গ্রেফতারের ‘খাঁড়া’ ঝুলছে তাঁর উপরে। অন্তর্বর্তী জামিন মেলায় দিন কয়েক আগে দিল্লি থেকে নিজের খাসতালুকে ফিরে দ্রুত সেরে নিচ্ছেন প্রচার-পর্ব। তবে, রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর ‘গড়’ বহরমপুরের পুর-নির্বাচন যে শাসক দলও পাখির চোখ করেছে, খোলাখুলিই তা জানিয়ে দিয়েছিলেন দলের শীর্ষ নেতারা।
অধীরের অন্তর্বর্তী জামিনের বিরোধিতা করে তাই মঙ্গলবারই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। এ বার, দলের প্রথম সারির নেতাদেরও বহরমপুরে পাঠিয়ে নিজের শক্ত ঘাঁটিতে অধীরকে চাপে রাখা শুরু করে দিল শাসক দল। বুধবার, দলের সবর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বহরমপুরে এসেছিলেন। এবং প্রচার সভার জন্য বেছে নিয়েছিলেন বহরমপুরের সেই ময়দানটি, দিন কয়েক আগে জামিন পেয়ে দিল্লি-ফেরত অধীর যেখান থেকে শুরু করেছিলেন তাঁর পুরসভা দখলের ‘প্রত্যাবর্তন-পালা।’
এ দিন দুপুরের ওই জনসভায় এক বারও রেল প্রতিমন্ত্রীর নাম করেননি মুকুল। তবে, মুর্শিদাবাদে ‘খুনিদের চক্র’ গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আকারে ইঙ্গিতে খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়া অধীরকেই চাপে রেখেছেন। মুকুল বলেন, “এ জেলায় খুনিদের একটা চক্র ছিল। সেই চক্রের সবাই ধরা পড়েছে। তাঁরা এখন জেলে। জেলে গিয়ে তারা যে সব বিবৃতি দিয়েছে তা অত্যন্ত ভয়ানক। আমি এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আইন আইনের পথে চলবে।” শাসক দলের কর্মী কামাল শেখ খুনে পুলিশের চার্জশিটে রেল প্রতিমন্ত্রীর নাম
রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে আদালতে সেই চার্জশিট জমা পড়তেই রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল ‘অধীর-গ্রেফতার’-কেই তাদের প্রচারের মূল হাতিয়ার করেছিল। এ দিন প্রচ্ছন্ন
সুরে সে কথাই ফের মনে করিয়ে দিলেন মুকুল।
তবে তা নিয়ে তেমন হেলদোল নেই অধীরের। দুপুরে তৃণমূল নেতার জনসভা শেষে বিকেলে অধীর তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এক বারও মুকুলের নাম না করে বলেন, “দলের মাথাদের বহরমপুরে আনছে তৃণমূল। আনুক। বহরমপুরের মানুষ আমাকে চেনেন, কংগ্রেসকেও বোঝেন। ওঁদের এনে ফল বদলে দেওয়া যাবে না।” তাঁর পাল্টা হুমকি, “ষড়যন্ত্র করে আমাকে জেলে ঢুকিয়ে বহরমপুর দখলই এখন শাসক দল পাখির চোখ করেছে। তবে জেনে রাখুন ফল বদলাবে না।” গত পুরসভায় ২৯-০ ভোটে বহরমপুর দখল করেছিল কংগ্রেস। অধীরের আশা এ বারও সে ফলই হবে।
কিন্তু এ যাবৎ তৃণমূলের কোনও সভায় এত জনসমাগম তো হয়নি?
বুধবার মুকুলের সভায় যোগ দিতে কয়েকশো বাসে করে বহরমপুর এসেছিলেন দলীয় সমর্থকেরা।
ভরে উঠেছিল এফইউসি ময়দান। যা দেখে অধীরের কটাক্ষ, “অধিকাংশই শহরের বাইরের লোক। পড়শি জেলা বীরভূম থেকেও অনেকে এসেছিলেন।”
মুকুলের জনসভায় তুমুল হাততালির মধ্যে এ দিন কংগ্রেস ছেড়ে শাসক দলে যোগ দেন ছাত্রপরিষদের রাজ্য সভাপতি রাহুল রায়। মুকুল তাঁকে স্বাগত জানালেও তা নিয়ে বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এ দিন ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দলবিরোধী কাজের জন্য রাহুলকে আগেই ছাত্র পরিষদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।
মুকুল তাঁর জবাবে সংযত থাকলেও বহরমপুর পুরসভা দখল করলে একগুচ্ছ আগাম প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন। ‘বিশ্বমানের’ পানীয় জল পরিষেবা যার অন্যতম। যা শুনে পাল্টা জবাব দিতে ছানেননি অধীর, “বহরমপুর পুরসভার মানোন্নয়ন হলেও বরাদ্দ টাকা কিন্তু এখনও দেয়নি রাজ্য সরকার। আবার পুরসভা
দখল করলে তারাই দু’ বছরের বিশ্বমানের পরিষেবা দেবে? আপনারাই ভেবে দেখুন!”
মুকুলের সভায় ছিলেন দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি তথা প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। একদা অধীর-অনুগামী হুমায়ুন এ দিন বলেন, “অধীর হিংস্র ব্যক্তি। তাঁর বিরোধিতা করলেই প্রাণ সংশয় হয়। তবে, আমার চ্যালেঞ্জ থাকল, আমাদের দলের কোনও কর্মীর গায়ে হাত পড়লে ইটের জবাব দেব পাটকেলে।” অধীর বলছেন, “যা জবাব দেওয়ার, আমি নয়, বহরমপুরের মানুষই দিয়ে দেবেন ওঁদের।”
|