প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ
রাস্তা ভাঙছে ভারী গাড়ি, নেই সংস্কার
রাস্তার গর্তে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই। পুজোর সময়ের নাগাড়ে বৃষ্টিতে ওই সব গর্তের জমা জল গাড়ির চাকার চাপে ছিটকে জানলা দিয়ে আশপাশের বাড়ির ভিতরের ঘরেও ঢুকেছে। এমনই বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে বিষ্ণুপুরের জয়কৃষ্ণপুর-নবান্দা রাজ্য সড়ক। সম্প্রতি রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে গ্রামবাসীরা পথ অবরোধেও নেমেছিলেন। তবু প্রশাসনের হেলদোল নেই বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। রাস্তার হালও যে কে সেই। ভারী ওজনের যানবাহন চলাচলেই রাস্তার হাল বিগড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মত। এই রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে দ্বারকেশ্বর নদ। জয়কৃষ্ণপুর মোড় থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত ধরাপাট, পাইকপাড়ার মতো বেশ কয়েকটি গ্রামে বালিখাদান রয়েছে। এই সমস্ত বালিখাদ থেকে বালি তুলে শয়ে শয়ে ট্রাক, লরি, ট্রাক্টর প্রতিদিন এই রাস্তা ধরেই চলাচল করে। মূলত এই বালি বোঝাই যানবাহনের চাপেই গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির এমন শোচনীয় দশা বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় পেঁচাগড়া গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক কুণ্ডু, স্বপন নন্দীরা বলেন, “রাস্তার পরিকাঠামোর তুলনায় অনেক বেশি ভারী যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে এই পথে। আর সেই কারণেই রাস্তা খারাপ হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছি আমরা।” পাইকপাড়ার বাসিন্দা প্রশান্ত দে, সুশান্ত দে-র ক্ষোভ, “রাস্তায় প্রায় দিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। বর্ষার সময় গর্তে জমা জল গাড়ির চাকায় ছিটকে বাড়ির ভিতরে ঢুকে বিছানাপত্র নোংরা করে দিয়েছিল।”
জয়কৃষ্ণপুর থেকে নবান্দা যাওয়ার পথে পাইকপাড়া গ্রামের কাছে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।
পাত্রবাখড়ার দুধ ব্যবসায়ী সাধন মাল রোজ সাইকেলে বিষ্ণুপুরে যান দুধ বিক্রি করতে। তাঁর কথায়, “রাস্তার গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাইকেল থেকে হামেশাই পড়ে যাই। শুধু আমিই কেন, আমাদের গ্রামের বহু মানুষ, যাঁরা আমার মতো পেশায় যুক্ত, তাঁদের সকলের একই সমস্যা।” এই রাস্তা দিয়ে বিষ্ণুপুর থেকে ওন্দার তেতুঁলমুড়ি, বাঁকুড়ামুখী যাত্রিবাহী বাস চলাচল করে। খন্দে ভরা রাস্তায় ঝাঁকুনিতে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। বাসকর্মীদের ক্ষোভ, মাঝেমধ্যেই বড় গর্তে পড়ে বাসের যন্ত্রাংশ খারাপ হয়। দ্রুত রাস্তা মেরামতির দাবিতে সম্প্রতি জয়কৃষ্ণপুর মোড়ে পথ অবরোধও করেছিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ।
ভারী যান চলাচলেই বেহাল হচ্ছে রাস্তা, স্থানীয় বাসিন্দাদের এই বক্তব্যকে মেনে নিচ্ছেন বাঁকুড়া জেলা পূর্ত (সড়ক) দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সৌগত সরকার। তিনি বলেন, “১০ টনের বেশি ভারী যানবাহন চলাচল করার মতো রাস্তা এটা নয়। কিন্তু, বাস্তবে ১০ টনের চেয়ে কয়েক গুণ অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচল করে প্রতিদিন।” তাঁর দাবি, “প্রতি বছরই এই রাস্তাটি সংস্কার করা হয়। কিন্তু, বেশি ওজনের গাড়ি চলাচলের ফলে রাস্তা সারাইয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই ফের তা বেহাল হয়ে পড়ে।” তবে, দ্রুত রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন সৌগতবাবু।
বিষ্ণুপুর মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ সরকারের অবশ্য দাবি, “আমরা ৩০০ সিএফটির বেশি বালি পরিবহণের ছাড়পত্র দিই না। আর এই পরিমাণ বালি যা ১০ টনের তুলনায় অনেক কম।” তার পরেও অতিরিক্ত বালিবোঝাই যনবাহন চলাচলের অভিযোগ উঠছে কেন? তাঁর বক্তব্য, “বেশি মাত্রায় বালি পরিবহণ রুখতে আমরা নিয়মিত তল্লাশি চালাচ্ছি। ধরতে পারলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, গত দু’মাসে অন্তত ৩০টি বালি পরিবহণকারী গাড়ির বিরুদ্ধে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় বালি তোলার অভিযোগ করা হয়েছে। তবে, এত কিছুর পরেও রাস্তার হাল ফিরছে না। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানাচ্ছেন, রাস্তার পরিকাঠামোর তুলনায় ভারী যানবাহন রোখায় পুলিশের কোনও ভূমিকা নেই। তাঁর যুক্তি, “কোন গাড়িতে কতটা পণ্য পরিবহণ করা যেতে পারে, গাড়ির কাগজপত্রে তার হিসেব থাকে। কিন্তু, কোন রাস্তায় কতটা পণ্য পরিবহণ করার কথা, তার হিসাব আমাদের জানা নেই। এটা মূলত পরিবহণ দফতরের কাজ।” তবে এই সব রুখতে পুলিশ সুপারের পরামর্শ, “রাস্তার পরিকাঠামো অনুযায়ী কতটা পরিমাণ পণ্য পরিবহণ করা যেতে পারে, তা সাইনবোর্ডে রাস্তার শুরু ও শেষ প্রান্তে লিখে রাখলে মানুষের সচেতনতা বাড়তে পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.