গাড়ি চলছে স্বাভাবিক চেয়েও অনেক কম গতিতে। কিন্তু চারপাশে এতোটাই ধুলো, সামনে বা পিছনে অন্য কোনও গাড়ির অবস্থান বোঝায় দায়। তার উপর যেখানে সেখানে খানাখন্দ। ফলে সাপের মতো একে বেঁকে কোনও রকমে এগিয়ে চলছে গাড়ি। রাস্তা তো নয়, যেন মরণফাঁদ বিছানো হয়েছে। এই বুঝি কিছু একটা ঘটল! গ্রীষ্ণ হোক বা বর্ষা, রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে এখন এটাই রোজকার দৃশ্য। বৃষ্টি পড়লেই রাস্তার খানাখন্দ জলে পরিপূর্ণ। আর রোদ উঠলেই আকাশ ঢেকে যাচ্ছে ধুলোয়। ফলে সাইকেল থেকে মোটর বাইক, বাস, ট্রাক যে কোনও ধরনের গাড়ির এই রাস্তায় চলাচল করাটাই বিপজ্জনক। |
ধুলো উড়ছে জাতীয় সড়কে। —ফাইল চিত্র। |
স্থানীয় সূত্রে খবর, নলহাটি শহরে ঢোকার আগে চামটি বাগান মোড়, নলহাটির তেজহাটি মোড়, দুবরাজপুর শহর ছাড়িয়ে সাতকেন্দুরি মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিমি রাস্তা, এই সব জায়গায় খানাখন্দে ভরা রাস্তায় ধুলো দূষণের জেরে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে নিত্যযাত্রী। এ দিকে, দুবরাজপুর শহর থেকে সিউড়ি পর্যন্ত রাস্তার হালও বেহাল। তার মধ্যে সদাইপুর থানার কচুজোড় পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। সব ক’টা রাস্তাতেই ছোটবড় দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা। প্রাণহানিও কম ঘটে না। আবার হিংলো, শাল নদীর উপরে এখনও ছোট সেতু দিয়ে সঙ্কীর্ণ রাস্তায় বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চলাচল করে। এই সবের সঙ্গে সঙ্গেই সংস্কারের প্রয়োজন আছে বক্রেশ্বর নদীর উপরে সেতুর রাস্তা, তিলপাড়া ব্যারাজের রাস্তা, দ্বারকা নদের রাস্তা, ব্রাহ্মণী নদীর উপরে সেতুর রাস্তাগুলিরও। |
জাতীয় সড়কের ধারে নাকপুর গ্রামে একটি হোটেলের মালিক গোপাল ভকত বলেন, “বৃষ্টিতে রাস্তা কোথায় সমান, অসমান বোঝা দায়। আবার রোদের সময় ধুলোয় সামনে পিছনে কিছুই দেখা যায় না।” নাকপুর থেকে মোরগ্রাম, বিশেষ করে এই ৩ কিমি রাস্তায় ধুলো দূষণে টেকা দায় হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৪১.২৫ কিমি দীর্ঘ রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কটির প্রায় সর্বত্রই বেহাল। গত জানুয়ারিতে নলহাটি থেকে মোরগ্রাম পর্যন্ত ২১.৪৫ কিমি রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ন্যাশনাল রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট দফতর ওই কাজের জন্য ৩০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। কিন্তু ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের এখনও সিকি ভাগও শেষ হয়নি। আর যে কাজ হয়েছে, তারও গুণগত মান নিয়ে এলাকাবাসী ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন। লোহাপুরের আবু জাহের রানা, কয়থার সফিকুল আলম, কলিঠার আব্দুস সালামরা বলছেন, “মাত্র কয়েক মাস আগে রাস্তাটির কিছু অংশ সংস্কার হয়েছে। অথচ নিম্নমানের কাজের জন্য এক বর্ষা না পেরতেই রাস্তা ফের খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। যার ফলে মাঝ রাস্তায় গাড়ি ভেঙে পড়ে থাকছে। যানজট হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেড়িয়ে সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছি না।” |
রামপুরহাট-বিষ্ণুপুর |
দুবরাজপুর-খয়রাশোল |
|
|
খুব একটা আলাদা চিত্র নয় জেলার অন্য রাস্তাগুলিরও। এ ভাবেই খানাখন্দের
মধ্য দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। —নিজস্ব চিত্র। |
|
নিম্নমানের কাজের অভিযোগ মানতে চাননি ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের নির্বাহী বাস্তুকার সুশোভন গুহ। তাঁর পাল্টা যুক্তি, “এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় রাস্তাটি যখন প্রথম নির্মাণ করা হয়, তখন মোরাম ব্যবহার করা হয়েছিল। ওই মোরাম রাস্তার উপর জমে থাকা জল টানতে পারছে না। তার ফলে রাস্তার উপরের স্তরে থাকা বিটুমিনের ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়াও রাস্তা নির্মাণের সময় ভিতরে কোনও ড্রেনেজ লেয়ারও তৈরি করা হয়নি।” সেই সঙ্গে ওই রাস্তায় ভারি গাড়ি যাতায়াতের ক্ষেত্রে নজরদারির অভাবকেও তিনি দায়ী করছেন। যদিও তাঁর বক্তব্য থেকেই প্রমাণিত রাস্তাটির নির্মাণেই প্রচুর গলদ ছিল। কিন্তু তা বুঝতে পেরেও কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা অবশ্য তিনি স্পষ্ট করতে পারেননি। নির্মাণে ত্রুটি থাকার জন্য ওই রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সুশোভনবাবুর আশ্বাস, “আমরা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। তাঁদের পরামর্শ মতো আমরা কাজ করছি। সেই মতো সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে।” তিনি জানান, সবে মাত্র ২৫ শতাংশ সংস্কারের কাজ হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ হওয়ার পরে রাস্তার জন্য আরও দুই ধাপ বিটুমিন দেওয়া হবে। এ বছর আগাম বর্ষার জন্য বৃষ্টিতে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজের কিছুটা ক্ষতি হলেও ঠিকাদার সংস্থা তা ঠিক করে ফেলছে। এ ছাড়াও ধুলো দূষণ বন্ধ করতে ঠিকাদার সংস্থা নিয়মিত হারে রাস্তার নির্মীয়মাণ অংশে জল ছেটানোর ব্যবস্থা করছে বলে সুশোভনবাবু জানিয়েছেন।
এ দিকে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রেও খবর, মল্লারপুর থেকে নলহাটি, রাস্তার ২৭ কিমি অংশ পুরোমাত্রায় সংস্কারের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। বক্রেশ্বর থেকে মহম্মদবাজার পর্যন্ত ২০ কিমি অংশ রাস্তার সংস্কারের জন্য কাজের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ও দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “জাতীয় সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। কোনও জায়গায় পুরোমাত্রায় সংস্কার করা হচ্ছে, কোথাও আবার প্রয়োজনীয় সংস্কারটুকুই করা হচ্ছে।” |