দেশের আর্থিক হাল শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির উপর কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, এ বার তার প্রমাণ মিলছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের আর্থিক ফলাফলে। বাড়ছে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ, যা টেনে নামাচ্ছে তাদের লাভের অঙ্ককে। এই পরিস্থিতিরই শিকার স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)।
চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে অনুৎপাদক সম্পদ খাতে আর্থিক সংস্থানের বহর বাড়ার জন্যই স্টেট ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা আগের বারের থেকে ৩৫% কমেছে। গত দু’বছরের মধ্যে এতটা কম নিট মুনাফা স্টেট ব্যাঙ্কের হয়নি।
দেশের ব্যাঙ্ক ঋণ এবং আমানতের বাজারের এক চতুর্থাংশ দখলে রয়েছে এসবিআইয়ের। তাই অনুৎপাদক সম্পদ বৃদ্ধির জেরে তার খারাপ আর্থিক ফলাফল দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের বেহাল ছবিটাই তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভাস্কর সেন বলেন, “দেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থার হাল বেশ কিছু দিন থেকেই খারাপ। এর ফলেই যে-সব সংস্থা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিল, তাদের অনেকেই তা পরিশোধ করতে পারেনি। এর জেরেই বেড়েছে ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদন সম্পদ। শুধু স্টেট ব্যাঙ্কই নয়, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের আর্থিক ফলাফলের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে, অনুৎপাদক সম্পদ খাতে আর্থিক সংস্থান করতে গিয়ে অনেক ব্যাঙ্কেরই মুনাফায় টান পড়েছে।”
চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে স্টেট ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা ৩,০৭২.৭৭ কোটি টাকা। আগের বছরের ওই সময়ের থেকে যা ১৫০২.৫৪ কোটি টাকা কম। নিট মুনাফা কমার একমাত্র কারণ, অনুৎপাদক সম্পদ খাতে আর্থিক সংস্থান বাড়ানো। ওই খাতে এ বার স্টেট ব্যাঙ্ক আর্থিক সংস্থান করেছে ২,৬৪৫.৪০ কোটি টাকা। আগের বছরের থেকে যা ৮০৮.২১ কোটি বেশি।
কেন এত বেশি টাকা ওই খাতে সরিয়ে রাখতে হল স্টেট ব্যাঙ্ককে? এক বছরে মোট হিসাবে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ ০.৪৯% বেড়েছে। অর্থাৎ, ২০১২ -’১৩ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের শেষে মোট ঋণের ৫.১৫% ছিল অনুৎপাদক সম্পদ বা অনাদায়ী ঋণ। ২০১৩-’১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৬৪%। সাধারণত, ঋণ দেওয়ার পর টানা ৯০ দিন তার উপর সুদ না-মিললে ওই ঋণ অনুৎপাদক সম্পদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ব্যবসা করে যে-মুনাফা হয়, তার থেকে একটা অঙ্কের টাকা ওই অনুৎপাদক সম্পদ খাতে সরিয়ে রাখতে হয় ব্যাঙ্কগুলিকে। যাকে বলে আর্থিক সংস্থান করা। যে-টাকা আর্থিক সংস্থান হিসাবে বরাদ্দ করা হয়, তা বাদ দিয়ে মুনাফার হিসাব করতে হয়। কারণ, ওই অনাদায়ী ঋণ মূলত আমানতকারীদেরই টাকা। যা ব্যাঙ্ককে পরিশোধ করতে হবে। অনাদায়ী ঋণের ভারে ব্যাঙ্কের আর্থিক হাল খারাপ হলেও আমানতকারীদের টাকা যাতে সুরক্ষিত থাকে, তা নিশ্চিত করতেই আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
তবে স্টেট ব্যাঙ্কের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য স্বস্তির খবর হল, প্রথম ত্রৈমাসিকের থেকে অনুৎপাদক সম্পদ বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করেছে। এর জেরে মুনাফা কমা সত্ত্বেও এই দিন ব্যাঙ্কের শেয়ার দর বেড়েছে। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে স্টেট ব্যাঙ্কের শেয়ার দর আগের দিনের থেকে ১.৩৪% বেড়ে হয়েছে ১৬৯৭.৮৫ টাকা।
স্টেট ব্যাঙ্কের মোট আয়ও আগের বছরের থেকে ৩,২০১.১৬ কোটি টাকা বেড়ে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের শেষে হয়েছে ৫,৩১১৮.৬৩ কোটি। বেড়েছে সুদ বাবদ আয়ও। আগের বারের থেকে ১১.৬৪% বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ১২,২৫১ কোটি। |