বিগত কয়েক বছরে শহরে যানবাহন বেড়েছে কয়েকগুণ। অথচ সিটি সেন্টারের সঙ্গে দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর সংযোগকারী প্রধান রাস্তা চওড়া করার ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। ফলে মৌলানা আজাদ থেকে ভগৎ সিংহ মোড় পর্যন্ত ওই রাস্তায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, পূর্বতন বাম বোর্ড রাস্তাটি চওড়া করার প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছিল। তৃণমূল দায়িত্ব নেওয়ার পরেও সেই দশা বদলায়নি। তাঁরা জানান, বিভিন্ন সরকারি দফতর, আদালত, মহকুমাশাসকের কার্যালয়, আয়কর দফতর, জীবন বীমা কার্যালয় থেকে শুরু করে একাধিক শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স সবই সিটি সেন্টারে। ফলে ইস্পাত নগরীর বাসিন্দাদের নিত্য যাতায়াত ওই রাস্তায়। যানবাহনের ভিড়ও লেগেই থাকে। এর মধ্যে ভগৎ সিংহ মোড় থেকে কবিগুরু মোড় পর্যন্ত গাড়ির ভিড় আরও বেশি। কারণ এই অংশে আরও দুটি রাস্তা যোগ হয়েছে। একটি এসেছে সিএমইআরআই কলোনির পাশ দিয়ে। অন্যটি সিটি সেন্টার থেকে সৃজনী প্রেক্ষাগৃহের পাশ দিয়ে এসে যোগ হয়েছে কবিগুরু মোড়ে। এছাড়া এই রাস্তা দিয়েই এ জোন, বি জোন, সেপকো হয়ে প্রান্তিকায় যাওয়া মিনিবাসগুলিও যায়। |
এই রাস্তাই চওড়া করার দাবি উঠেছে। দুর্গাপুরের কবিগুরু এলাকায় বিকাশ মশানের তোলা ছবি। |
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহু দিন সংস্কার না হওয়ায় ছোটখাটো খানাখন্দে রাস্তাটি ভরে গিয়েছে। সন্ধ্যার পরে ওই রাস্তা ধরে যাওয়া রীতিমতো ঝুঁকির। গত এক বছরে ওই রাস্তায় অন্তত চারটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে অবিলম্বে রাস্তাটি সংস্কার ও চওড়া করার দাবি তুলেছেন শহরবাসী। ইস্পাত নগরীর বাসিন্দাদের যেমন সিটি সেন্টারে যেতে হয় তেমনই সিটি সেন্টারের বাসিন্দাদেরও যেতে হয় ইস্পাত নগরীতে। ইস্পাতনগরীর এ জোনের বাসিন্দা দেবাশিস রায়চৌধুরী, বি জোনের বাবলু বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুরাধা সরকাররা বলেন, “ওই রাস্তাটি চওড়া করা দরকার। ভাল হয় দুই লেনের করা গেলে।” সিটি সেন্টারের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা বসু, বিকাশ সিংহ’রা বলেন, “সাইকেল নিয়েও অনেকে ওই রাস্তা ধরে যাতায়াত করেন। ফলে দুই লেনের পরে যদি ফুটপাথও বানিয়ে দেওয়া যায় তাহলে ভাল হয়।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর দেড়েক আগে তৃণমূলের বোর্ড পুরসভায় ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু নতুন বোর্ড শহরের বর্তমান রাস্তাগুলির সংস্কার না করায় অধিকাংশ রাস্তায় চলাচল দায় হয়ে উঠেছে। বাম পরিচালিত পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “পুজোর আগে শহরের সব রাস্তা সংস্কার করার রীতি ছিল। এবার তা নজরে আসেনি। ফলে রাস্তার হাল নিয়ে অভিযোগ উঠছে।” মেয়র পারিষদ (পূর্ত) প্রভাত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দ্রুত রাস্তা সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
বাসিন্দাদের দাবি, আগের বাম পরিচালিত পুরবোর্ড বাসিন্দাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সিটি সেন্টার থেকে ভগৎ সিংহ মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি চওড়া করার পরিকল্পনার রয়েছে তাদের। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিপ্রেন্দুবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, স্থানীয় সিপিএম সাংসদ সাইদুল হকের সাংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রশাসন ৫০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে। সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুর্গাপুর পুরসভাকেই। সাংসদ বলেন, “আপাতত ভগৎ সিংহ মোড় থেকে মৌলানা আজাদ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ও চওড়া করার কাজ অনুমোদিত হয়েছে। রাস্তাটি চওড়া হলে শহরবাসী উপকৃত হবেন। আশা করি পুরসভার সহযোগিতা পাব।” কিন্তু কাজ শুরু হবে কবে? পুরসভার মেয়র পারিষদ প্রভাতবাবু জানান, এখনও প্রশাসনের তরফে কোনও চিঠি তাঁর হাতে এসে পৌঁছায়নি। চিঠি এলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানান তিনি। |