্রয়োজন, সেখানে তেমন প্রচার- কৌশল নিচ্ছেন প্রার্থীরা। এ ক্ষেত্রে সিপিএম- তৃণমূল, সব দলই যেন এক পঙ্তিতে। ভোটের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলই প্রচারের জন্য পোস্টার- ফেস্টুন তৈরি করে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোস্টার- ফেস্টুনে ছেয়ে গিয়েছে মেদিনীপুর শহর। কংগ্রেসের পোস্টারে রয়েছে রাজীব গাঁধী, ইন্দিরা গাঁধী থেকে শুরু করে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী, মনমোহন সিংহের ছবি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবে বলছিলেন, “আমাদের দলের একটা ইতিহাস আছে। বর্তমান আছে। ভবিষ্যত আছে। অন্য আর পাঁচটা দলের সঙ্গে কংগ্রেসের তুলনা চলে না। কংগ্রেস নদীর মতো। বয়েই চলে।”
বিজেপির ফেস্টুনেও নরেন্দ্র মোদির মতো নেতার ছবি রয়েছে। সিপিএম অবশ্য নেতাদের ছবি ব্যবহারে এ রাজ্যে বরাবরই রক্ষণশীল। ছবির বদলে প্রচারের জন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করে। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে এ বার প্রচার- কৌশলও বদলাচ্ছে। তাই যেন দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী ফেস্টুনে জ্যোতি বসুর ছবি উঠে আসছে। অবশ্য এই প্রথম নয়, রাজ্যে পালাবদলের পর বিভিন্ন ভাবে নিজেদের বদলাতে শুরু করেছে সিপিএম। এ জেলাতেই গত বছর এমন ৮ লক্ষ লিফলেট বিলি করা হয়েছিল, যেখানে দলের বক্তব্যের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু লেখা রাখা হয়। দলের জেলা নেতৃত্বের সরাসরি আবেদন ছিল, ‘আসুন আমরা বিপদের হাত থেকে নিজেদের ও রাজ্যবাসীকে বাঁচাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণী স্মরণ করে প্রতিবাদ- প্রতিরোধের আরও বড় আন্দোলন গড়ে তুলি। মুহুর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে, যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা- চেয়ে, যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পলাইবে ধেয়ে। এই বাণী স্মরণ করে আন্দোলন গড়ে তুলি।’ সবমিলিয়ে যেন লক্ষ্য যেখানে ভোট বৈতরণী পেরোনো, সেখানে নিয়মের একটু হেরফের হলে, কীই বা এসে গেল!
|
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
|
|
|
|
|