প্রবন্ধ ২...
স্ট্রোক মানেই সব শেষ নয়
প্রতি বছরের মতো এ বছরও চলে গেল বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। ২৯ অক্টোবর। স্ট্রোক মানেই ভয়াল একটা ব্যাপার। তাই আমরা সচেতন থাকি, কী করে স্ট্রোক আটকানো যায়। কিন্তু স্ট্রোক হয়ে যাওয়ার পর সবাই তো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন না। অনেককেই প্যারালিসিস, কথা জড়িয়ে যাওয়া, হাত-পা কাঁপা এবং এ রকম আরও কিছু নিত্য সমস্যা নিয়ে বাঁচতে হয়। তাঁদের কথা কিন্তু বিশেষ ভাবা হয় না। স্ট্রোক পর্ব শেষ হওয়ার পর যে বিশেষ সাহায্য প্রয়োজন, একটা জোরদার চিকিৎসা ও শুশ্রূষার প্রয়োজন, সে কথা ভাবা হয় না। ইদানীং স্ট্রোকে মৃত্যুর হার অনেকটা কমলেও, স্ট্রোক-পরবর্তী বিবিধ প্রতিবন্ধগুলোর যথাযথ পুনর্বাসন বা ‘রিহ্যাব’ চিকিৎসায় আমরা এখনও অনেকটাই পিছিয়ে।
অথচ, তেমন চিকিৎসা ও শুশ্রূষার যথেষ্ট উপায় আছে। এই ‘রিহ্যাব’ ব্যবস্থা পাশ্চাত্য দেশগুলোতে কয়েক দশক ধরে অনেক উন্নত হয়েছে। তাই স্ট্রোকের পরে জীবনে ছন্দে ফেরার সংখ্যাও বেড়েছে। স্ট্রোক-রিহ্যাব শুধু যে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও পেশাগত প্রতিবন্ধগুলোকে কাটাতে সাহায্য করে তা-ই না, স্ট্রোক-পরবর্তী জীবনে মৃত্যুর সম্ভাবনাও প্রায় ২০ শতাংশ কমিয়ে দেয়।
কিন্তু আমাদের দেশে সমস্যা এখানেই। স্ট্রোকের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রুগিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই চলে ফিজিয়োথেরাপি, স্পিচ থেরাপি। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, এটাই যথেষ্ট নয়। এ জন্য দরকার অনেক মিলিত থেরাপি। যা রিহ্যাব ছাড়া সম্ভব নয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের থেরাপির দরকার হতে পারে। হাতের সূক্ষ্ম কাজ এবং দৈনন্দিন কাজকর্মের সক্ষমতা অর্জন করতে দরকার অকুপেশনাল থেরাপি। কথার অসাড়তা কাটাতে স্পিচ থেরাপি। মানসিক বা আচরণগত জড়তা কাটাতে কগনিটিভ থেরাপি। প্রত্যেকটির জন্য নির্দিষ্ট বিভাগ আছে। স্ট্রোক পরবর্তী জীবনে মানুষকে পেশায় ফিরিয়ে নিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাই ভোকেশনাল কাউন্সেলিং।
রিহ্যাব একটা দলগত প্রক্রিয়া। ঠিক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এই রিহ্যাব টিম তাদের নিজ নিজ বিভাগে কাজ করে। কিন্তু কাজগুলোর জন্য হাসপাতালের পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোর যে পরিকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও সিস্টেম থাকা দরকার, তা সারা ভারতেই অত্যন্ত কম। সমীক্ষা বলছে, প্রায় ২০-৩০ শতাংশ স্ট্রোক রুগিকে হাসপাতালের রিহ্যাব ইউনিটে ভর্তি রেখে দলগত রিহ্যাব চিকিৎসা করা দরকার। কিন্তু সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে এই ধরনের চিকিৎসার পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং স্ট্রোক সম্পর্কে গবেষণারত বিজ্ঞানীদের প্রস্তাব অনুযায়ী, স্ট্রোক রিহ্যাব চালাতে পারেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তার ও থেরাপিস্ট। এ জন্য চাই তাঁদের পারস্পরিক সমন্বয়।
স্ট্রোক হওয়ার প্রথম দু’তিন দিনের মধ্যেই রিহ্যাব প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। আপৎকালীন অবস্থা কেটে গেলে যথাশীঘ্র রিহ্যাব কেন্দ্রগুলিতে স্থানান্তরিত করা উচিত। সাধারণ ভাবে স্ট্রোকের প্রথম ৪০ দিন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম তিন মাসের মধ্যে ঠিকঠাক রিহ্যাব পরিষেবা শুরু হওয়া খুব দরকার। প্রথম ৬ মাস কেটে যাওয়ার পরে রিহ্যাব শুরু করলেও উন্নতির সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে যায়।
স্ট্রোকের ফলে মাথার কিছু কোষ নষ্ট হয়ে যায়। এগুলোকে কখনওই আগের অবস্থায় ফেরানো যায় না। আর তখনই দরকার পড়ে রিহ্যাবের। যেখানে বাইরে থেকে বিভিন্ন উদ্দীপনার সাহায্যে মস্তিষ্কের নষ্ট হয়ে যাওয়া কোষগুলোর আশপাশের ঘুমিয়ে থাকা কোষ, আর সেই সঙ্গে মস্তিষ্কে যে রাসায়নিক বিদ্যুৎতরঙ্গ তৈরি হয় তাকে ফের সক্রিয় করে তোলা হয়। যাতে নতুন কোষগুলো আগের কোষের হারিয়ে যাওয়া কর্মক্ষমতা নিজের দায়িত্বে নিতে পারে। সেটা কিন্তু স্ট্রোকের প্রথম কিছু দিনের মধ্যেই সম্ভব।

ফিজিক্যাল মেডিসিন-এর বিশেষজ্ঞ


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.