মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে আড়াই বছর কাটানোর পরে বুধবার প্রথম বণিক মহলের মঞ্চে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং ঘোষণা করলেন, রাজ্যে লগ্নি টানার লক্ষ্যে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করছে সরকার। এক জানলা ব্যবস্থায় দ্রুত প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়াই হবে ওই টাস্ক ফোর্সের কাজ।
পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয়ের পরে শিল্পায়নে মন দিয়েছেন মমতা। মুম্বই গিয়ে বৈঠক করেছেন মুকেশ অম্বানী-সহ দেশের বেশ কয়েক জন প্রথম সারির শিল্পপতির সঙ্গে। ঘোষণা করেছেন রাজ্যের নতুন শিল্পনীতি। যাতে ঊর্ধ্বসীমার ফাঁসের মতো জমি-জট ছাড়াতে চাওয়ার ইঙ্গিত দেখতে পেয়েছে শিল্প মহল। যদিও জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে শাসক দলের অবস্থান এখনও অনড়ই। তবু শিল্পের প্রতি মমতার মনোভাবের এই পরিবর্তনকে স্বাগতই জানিয়েছেন শিল্পপতিরা। তাঁদের মতে, এ দিন বণিকসভা সিআইআই-এর শিল্প সম্মেলনে (বিজ্ ব্রিজ) মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি যথেষ্ট ইতিবাচক। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরে রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে শিল্প মহলের মুখোমুখি হয়ে লাল ফিতের ফাঁস কাটার অঙ্গীকার করেছিলেন মমতা। এর পর শিল্প স্থাপনের জন্য আবেদনপত্রের বহর কমিয়ে আনা-সহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দীর্ঘসূত্রতা এখন শিল্পপতিদের ক্ষোভের কারণ। এই প্রসঙ্গ মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলনেও উঠেছিল। এ দিন সিআইআই-এর প্রকাশ করা একটি রিপোর্টেও বলা হয়েছে, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি ও বস্ত্রশিল্পের জন্য নিদিষ্ট নীতি তৈরি হয়েছে।
যা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে রাজ্যে ব্যবসা শুরু করার প্রক্রিয়া এখনও যথেষ্ট দীর্ঘ। জমি পাওয়া থেকে শুরু করে পরিবেশের ছাড়পত্র পাওয়া, প্রতিটি ধাপেই সময় লাগে। |
শিল্প মহলের এই অসন্তোষ দূর করতে টাস্ক ফোর্স তৈরির কথা ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “বিনিয়োগের প্রশ্নে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের অপেক্ষা করলে চলবে না। সরকারকে দ্রুত কাজ করতে হবে। আমিও অতিরিক্ত সময় কাজ করি।” মন্ত্রিসভার ছাড়পত্র পাওয়ার পরেও অনেক সময়ে নিচুতলায় ফাইল পড়ে থাকে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস, টাস্ক ফোর্স মন্থরতা কাটানোর চেষ্টা করবে।
বণিকসভার সম্মেলনে আসার আগে নবান্নে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র ও অন্য পদস্থ আমলাদের সঙ্গে টাস্ক ফোর্স গড়ার বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে শিল্পপতিদের সামনে তিনি বলেন, টাস্ক ফোর্সের দায়িত্বে থাকবেন শিল্প দফতরের এক যুগ্মসচিব। এ ছাড়া প্রকল্প সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট দফতরের (যেমন জল, বিদ্যুৎ, অর্থ, পরিবেশ, ভূমি, সেচ, নগরোন্নয়ন ইত্যাদি) প্রতিনিধিরাও থাকবেন। শিল্পমন্ত্রী জানান, রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের ‘শিল্পসাথী’র-ই একটি অংশ হবে এই টাস্ক ফোর্স। দায়িত্বে শিল্প দফতরের এক যুগ্মসচিব। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের কাজ যাতে দ্রুত রূপায়িত হয়, তা নিশ্চিত করাই হবে টাস্ক ফোর্সের কাজ।
টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্তকে এ দিন স্বাগত জানিয়েছে শিল্প মহল। সিআইআই-এর দুই কর্তা সুমিত মজুমদার ও সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, নীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকেই। কিন্তু এ ধরনের উদ্যোগ সেই প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে বলেই তাঁদের আশা।
প্রকল্প রূপায়ণের পথে সরকারের যা করণীয় তা দ্রুত করার আশ্বাস দেওয়ার সঙ্গে লগ্নিকারীদেরও তৎপর হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, প্রকল্পের ছাড়পত্র পাওয়ার পরে বসে না-থেকে দ্রুত তা চালু করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মতে, ছাড়পত্র পাওয়ার পরে অনেকেই প্রকল্পের চরিত্র বদল করতে চান, সে জন্য রূপায়ণের কাজে সময় লাগে। এ ব্যাপারেও লগ্নিকারীদের সতর্ক হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর যে বক্তব্যের রেশ টেনে সিআইআই-এর পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান সুধীর দেওরসের মন্তব্য, “রাজ্য সরকার তার কাজ করছে। এ বার আমাদের পালা।” |