দু’এক পশলা বৃষ্টির পরেই মঞ্চের সামনে জল জমে যায়। সামনের কয়েকটি সারিতে বসে থাকা চেয়ারে হাঁটু মুড়ে বসতে বাধ্য হন দর্শকেরা। ছাদের কাঠ-প্লাইউড খুলে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে। চারপাশের দেওয়ালে নোনা ধরেছে। সাজঘর, মঞ্চের পরদা, স্ক্রিনের হালও তথৈবচ। জলপাইগুড়ি ‘রবীন্দ্র ভবন’ অডিটোরিয়াম নিয়ে। সত্তরের দশকে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আর্যনাট্য সমাজ প্রাঙ্গণে ‘রবীন্দ্র ভবন’ তৈরি হয়। নির্মাণের পয়ে কয়েক দশক কেটে গেলেও, প্রায় সাড়ে ছ’শো দর্শক আসনের এই অডিটোরিয়ামের যথাযথ সংস্কার হয়নি বলে দর্শক-শিল্পীদের অভিযোগ। সে কারণে মঞ্চ থেকে শুরু করে দর্শকাসন সব কিছুই বেহাল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। প্লাস্টিকের দর্শকাসনগুলিও ভাঙা এবং নড়বড়ে হয়ে পড়েছে বলে কর্তৃপক্ষেরও অভিযোগ। দেড় তলার বেহাল শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ভেসে আসে দর্শকদের বসার আসনেও।
জলপাইগুড়ি শহরের সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান ‘রবীন্দ্র ভবন মঞ্চের’ হাল ফেরাতে পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে সংস্কারের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। মোট বরাদ্দের ৬০ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার এবং বাকিটা রাজ্য সরকার বহন করবেন। রাজ্যের থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ৫২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে এই বরাদ্দ খরচ করতে পারলে, কেন্দ্রীয় সরকার বাকি বরাদ্দ দেবে বলে জানা গিয়েছে। পূর্ত দফতরের নির্মাণ বিভাগ ইতিমধ্যেই টেণ্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। |
আগামী মাসের মধ্যেই সংস্কার শুরু হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। সংস্কারের পরে কেমন রূপ নেবে জলপাইগুড়ি রবীন্দ্র ভবন? পূর্ত দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ মেলার কারণে সংস্কারের কাজও একাধিক পর্যায়ে হবে। প্রথম পর্যায়ে পাওয়া ৫২ লক্ষ টাকা খরচের জন্য রবীন্দ্র ভবন অডিটোরিয়ামের প্রাথমিক সংস্কার প্রয়োজনের তালিকা তৈরি করা হয়। তালিকা অনুযায়ী, প্রথমেই অডিটোরিয়ামের ভিতরে জল জমে যাওয়া বন্ধ করতে ব্যবস্থা করা হবে। মেঝে ফুঁড়ে জল ওটা বন্ধ করতে নতুন করে ঢালাই করা হবে। ভবনের ছাদ নতুন করে বানানো হবে। সাজ ঘর সংস্কার ও মঞ্চে নতুন স্ক্রিন লাগানোর ব্যবস্থা হবে। অডিটোরিয়ামের শব্দ সংযোজন ব্যবস্থা বেহাল হয়ে থাকায় ভাল সাউণ্ডবক্স ব্যবহার করেও স্পষ্ট শব্দ শোনা যায় না বলে অভিযোগ। তাই শব্দ সংযোজন ব্যবস্থারও সংস্কার করা হবে বলে পূর্ত দফতর জানিয়েছে। পরবর্তী বরাদ্দ পেলে দর্শকাসন থেকে শুরু করে গোটা অডিটোরিয়ামটি পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে।
জলপাইগুড়ির জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক জগদীশ রায় বলেন, “জেলার সংস্কৃতিপ্রেমীরা দীর্ঘদিন সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন। রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই সংস্কার শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের টেগোর কালচারাল কমপ্লেক্স প্রকল্পে জলপাইগুড়ি রবীন্দ্রভবনে আর্থিক মঞ্জুরি এসেছে। সংস্কারের পরে অডিটোরিয়ামের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে পদক্ষেপ করা হবে।”
রবীন্দ্র ভবনের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আর্যনাট্য সমাজের যুগ্ম সম্পাদক কিংশুক বসু বলেন, “জল জমা সহ মঞ্চ, অডিটোরিয়ামের ছাদ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা জানিয়েছিলাম। সেই মতো কাজ শুরু হবে বলে শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে।” নাট্যকর্মী তথা জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ঐতিহ্যশালী এই অডিটোরিয়াম ফের যাতে বেহাল হয়ে না পড়ে, তার জন্য সরকারকেই অডিটোরিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে।’’ |