গরিবদের জন্য তৈরি হওয়া প্রকল্পে বাদ পড়েছেন পিছিয়ে থাকা এলাকার বাসিন্দারাই। বেছে বেছে শুধু তৃণমূল বিধায়কদের নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দাদেরই এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারের ‘অধিকার’ প্রকল্প নিয়ে এমনই অভিযোগ তুলেছেন পুরুলিয়ার বিরোধী বিধায়করা। বিধানসভাতেও তাঁরা সরব হয়েছেন।
রাজ্যে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির মধ্যে পুরুলিয়া অন্যতম। তারও পিছিয়ে পড়া বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বাঘমুণ্ডি, বান্দোয়ান, জয়পুর অন্যতম। দারিদ্র্যের ফয়দা নিয়েই ওই সব এলাকায় মাওবাদীরা এক সময়ে প্রভাব বাড়িয়েছিল। কিন্তু অধিকার প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার যে বিধানসভা কেন্দ্রগুলির নামের তালিকা তৈরি করেছে, তাতে ওই এলাকাগুলি নেই। ঘটনাচক্রে, ওই কেন্দ্রগুলির বিধায়কেরা রাজ্যের বিরোধী দলের। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার ২০১২-১৩ সালে ‘অধিকার’ নামে এই প্রকল্পটি চালু করে। ঠিক হয় পশ্চাদপদ এলাকা উন্নয়ন তহবিল (ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্র্যান্ট ফান্ড) থেকে এই প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে। বাকি ২৫ শতাংশ দেবে রাজ্য সরকার। রাজ্যের ১১টি জেলায় এই প্রকল্পে কাজ হবে। তার জন্য মোট ১৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। খুব দরিদ্র ও ইন্দিরা আবাস যোজনার উপভোক্তা নন এমন পরিবারকেই এই প্রকল্পে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কথা। তারা বিপিএল তালিকাভুক্ত না হলেও চলবে বলে জানা গিয়েছে। রাজ্যের কোথায় কোথায় এই প্রকল্পের কাজ হবে বা কোন এলাকার মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধে পাবেন, তা ঠিক করতে সরকার ইতিমধ্যে তিন জন মন্ত্রীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় তার চেয়ারম্যান। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও কমিটিতে রয়েছেন। প্রকল্পের উপভোক্তা নির্বাচন করার কথা এলাকার বিধায়কের।
বাঘমুণ্ডি কেন্দ্রের বিধায়ক তথা পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর অভিযোগ, “ওই কমিটির নির্দেশ মোতাবেক পুরুলিয়ার ন’টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে। তালিকায় থাকা ওই পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিধায়কই তৃণমূলের। অথচ পিছিয়ে পড়া এলাকা হওয়া সত্ত্বেও বাঘমুণ্ডি, বান্দোয়ান, জয়পুর ও পাড়ার মতো বিরোধী বিধায়কদের কেন্দ্রগুলি বাদ পড়েছে।”
পাড়া-র কংগ্রেস বিধায়ক উমাপদ বাউরির অভিযোগ, “জেলায় সরকারি ভাবে স্বীকৃত ৯৯৪টি পিছিয়ে পড়া মৌজার মধ্যে ৫৫৭টিরও বেশি এই চারটি বিধানসভা এলাকায় পড়ে।” জয়পুরের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, “আমার বিধানসভা এলাকায় ১৬৩টি পিছিয়ে পড়া মৌজা রয়েছে। অথচ এই বিধানসভা কেন্দ্রের গরিবেরা প্রকল্পের আওতায় এলেন না।”
বান্দোয়ানের সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত বেসরার ক্ষোভ, পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলি কেন বঞ্চিত হল, তা বিধানসভায় জানতে চেয়েও জবাব পাননি। রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর আশ্বাস, “ওই এলাকাগুলিতে অধিকার প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই করা হবে।” পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও একই রকমের আশ্বাস দিয়েছেন। |