নতুন করে লাল কার্পেট পাতার তোড়জোড়। লক্ষ্য বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির আরও বিনিয়োগ টানা, যাতে লোকসভা নির্বাচনের আগেই দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলা যায়।
অর্থনীতির হাল ফেরাতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছে মনমোহন সরকার। এ বার বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলিকেও ভারতে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করতে চলেছে অর্থ মন্ত্রক। নর্থ ব্লক সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই বিদেশি সংস্থাগুলির জন্য খুশির খবর ঘোষণা হবে। বিদেশি সংস্থাগুলিকে মুদ্রার লেনদেনের বাজারে আরও বেশি যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হবে। কিছু বিষয়ে দেশীয়দের মতোই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বিদেশি সংস্থাগুলিকে। প্রয়োজনে বিদেশি মুদ্রা আইন বা ফেমা-ও সংশোধন
করা হবে। বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি এ দেশে বিনিয়োগ করতে আসার আগে অর্থনীতির হাল-হকিকত সম্পর্কে জানতে চায়। তাদের আশঙ্কা, মনমোহন সরকার রাজকোষ ঘাটতি ও চলতি খাতের লেনদেনের ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দাবি করছেন, রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই থাকবে। এমনকী লেনদেনের ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার থেকেও কম হবে বলে তিনি দাবি করেছেন। অর্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা পার্থসারথি সোমের যুক্তি, “৪.৮ শতাংশের রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সম্ভব। আর্থিক বৃদ্ধির হার ভাল হলে ঘাটতিকেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।”
কিন্তু কী ভাবে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়বে, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। গত কালই প্রকাশিত তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরে শিল্পবৃদ্ধির হার ২ শতাংশেই আটকে ছিল। অথচ মূল্যবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজনের যুক্তি, “এক বার শিল্পে গতি আসলেই আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশে চলে যাবে।” আজ দিল্লিতে বণিকসভা সিআইআই-এর এক সম্মেলনে রঙ্গরাজন বলেন, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে আর্থিক পরিস্থিতি চাঙ্গা হবে। এর পিছনে দু’টি কারণ কাজ করবে। এক, কলকারাখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি। দুই, ভাল বর্ষার হাত ধরে কৃষিতে ভাল ফলন। কারখানার উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই রূপোলি রেখার দেখা মিলছে বলে দাবি রঙ্গরাজনের। সেই ধারা অব্যাহত থাকলে তাঁর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী ৫.৩ শতাংশের বৃদ্ধির হারে পৌঁছনো সম্ভব।
কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনও চিন্তায় রেখেছে মনমোহন সরকারকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য যে প্রকল্প ঘোষণা করেছিল, তা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। মার্কিন ফেডেরাল ব্যাঙ্ক বাজারে নগদ ছাড়া কমিয়ে দেবে, এই আশঙ্কায় শেয়ার বাজারে ধস নেমেছিল। বিদেশি সংস্থাগুলি লগ্নি তুলে নেওয়ায় ডলারের তুলনায় টাকার দাম হু হু করে পড়তে শুরু করে। এখন পরিস্থিতি অনেকটা সামলেছে। কিন্তু আজ হোক বা কাল, মার্কিন ফেডেরাল ব্যাঙ্ক বাজারে নগদ ছাড়া বন্ধ করবেই। তখন কী হবে? চিদম্বরম দাবি করছেন, সকলেই নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। রঙ্গরাজনের বক্তব্য, “আমরা জানি না কবে এটা হবে। কিন্তু আমাদের তৈরি থাকতে হবে। ভাল খবর এটাই চলতি খাতে লেনদেনের ঘাটতি কমে আসছে।” লেনদেনের ঘাটতি মেটাতে হয় বিদেশি মুদ্রা দিয়ে। রঙ্গরাজনের বক্তব্য, ওই ঘাটতির হার যদি ৩ শতাংশের কম থাকে, তা হলেই বিদেশি বিনিয়োগ থেকে পাওয়া মুদ্রা গিয়ে সেই ঘাটতি মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। আর অর্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা পার্থসারথিবাবু মনে করছেন, চিন যতটা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সঙ্গে এক সুতোয় বাঁধা, ভারত ততটা নয়। তা হলেও মার্কিন অর্থনীতির ধাক্কা ভারতে কিছুটা লাগবেই।
সেই কারণেই বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির জন্য লাল কার্পেট পেতে যতটা সম্ভব বিদেশি বিনিয়োগ টেনে রাখতে চাইছে সরকার। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি মূলধনী লাভের উপর করে ছাড় চেয়ে আসছে। আগামী বছরের বাজেটে তেমন কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। |