ঐতিহাসিক শহর কাশিমবাজারের সেই সময় আর নেই। এমনকী পরিষেবার নিরিখেও বহরমপুর পুরসভার কাছে কাশিমবাজার আজ ‘দুয়োরানি’। আলো, নিকাশি ব্যবস্থা, পরিবহণ সমস্যা ও পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগছে এক সময়ের বন্দর শহর কাশিমবাজার। শিবপুর, ভাটপাড়া, শ্রীপুর ব্যাসপুর, বিষ্ণুপুর অর্থাৎ বহরমপুর পুরসভার ১, ২, ৯ এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের ঐতিহাসিক অঞ্চলটি কাশিমবাজার নামে খ্যাত।
অথচ ব্রিটিশ আমলে কাশিমবাজার ছিল রীতিমতো বর্ধিষ্ণু একটি শহর। মুর্শিদাবাদের ইতিহাস গবেষক বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ‘শহর বহরমপুর’ গ্রন্থে লিখেছেন, “সপ্তগ্রামের পতন এবং কলকাতার উত্থানের মধ্যবর্তী সময়ে কাশিমবাজার অদ্বিতীয় বাণিজ্যনগরীর স্থান অধিকার করেছিল।” বিজয়বাবু লিখছেন, “তখন সমগ্র বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কেম্পানি ২৩০০০০ পাউন্ড লগ্নি করে। তার মধ্যে কাশিমবাজারেই লগ্নি ছিল ১৪০০০০ পাউন্ড।” |
অথচ সেই শহরে প্রচারে খোদ রেল প্রতিমন্ত্রীকে শুনতে হল নিকাশি নালা, পানীয় জল, রাস্তার আলো, পথে পিচ-পাথর ফেলা নিয়ে দাবি, আবদার ও অভিযোগ। রেল প্রতিমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই অধীরবাবু বহরমপুর পুরসভার মুখ্য-উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের জামতলার পুকুর সংস্কার হয়নি বলে তাঁর কাছে অনুযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা জয়প্রকাশ অধিকারী। সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিষ্ণুপুর বিলের উপর অপরিসর ঐতিহাসিক হোতার সাঁকোর পাশে আরও একটি সাঁকো না থাকায় কাশিমবাজারবাসীকে ৫ মিনিটের দূরত্বে খাগড়া পৌঁছতে ঘুরপথে লাগে আধঘণ্টা।” ২ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দনকুমার দাস বলেন, “মণীন্দনগর মিলের পিছনের পাড়ায় ডোবার জল নিকাশির ব্যবস্থা মজে যাওয়ায় রাস্তায় জল জমে।” ১ নম্বর ওয়ার্ডের পঙ্কজ রায়ের অভিযোগ, “সংস্কারের অভাবে পুরনো নিকাশির হাল খারাপ।” ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুমন দাস ও নজরুল শেখের দাবি, পানীয় জলের ‘টাইম কল’।
অধীরবাবু বলেন, “জন্মলগ্ন থকে বহরপুর পুরসভা ছিল ‘সি ক্যাটাগরি’র। কয়েক মাস হল ‘বি ক্যাটাগরি’-তে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু এখনও সেই মতো সরকারি অর্থ বরাদ্দ হয়নি। ফলে পুরসভা ও জেলা পরিষদ যৌথভাবে খুব শীঘ্রই সাঁকো, কাশিমবাজার পোস্ট অফিসের মোড় থেকে পঞ্চাননতলা ও কার্জন ব্রিজ থেকে রিং রোড হয়ে চুনাখালি পর্যন্ত চওড়া ও উন্নত মানের রাস্তা তৈরি করবে, ত্রিফলা বাতিও লাগাবে। তার জন্য প্রকল্প তৈরিও হয়ে গিয়েছে।” পুকুর সংস্কার ও নিকাশি নালা সংস্কার প্রসঙ্গে অধীরবাবু বলেন, “ওই কাজগুলিও দ্রুত হয়ে যাবে।” বিশুদ্ধ পানীয় জল নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “ভাগীরথীর জল শোধন করার পর আর্সেনিক মুক্ত সেই জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার নির্মীয়মান প্রকল্পটি শেষ হতে সময় লাগবে আর মাত্র কয়েকটি মাস।” নিকাশি নেই। তাই এভাবেই চলে। বাড়ির জমা জল পরিষ্কার। |