ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় হস্টেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করল তাঁর পরিবার।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (ইউআইটি) ইলেকট্রনিক্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সোমনাথ গুছাইতকে (২১) মঙ্গলবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে জানানো হয়। পুলিশ জানায়, কী ভাবে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে, তা ময়না-তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মৃতের কাকা সুনীল গুছাইত হস্টেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেছেন। তদন্ত চলছে।”
হাওড়ায় জগাছার নন্দীপাড়ায় বাড়ি সোমনাথের। তাঁর কাকা সুনীলবাবুর দাবি, হস্টেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হস্টেলের সামনে বসে থাকার সময়ে সোমনাথ অসুস্থ হন। অথচ, কয়েক জন আবাসিক তাঁকে জানিয়েছেন, হস্টেলের ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সোমনাথ। খবর পেয়েও হস্টেল সুপার পৌঁছন দেড় ঘণ্টা পরে। ছাত্রেরাই সোমনাথকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সুনীলবাবুর প্রশ্ন, “হস্টেল সুপার মহম্মদ ফারুক কেন দায়িত্ব পালনে উদাসীন থাকলেন?” তাঁর আরও দাবি, “কিছু ছাত্র আমাকে জানিয়েছেন, নেশা করতে গিয়েই আমার ভাইপো মারা গিয়েছে। হস্টেল সুপারও তাই বলছেন। আমার প্রশ্ন, যদি নেশার জন্যই এমন ঘটে তবে তিনি কেন আগে বা অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলেন না?” |
ইউআইটি-র ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি দীপক পাত্র, অর্ণব মণ্ডলদের আবার দাবি, “খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সোমনাথ তীব্র গন্ধযুক্ত আঠার নেশা করতেন। তাঁর রুমমেটরা ওই সন্ধ্যায় বাইরে বেরোন। ফিরে তাঁরা দেখেন, ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। দরজা ভেঙে ঢুকে তাঁরা দেখেন, মুখ থুবড়ে পড়ে সোমনাথ। তাঁর মুখের কাছে একটি প্লাস্টিকের প্যাকেট ছিল। তাতেই আঠা ভরা ছিল বলে অনুমান ওই ছাত্রদের।”
নেশা করে সোমনাথের মৃত্যু হয়েছে, এ কথা পরিজনেরা মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, মেধাবী এই ছাত্র আগে হস্টেলে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। সে কারণে সোমনাথকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। মৃতের জামাইবাবু পলাশ মণ্ডল বলেন, “মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ১৩ মিনিটে শেষ বার বাড়িতে ফোন করে সোমনাথ। তার কথায় কোনও জড়তার ছাপ ছিল না বলে জেনেছি। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরেই কলেজ থেকে ফোন করে জানানো হয়, সোমনাথ মারা গিয়েছে।” পলাশবাবুর প্রশ্ন, “কী এমন ঘটল যে এই সময়ের মধ্যে একটি তরতাজা যুবকের মৃত্যু হল?”
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সোমনাথের কয়েক জন সহপাঠীও বুধবার অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষ হস্টেলের কোনও খোঁজ রাখেন না। চারদিকে জঙ্গল, প্রায়ই সাপ ঢুকে পড়ে। বারবার অভিযোগ করেও ফল মেলে না। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার সুযোগেই হস্টেলে নানা ধরনের নেশা চলে বলে তাঁদের দাবি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সন্তু ঘোষ বলেন, “ছাত্রমৃত্যুর তদন্ত চেয়ে উপাচার্যের কাছে একটি কমিটি নিয়োগের দাবি করেছি।”
ইউআইটি-র অধ্যক্ষ বিভাস প্রামাণিক বলেন, “শুনেছি, নেশাগ্রস্ত হয়ে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তবে ও যে নেশা করত, তা আগে জানলে ব্যবস্থা নেওয়া হত। নেশা ও র্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িত থাকায় আগে এক বছরের মধ্যে ২৫ জনকে আমরা বহিষ্কার করেছি।” তাঁর দাবি, ছাত্রেরা নেশা করছেন কি না, সে ব্যাপারে তাঁদের বাড়ির লোকজনকেও সচেতন থাকতে হবে। হস্টেলের ব্যাপারে উদাসীনতার অভিযোগ মানেননি সুপার মহম্মদ ফারুক। তবে ঘটনার খবর পাওয়ার কতক্ষণ পরে তিনি হস্টেলে যান, তা বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “ছ’মাস আগে হস্টেলগুলিতে নানা রকম নেশা করছে খবর পেয়ে কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কে কোথায় লুকিয়ে নেশা করছে, সব খবর তো পাই না। এই ঘটনা আমাদের সচেতন করল। আগামী দিনে এ বিষয়ে আরও কঠোর হব।” |