হাসপাতালে অবহেলায় পড়ে সদ্যোজাতরা
হাইয়ান-তাণ্ডবে উল্টেপাল্টে গিয়েছে শহর। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে পরিণত মানুষগুলোও মারমুখী, অবুঝ। এর মধ্যে টাকলোবানের এক মাত্র চালু সরকারি হাসপাতালে বেমানান অতিথির মতো পড়ে রয়েছে ৮০ জন সদ্যোজাত। পরিচর্যা, ওষুধ, সবই নামমাত্র, কখনও তা-ও নয়। অথচ প্রশাসনের আশঙ্কা, হাইয়ানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই শিশুরাই।
তা হলে তারা এত অবহেলিত কেন? অসহায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য পরোক্ষে কাঠগড়ায় তুলছেন হাইয়ানকেই। তাঁদের বক্তব্য, ঝড়ে চালচুলোহীন হয়ে হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন অগুনতি মানুষ। শরণার্থীদের বিশ্বাস, এখান থেকেই মিলবে খাবার, আশ্রয়, জামাকাপড়, ওষুধ। শত বুঝিয়েও তাদের নিরস্ত করা যাচ্ছে না। সহায়-সম্বলহীনদের সামলাতেই তাই ব্যস্ত হাসপাতাল কর্মীরা। সদ্যোজাতের ক্ষীণ আওয়াজ কানেও যাচ্ছে না তাঁদের। অগত্যা, হাসপাতালের ঘরে কাঠের ছোট খাটে হাত-পা ছুড়ছে খুদেরা। কেউ বা কেঁদেই চলেছে। কারও আবার কাঁদার শক্তিটুকুও নেই। চিকিৎসা বলতে, ‘ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড’। তা-ও শেষের পথে। হাসপাতালের চিকিৎসক আলবের্তো দি লিওনের আশঙ্কা, “সদ্যোজাতরা হাসপাতাল থেকেই সংক্রামিত হবে।”
চিকিৎসক, নার্স, কারও কথাই কানে যাচ্ছে না মারিসেল ক্রুজের। হাসপাতালের বেঞ্চে বসে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রয়েছেন কোলের দিকে। কালো কাপড়ে ঢাকা তাঁর পাঁচ মাসের সন্তানের দেহ কোলে নিয়ে আপন মনেই বিড়বিড় করছেন, “টাইফুনের আগে থেকেই শরীর খারাপ ছিল ওর। ঝড়ের পর আরও বিগড়োল। ওষুধ খুঁজলাম তন্ন তন্ন করে। পেলাম না। মারা গেল ও।”
ম্যানিলায় জোরকদমে চলছে ত্রাণ বিলির কাজ। বৃহস্পতিবার। ছবি: এএফপি।
ফিলিপিন্সের লেইট প্রদেশ জুড়ে এখন এই শোকের ছবি। কিন্তু তার মধ্যেও নিজেদের মতো করে বাঁচার আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে ৭২ জন অনাথ শিশু। হাইয়ান তাদের সব কেড়েছে। এমনকী, যে অনাথাশ্রমে থাকত তারা, তার গোটাটাই সমুদ্রের জলে। এখনও খাবার, ওষুধ মিলছে না। তবু তাদের বাঁচার ভরসা দিয়ে যাচ্ছেন অনাথাশ্রমের ডিরেক্টর আরলেন্ড জোহানেসেন। প্রবল জলস্রোত থেকে বাঁচতে প্রথমে অনাথাশ্রমের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় আর তার পর টিনের ছাদে উঠে কোনও মতে বাঁচেন তিনি। বাঁচান ৭২ জনকে। মৃত্যুর সঙ্গে প্রথম যুদ্ধে জয়ের স্বাদ পেয়ে তাই আশাবাদী আরলেন্ড ও তার দলবল।
তবে তাঁদের মতো সকলেই যে ভাগ্যবান নন, তা টাকলোবানের এ দিক ও দিক তাকালেই বোঝা যায়। ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে মৃতদেহ। সরকারি হিসেবে ফিলিপিন্সে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২,৩৫৭। তবে প্রশাসনের আশঙ্কা, ঝড়-বিধ্বস্ত প্রত্যেকটি এলাকায় যত ক্ষণ না পর্যন্ত পৌঁছনো যাবে, তত ক্ষণ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। শুরু হয়েছে শেষকৃত্যের তৎপরতা। বৃহস্পতিবার, টাকলোবান লাগোয়া কবরস্থানে গণসমাধির আয়োজন করা হয়। প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে এঁদের শনাক্ত করতে পারেন আত্মীয়রা, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়েছে কি না, তা যদিও এখনও পরিষ্কার নয়।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.