অতীতে মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। দীর্ঘকাল শহরের খুবই পুরনো মাঠটির তত্ত্বাবধানে ছিল আরামবাগমহকুমা প্রশাসন। কয়েকবার মাঠটি পুরসভা সংস্কারও করে। বছর চারেক আগে পঞ্চায়েত সমিতির তত্ত্বাবধানে মুসলিম ছাত্রীদের জন্য একটি হস্টেল নির্মাণের জন্য জমি মাপজোকের সময় জানা যায় জুবিলি পার্ক নামে ওই মাঠের কিছু অংশ স্থানীয় ইদগার সম্পত্তি এবং বাকিটা পূর্ত (সাধারণ) দফতরের। এই ঘটনার পর থেকেই সংস্কার এবং তদারকির অভাবে বর্তমানে মাঠের অবস্থা বেহাল। নতুন মালিকানা নির্দিষ্ট হওয়ার পর পুরসভা এবং মহকুমা প্রশাসন যেমন তদারকি এবং সংস্কারের দায়িত্ব এড়াতে চাইছে, তেমনই পূর্ত দফতর বা ইদগাহ কমিটিও এ ব্যাপারে উদাসীন বলে অভিযোগ।
স্থানীয় ক্রীড়া প্রেমীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই মাঠে ফুটবল এবং ক্রিেকেটের বহু গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট ছাড়াও মহকুমার আন্তঃবিদ্যালয় প্রতিযোগিতা এবং মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত খেলাগুলি হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে মাঠের অবস্থা বেওয়ারিশ পতিত জায়গার মতো। বর্ষার ভিজে মাটিতেও চলছে গাড়ি চালানোর শিক্ষা। কখনও দশ চাকার গাড়িও নেমে পড়ছে মোটর ভেহিকেলস দফতরের চেকিং-এর জন্য। যার ফলে গাড়ির ধাক্কায় গোলপোস্টগুলি হামেশাই ভাঙছে। তবু এই অবস্থাতেই মহকুমাস্তরের খেলা চলছে। অথচ মাঠের দেখভাল নিয়ে প্রশাসনের গা নেই। |
স্থানীয় সূত্রের খবর, মহকুমাশাসকের বাংলোর পিছনে দ্বারকেশ্বর নদ সংলগ্ন জুবিলি পার্ক নামে এই মাঠ তৈরি হয় ১৯৪০ সাল নাগাদ। সবুজে ঘেরা মাঠটির আয়তন ছিল প্রায় ৭০ মিটার লম্বা এবং ৫০ মিটার চওড়া। মাঠের ধারে ছিল অনেক দেবদারু গাছ, ছিল কংক্রিটের কিছু চেয়ারও। খেলাধূলা ছাড়াও সার্কাস, যাত্রা, প্রদর্শনী, রাজনৈতিক সভা সমিতি, বই মেলা-সহ সরকারি বেসরকারি নানারকম মেলা হয় মাঠে। সত্তরের দশকে আরামবাগ পুরকর্তৃপক্ষ বা মহকুমা প্রশাসনের কাছে মাঠের আয়তন বাড়ানোর আর্জি জানায় স্থানীয় ক্লাবগুলি। ১৯৯০ সাল নাগাদ পুরসভা গাছ কেটে, কংক্রিটের চেয়ারগুলি তুলে দিয়ে মাঠের সংস্কার করে। মাঠের আয়তন বেড়ে হয় লম্বায় প্রায় ৯০ মিটার ও চওড়ায় ৭০ মিটারের মতো।
মাঠটির যথাযথ সংস্কার বলতে সেই প্রথম এবং সেই শেষ। তারপর পুরসভা বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকবার গর্ত বুজিয়েছে এবং মাঠের ধারে জল নিকাশি নালা নির্মাণ করেছে। কিন্তু সার্বিক সংস্কার আর হয়নি। আরামবাগের প্রাচীন ক্লাবগুলির অন্যতম বিদ্যুৎ অ্যাথলেটিক ক্লাবের কর্মকর্তা নয়ন তরফদারের অভিযোগ, গত বছর অবধি মাঠটি ব্যবহারের জন্য মহকুমা শাসকের অনুমতি নিলেই হত। এবার ইদগাহ কমিটি এবং পূর্ত দফতর দু’পক্ষই দাবি করছে, মাঠে খেলা বা অনুশীলন করলে তাদের অনুমতি নিতে হবে। এদিকে মাঠটি কেউ সংস্কার করছে না, করতেও দিচ্ছে না। সমস্যা মেটাতে মহকুমা শাসক, বিধায়ক এবং পুরপ্রধানের কাছে বারবার আবেদন করছি। কিন্তু সাড়া মেলেনি।
মহকুমা শাসক অরিন্দম রায় বলেন, “মাঠটির মালিকানা ইদগাহ এবং পূর্ত দফতরের। ইদগাহ কমিটি এবং পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। পুরকর্তৃপক্ষ এবং সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর মাঠ সংস্কারে যাতে উদ্যোগী হয় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।” পুর চেয়ারম্যান গোপাল কচ বলেন, “অতীতে আমরা মাঠ সংস্কার করেছি। ফের সংস্কারের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা করা যেতে পারে।” অন্যদিকে, মাঠের মালিকানার দুই অংশীদারের অন্যতম ইদগা কমিটির সম্পাদক সাজাহান চৌধুরী বলেন, “মাঠের প্রায় ৫০ শতাংশ ইদগার। আমরা চাই মাঠটির উন্নয়ন হোক। যে-ই করুক, আমাদের আপত্তি নেই।”
পূর্ত দফতরের (সাধারণ) সহকারী বাস্তুকার নিরঞ্জন ভড় বলেন, “মাঠের ৫০ শতাংশ পূর্ত দফতরের। ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের কাছে বিষয়টা পরিষ্কার করে জানব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।” |