বাকি বাংলা যখন উৎসব মরসুম শেষের পর নিত্যদিনের কাজে মন বসানোর চেষ্টা করছে, তখনই অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হয়ে গিয়েছে কাটোয়া ও দাঁইহাটে। কার্তিক লড়াই ও রাস উৎসবে মাততে প্রস্তুত এই দুই প্রতিবেশী শহর।
পাশাপাশি দুই শহরের পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে এখন ব্যস্ততা চরমে। কোথাও প্রতিমাতে শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে, আবার কোথাও চাঁদার বই নিয়ে ঘুরছে ছেলে-ছোকরার দল। কাটোয়া মেতে উঠছে ‘কার্তিক লড়াই’কে ঘিরে। পাশের ছোট্ট শহর দাঁইহাট ব্যস্ত রাস উৎসব নিয়ে। এই দুই শহরের বাসিন্দারা এখন দিন রাত এক করে পরিশ্রম করছেন তাঁদের প্রিয় উৎসবকে সফল করার জন্য।
তবে, উৎসবের প্রাক মুহূর্তে রাস্তা আটকে চাঁদা তোলায় অভিযোগ আসছে দুই শহর থেকেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাটোয়া শহরের কারবালাতলা মোড় থেকে বারোয়ারিতলা হয়ে পানুহাট যাওয়ার রাস্তা এবং লেনিন সরণী থেকে চাউল পট্টির রাস্তায় গাড়ি আটকে চাঁদা তোলার প্রবণতা বেশি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঘোষহাটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দফতরের কুড়ি মিটার দূরে গাড়ি আটকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। কিন্তু সব জেনেও পুলিশ চুপ। দাঁইহাটে সমস্ত রাস্তাতেই চোখে পড়ছে গাড়ি আটকে চাঁদা তোলার দৃশ্য। এর ফলে রাস্তায় যানজটও হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, জোর করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। |
দুর্গাপুজো কিংবা কালীপুজো নয়, কাটোয়ার প্রধান উৎসব হল কার্তিক। তেমনই দাঁইহাটে প্রধান উৎসব রাসযাত্রা। এ বছর সামনের শনিবার ও রবিবার কাটোয়াতে হবে কার্তিক লড়াই। রবিবার ও সোমবার দাঁইহাটে রাস। এ বছর পরপর দু’দিন পাশাপাশি দুটি শহরে কার্তিক ও রাসের শোভাযাত্রা নিয়ে চিন্তিত কাটোয়ার পুলিশ প্রশাসন। কারণ, শোভাযাত্রাগুলিতে ব্যাপক ভিড় হয় কিন্তু শোভাযাত্রার রাস্তাগুলি সরু। শোভাযাত্রাকে ঘিরে দুটি শহরেই এর আগে ছোট গোলমালের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সরু রাস্তার ভিড় সামলে পুলিশ ঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। সে কারণে পুলিশ মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর যে রাস্তা দিয়ে শোভাযাত্রা যাবে, সেগুলির বিভিন্ন মোড়ে ছোট ছোট ক্যাম্প করা হবে। এই ব্যাপারে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, স্কাউট ও গাইডদের এর সাহায্য নেওয়া হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কাটোয়া ও দাঁইহাটে দুর্গাপুজোর মধ্যে দিয়ে উৎসব মরসুমের শুরু হয় মাত্র। দুর্গাপুজোর থেকেও এই দুই শহরের স্থানীয় অর্থনীতি অনেক বেশি নির্ভর করে কার্তিক পুজো ও রাস উৎসবের উপর। এই সময় শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আত্মীয়স্বজন আসেন। শহরের হোটেল, লজ, অতিথি আবাসে উপচে পড়ে পর্যটকদের ভিড়। কাটোয়া মহকুমা ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন নেতা সুশীল সরকার ও কাটোয়া মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র বিদ্যুৎ নন্দী জানান, ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশের কাছে এখন ভরা মরসুম।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পুজো উদ্যোক্তাদের থেকে জানা গিয়েছে, কাটোয়া শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে একশোর বেশি কার্তিক পুজো হয়। এর মধ্যে প্রায় ৮৫টি পুজো ‘কার্তিক লড়াই’তে যোগ দেয়। দাঁইহাটের রাস উৎসবে ৭২টি পুজোর মধ্যে ৫২টি পুজো শোভাযাত্রাতে যোগ দেয়।
উৎসব ভাল কাটুক, শান্তিতে কাটুক, দুই প্রতিবেশী শহরের বাসিন্দাদের মিলিত প্রার্থনা এখন এটাই। |