শাসকদল মাঠে নামতেই বদলে গেল ছবিটা!
বুধবার। পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ব্লকের রায়বাঁধ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস। রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ চেক বিলির শিবির চলছে সেখানে। রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির গাড়িতে চেপেই জমির ক্ষতিপূরণের চেক নিতে এলেন ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’-র নেতার বাবা। আর সেই নেতা ত্রিলোচন গঁরাই জানিয়ে দিলেন, বিধায়ক, সভাধিপতির সঙ্গে কথা বলে তাঁদের দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে তিনি অন্তত আর ‘ওয়াটার করিডর’ নির্মাণে বাধা দিতে যাবেন না।
এর নিট ফল, আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ‘ওয়াটার করিডর’-এর (প্রকল্পে জল আনার পাইপলাইন বসানো) কাজ ফের শুরু করছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিভিসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্রের সঙ্গে দেখা করে কাজ শুরু করার ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। প্রকল্পের ‘অ্যাশপন্ড’ বা ছাইপুকুর তৈরিতেও স্থানীয় কিছু বাসিন্দা বাধা দিচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন সভাধিপতি। দেবাশিসবাবু এ দিন বলেন, “সভাধিপতি জানিয়েছিলেন ওয়াটার করিডরের সমস্যা মিটেছে। কাজের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উনি কাজ শুরু করতে বলায় বৃহস্পতিবার থেকেই কাজ শুরু করছি।”
কী করে সম্ভব হল এই উলটপুরাণ? জমি-জটের জেরে রঘুনাথপুর থেকে ডিভিসি-র প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় অন্যত্র সরে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতেই তৎপর হয়েছিল শাসকদল। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে গত সপ্তাহে বৈঠক করেন ডিভিসি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন। এর পরেই এলাকায় তৃণমূলের উদ্যোগে ‘শিল্প উন্নয়ন কমিটি’ গড়ে ওঠে। কমিটির নেতারা অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের বোঝানোর কাজ শুরু করেন। বস্তুত, ওই কমিটির প্রস্তাব মেনেই, অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের জন্য ফের চেক বিলির শিবির করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার রায়বাঁধে সভার আয়োজন করে কমিটির নেতারা সব অনিচ্ছুক জমি-মালিককে ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে নেওয়ার আবেদন জানান। সঙ্গে ছিল প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারিও।
ফলে এ দিন বিধায়কের গাড়িতে ক্ষতিপূরণের চেক নিতে এসেছিলেন এত দিন ওয়াটার করিডরের কাজে বাধা দেওয়ায় ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’-র নেতা ত্রিলোচনবাবুর বাবা অজিতপ্রসাদ গঁরাই। দুপুর থেকেই রায়বাঁধে ‘শিল্প উন্নয়ন কমিটি’-র সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবু। তাঁর দাবি, “যে সমস্ত জমি-মালিক এত দিন সংগঠন গড়ে বাধা দিচ্ছিলেন, তাঁদের বোঝাতে পেরেছি। ওঁরা বিরোধিতা থেকে সরে আসছেন।”
কয়েক মাস আগে রায়বাঁধ পঞ্চায়েতেই চেক বিলি জমিরক্ষা কমিটির বাধায় সফল হয়নি প্রশাসন। এ দিন কিন্তু কমিটির নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি। যদিও ২৮০ জন জমি-মালিকের মধ্যে পাঁচ জন এ দিন চেক বা টাকা নিয়েছেন। বিধায়কের দাবি, কিছু ভুল বোঝাবুঝিতে ভূমি অধিগ্রহণ দফতরের কর্মীরা শুধু রায়বাঁধ মৌজার জমি-মালিকদের চেক নিয়ে এসেছিলেন। অন্য মৌজার জমি-মালিকেরা এসে ফিরে গিয়েছেন। ওয়াটার করিডরের জন্য খুবই কম পরিমাণ জমি যাচ্ছে। ফলে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণও কম। সে জন্যই জমি-মালিকদের একটা বড় অংশ চেক নেওয়ায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে বিধায়ক জানান।
রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনা বলেন, “শুক্রবার রায়বাঁধ ও গুনিয়াড়া পঞ্চায়েতের সব মৌজারই চেক দেওয়া হবে গুনিয়াড়া পঞ্চায়েত অফিসে শিবির করে।”
|