আত্মার যোগ ছিন্ন করতে
আমরা এখনও তৈরি নই
মুম্বইয়ে গত ক’টা দিন পাগল করা ব্যস্ততার মধ্যে কাটলএকটার পর একটা অনুষ্ঠান, আর আবেগের বিস্ফোরণ। মুম্বইয়ে বাতাসের প্রতিটি কণায় এই মুহূর্তে শুধুই সচিন তেন্ডুলকর। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিশে রয়েছে সচিন! শেষ বারের মতো ক্রিকেট মাঠে সচিনকে দেখতে টিকিট আর পাস জোগাড়ের যে হুড়োহুড়ি আর আকুতি চলছে, বলতেই হচ্ছে ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালকেও হার মানিয়েছে। যাঁরা শেষ পর্যন্ত সত্যিই মাঠে হাজির থাকার সুযোগ পাবেন, তাঁদের জন্য বহু বছর পর নাতি-নাতনিদের গল্প করে শোনানোর মতো জীবনের অমূল্য সঞ্চয় হয়ে থাকবে অভিজ্ঞতাটা। সব মিলিয়ে ওয়াংখেড়ে টেস্ট ঘিরে এমন একটা আবেশ, যা আগে কখনও কোনও টেস্ট ম্যাচে দেখা যায়নি!
আজ থেকে শুরু করে আগামী পাঁচটা দিন স্মরণীয় হতে চলেছে। সচিনের শেষ বারের মতো মাঠে নামা, ক্রিকেটকে পাকাপাকি বিদায় জানিয়ে মাঠ ছাড়ার মুহূর্ত, ওর করা শেষ রান, শেষ বাউন্ডারি, শেষ ছক্কা বা শেষ সেঞ্চুরি—প্রতিটা ঘটনা অন্তিম বার উৎসবে মাতার কারণ হবে। এখনই বলে দিতে পারি, সচিনের টিমমেটদের প্রতিক্রিয়া, প্রতিপক্ষ দলের প্রতিক্রিয়া আর গ্যালারির শ্রদ্ধার্ঘ্যে বিশ্বের বহু ক্রিকেট অনুরাগীর গলা বুজে আসবে। ক্রিকেট বোদ্ধা হোন বা আম-আদমি, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সচিনের বিদায়ী টেস্ট নিয়ে নারী-পুরুষ-বাচ্চা-বুড়ো প্রত্যেকের আগ্রহের মাত্রাটা একই রকম তীব্র। শেষ টেস্টটা আমাদের সবার কাছেই সচিনের সঙ্গে আত্মার যোগটা ছিন্ন করার মতো। বাঁধনহারা আবেগের ফল্গুধারায় যে যন্ত্রণা থেকে মুক্তির রাস্তা খুঁজবে গোটা দেশ।

বিদায়বেলায় গোটা দেশ যখন বিষণ্ণ, সচিনের মুখে হাসি।
বুধবার ওয়াংখেড়েতে। ছবি: উৎপল সরকার।
এমন বিদায়মঞ্চেও সচিন কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি ঠিক একই রকম নিবেদিত। ওর পা সেই বাস্তবের মজবুত জমিতে আর সমস্ত ফোকাস ধোনির টিমের ব্যাটসম্যান হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালনের উপর। ওয়াংখেড়ের পিচটাকে সচিন নিজের হাতের তালুর মতোই চেনে। ওর ব্যাটিংয়ের জন্য একদম আদর্শ। পিচের সমান বাউন্স আর বল পড়ে ব্যাটে আসা সচিনকে শেষ বারের মতো জ্বলে উঠতে বাড়তি তাতাবেই। তবে প্রথম ইনিংসটা ভাল খেলা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ক্রিকেট এমনই খেলা যে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত আদৌ ব্যাট করার সুযোগ পাবে কি না, পেলেও কতক্ষণ ব্যাট করবে, কিছুই জোর দিয়ে বলা যায় না।
ক্রিকেট বিশ্বে যে সময়টা সচিনের সবে সবে নামডাক হতে শুরু করেছে, তখন ওর বর্তমান টিমমেটদের অনেকেই ন্যাপিতে ছিল। এমনকী সচিনের পরেই দলে যে সবচেয়ে সিনিয়র, সেই অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনিও সচিনের অবিশ্বাস্য কেরিয়ারের একেবারে শেষ অর্ধে এসে ওকে দেখেছে। টিম ইন্ডিয়ায় দশ বছরেরও কম সময় খেলছে সচিনের সঙ্গে। টিমমেটদের প্রত্যেকের জন্য তাই শেষ বারের মতো ওর সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করাটা জীবনের অন্যতম ক্রিকেটীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে। শেষ ক্রিকেট যুদ্ধে নায়কের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার স্মৃতিগুলো এর পর ওরা হয়তো সাক্ষাৎকারে, ব্লগ-এ বা বই লিখে প্রকাশ করবে। আর গত চব্বিশ বছর ধরে আনন্দ, বিনোদন, প্রেরণা, গর্ব—ঐশ্বর্যের দান গ্রহণ করে সচিনের প্রতি ঋণী একটা গোটা দেশ নিজেদের ধন্যবাদ জানানোর সব ভাষা উজাড় করে দেবে আগামী পাঁচ দিনে।
তাই যা বলার, বলা হোক। যা হওয়ার, হয়ে যাক। মাঠে নেমে শেষ বার নিজের মায়াবী সম্মোহন বিস্তারে ভারত তার আইডলকে উদ্বুদ্ধ করুক।
এটা সত্যি যে, সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। কিন্তু সময়-ও হয়তো কয়েক মুহূর্ত থমকে দাঁড়াবে; যখন সচিন তেন্ডুলকর শেষ বারের মতো মাঠের আলো ছেড়ে মিলিয়ে যাবে ভারতীয় ড্রেসিংরুমের ছায়ায়। বাজি ফেলে বলে দিচ্ছি, সেই মুহূর্তে দেখবেন আপনার আশপাশের বহু মুখই কান্নায় ভেসে যাচ্ছে।
চরম মুহূর্তটার মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্য আমরা কেউই যে এখনও পুরোপুরি তৈরি নই!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.