সম্পাদকীয় ২...
মলদ্বীপের সংকটে
লদ্বীপে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ঘাত করিতে পুলিশ-প্রশাসন তো মজুত ছিলই, এক্ষণে সে-দেশের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত আগাইয়া আসিয়াছে। কথা ছিল, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ১১ নভেম্বরের আগেই সাঙ্গ করা হইবে, যাহাতে সংবিধান অনুযায়ী ওই দিনই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শপথগ্রহণ করিতে পারেন। কিন্তু কায়েমি স্বার্থচক্র জনপ্রিয় রাজনীতিক, অভ্যুত্থানে গদিচ্যুত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নশিদকে ক্ষমতা হইতে দূরে রাখিতে এতটাই কৃতসঙ্কল্প যে, নানা অজুহাতে তাঁহার পুনর্নির্বাচনের লগ্ন স্থগিত করিয়া চলিয়াছে। ইতিপূর্বে প্রার্থীরা ভোটার-তালিকা মঞ্জুর করেন নাই— এই অক্ষম অজুহাতে দেশের পুলিশ-কর্তারা নির্বাচন কমিশনের সদর-দফতরে হানা দিয়া ব্যালটপত্র বাজেয়াপ্ত করেন। অতঃপর গত শনি ও রবিবার স্থগিত ভোটগ্রহণ সাঙ্গ করার নির্ঘণ্ট বানচাল করিতে অন্তিম লগ্নে সুপ্রিম কোর্ট আসরে অবতীর্ণ হয়। উভয় ক্ষেত্রেই মহম্মদ নশিদ নিশ্চিত জয়ের লক্ষ্যে অগ্রসর হইতেছিলেন আর তাঁহাকে ক্ষমতাচ্যুত করিয়া প্রেসিডেন্ট হওয়া (এবং উপর্যুপরি ভোটগ্রহণে মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া) মহম্মদ ওয়াহিদ উত্তরোত্তর জনপ্রিয়তা হারাইতেছিলেন।
এ ভাবে প্রকাশ্যে অপছন্দের রাজনীতিককে ক্ষমতা হইতে দূরে সরাইয়া রাখার স্বৈরাচার কিন্তু মলদ্বীপকে একনায়কতন্ত্রের অভিমুখেই ঠেলিয়া দিতেছে। সংবিধান অনুযায়ী অচলাবস্থা দেখা দিলে মেয়াদ ফুরাইয়া যাওয়া প্রেসিডেন্ট নয়, পার্লামেন্টের স্পিকারই অন্তর্বর্তী সময়ে একটি তদারকি সরকার চালাইতে পারিতেন। সুপ্রিম কোর্ট সেই সাংবিধানিক বিধানটুকুও লঙ্ঘন করিয়াছে। পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট, নির্বাচন কমিশন—এগুলিই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ রূপে কাজ করার প্রতিষ্ঠান। যদি কোনও দেশে এই প্রতিষ্ঠানগুলির কর্তৃত্ব ও কার্যকারিতা, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা নষ্ট করার চেষ্টা চলে, তবে বুঝিতে হইবে, সেই দেশের নাগরিকরা এখনও গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত নন। যদি তাহা হইতেন, তাহা হইলে, এমন স্বৈরাচারী অনাচারের বিরুদ্ধে তাঁহারা মুখর হইতেন, অবৈধ, অনির্বাচিত, জনপ্রতিনিধিত্বের গ্রহণযোগ্যতা-রহিত রাজনীতিকের পক্ষ অবলম্বন করিয়া নীরব-নিষ্ক্রিয় থাকিতেন না। বাস্তবে তেমন কোনও প্রতিবাদ নজরে পড়িতেছে না, যদিও সর্বশেষ নির্বাচনেও মহম্মদ নশিদ একক ভাবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট অর্জন করেন এবং জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার ভয়ে ওয়াহিদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা পর্যন্ত করেন নাই।
কোনও দেশে গণতন্ত্রের সাফল্য তাই প্রধানত সেই দেশের জনসাধারণের উপর নির্ভর করে। বিশেষত যে দেশের মানুষ তিন দশকেরও অধিক কাল ধরিয়া স্বৈরতন্ত্রের জাঁতাকলে পিষিয়াছেন, গণতন্ত্র ও তাহার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তাঁহারা চোখের মণির মতো রক্ষা করিবেন, ইহাই প্রত্যাশিত। মলদ্বীপে কিন্তু তেমনটা দেখা গেল না। একদা ভারতের সহিত নিবিড় সখ্যের বন্ধনে আবদ্ধ মলদ্বীপ বর্তমানে ভারতকে প্রায় শত্রুরাষ্ট্র বলিয়া গণ্য করে। ধারাবাহিক প্রচারে সেখানে জনসাধারণের মনে ভারতবিরোধী মনোভাব উস্কাইয়া তোলা হইয়াছে। ভারতীয় রাষ্ট্রদূতরাও সে দেশে স্বাগত নন। মহম্মদ নশিদের সমর্থক রূপে ভারতকে চিত্রিত করিয়া যে অপপ্রচার, তাহার পিছনে যে ওয়াহিদ ও তাঁহার গোষ্ঠীর ভূমিকা আছে, তাহা নিশ্চিত। একই সঙ্গে মলদ্বীপকে বেজিংয়ের দিকে টানিবার রকমারি চেষ্টাও চলিয়াছে। নয়াদিল্লিকে তাই অত্যন্ত সতর্কতার সহিত অগ্রসর হইতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.