অর্থাভাবে নাবালিকা মেয়েকে লোকের বাড়ি পরিচারিকার কাজে দিয়েছিলেন মা। সেখানেই গত পাঁচ মাস ধরে নিয়মিত তাঁর সেই ১২ বছরের মেয়েকে গৃহকর্তা ধর্ষণ করেছেন বলে বুধবার সন্ধ্যায় চারু মার্কেট থানায় এফআইআর করেছেন তিনি। থানাতেই তাঁর ও সেই কিশোরীর জবানবন্দির ভিডিও রেকর্ডিং করে রেখেছে পুলিশ। এসএসকেএম হাসপাতালে মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে।
নরেন্দ্রপুর এলাকায় বাড়ি ওই ভদ্রমহিলার। স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে তমলুকে। মেজ মেয়ে খিদিরপুরে দিদিমার কাছে থাকে। অভাবের তাড়নায় ক্লাস ফাইভের পড়া ছাড়িয়ে ছোট মেয়েকে বছরখানেক আগে সুইস পার্ক এলাকার পূর্ণচন্দ্র মিত্র লেনের একটি বাড়িতে কাজে ঢোকান তিনি। কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ওই এলাকারই আর একটি বাড়ির পরিচারিকা দীপালি বাগ।
গত মঙ্গলবার মেয়েটি কোনও ভাবে সুইস পার্কের বাড়ি থেকে পালিয়ে ট্রেনে নরেন্দ্রপুরের বাড়ি পৌঁছয়। তাঁর মা বুধবার তাঁকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় নিয়ে যান। সংস্থার কর্মীরাই মা-মেয়েকে চারু মার্কেট থানায় নিয়ে আসেন।
বুধবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিভাগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার শান্তশ্রী চৌধুরী ও মায়ের সঙ্গে বসেছিল ফ্রক-পরা, রোগাপাতলা সেই ছোট্ট মেয়ে। মেয়েটি নিজেই অভিযোগ করে, নিয়মিত ঘর বন্ধ করে তার সঙ্গে জোর-জবরদস্তি অশালীন আচরণ করতেন ‘দাদাবাবু’।
পুলিশ জানিয়েছে, ৪৮/৩৯ এ পূর্ণচন্দ্র মিত্র স্ট্রিটের ওই বাড়ির একেবারে উপরের তলায় থাকে রুংতা পরিবার। সেখানেই কাজে লেগেছিল মেয়েটি। বাড়ির কর্তা, বছর বত্রিশের অংশু রুংতার একাধিক ব্যবসা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছাড়াও নাবালিকা পরিচারিকা রাখার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যিনি ওই মেয়েটির জন্য এই কাজ জোগাড় করে দিয়েছিলেন, সেই দীপালিদেবী জানিয়েছেন, অংশুর বিরুদ্ধে এর আগের পরিচারিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগও উঠেছিল। তা হলে জেনেশুনে তিনি কেন ওই বাড়িতে বাচ্চা মেয়েটির কাজের ব্যবস্থা করলেন? দীপালি উত্তর দেন, “আমি বুঝিনি যে, এত ছোট মেয়ের সঙ্গেও উনি একই কাজ করবেন!”
এসএসকেএম হাসপাতালে মেয়েটির মা জানান, কালীপুজোর দিন তিনি মেয়ের কাছে গিয়েছিলেন। তখনই মেয়ে তাঁকে সব জানায়। তাঁর কথায়, “সে দিনই মেয়েকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই বাড়ির বাকি লোক, এমনকী রুংতার স্ত্রী-ও তাতে বাধা দেন। দরজা বন্ধ করে আমাকে ধাক্কা মেরে বাড়ি থেকে বার করে দেন ওঁরা। আমি গরিব মানুষ। লেখাপড়া জানি না। থানা-পুলিশ করতে সাহস করিনি। কাঁদতে কাঁদতে তখন চলে আসি। গত মঙ্গলবার মেয়েই পালিয়ে চলে আসে। ও আমাকে জানিয়েছে, সোমবারও দাদাবাবু ওকে ধর্ষণ করেছে।”
|