স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাপে-কাটার প্রতিষেধক (অ্যান্টিভেনম সিরাম বা এভিএস) মজুত ছিল। কিন্তু, রোগিণীকে তা না দিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দিয়েছিলেন সোনামুখীর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ)। পরে ওই রোগিণীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বিএমওএইচের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে মৃতার পরিবার।
সোনামুখী গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে নেতাজিনগরে বাড়ি কামরুন্নেসা বেগমের (৫৬)। তাঁর ছেলে, পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ামুল খান জানান, গত ৩ নভেম্বর রাতে তাঁর মায়ের ডান পায়ের গোড়ালিতে সাপ ছোবল মারে। মিনিট দশেকের মধ্যেই কামরুন্নেসাকে তাঁরা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেই সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছিলেন বিএমওএইচ প্রতাপ চট্টোপাধ্যায়। নিয়ামুলের অভিযোগ, “বিএমওএইচ ভাল করে পরীক্ষা না করেই একটি টিটেনাস ইঞ্জেকশন দিয়ে ও ব্যথার ট্যাবলেট খাইয়ে মাকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে রেফার করে দেন। আমরা তাঁকে বারবার এভিএস দিতে বলা সত্ত্বেও তিনি রাজি হননি। ৫৫ কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়া শহরে নিয়ে যেতে যেতেই মায়ের অবস্থার অবনতি হয়। মেডিক্যালে ডায়ালিসিস করেও মাকে বাঁচানো যায়নি। ৬ নভেম্বর মা মারা যায়।”
নিয়ামুলের দাবি, সোনামুখীর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই এভিএস দেওয়া হলে তাঁর মাকে হয়তো বাঁচানো যেত। মঙ্গলবার তিনি বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে বিএমওএইচের শাস্তি চেয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরেশ দাস বলেন, “বিএমওএইচের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের তদন্ত করে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ প্রতাপবাবুর দাবি, “ওই প্রৌঢ়াকে বিষাক্ত সাপে ছোবল মেরেছিল বলে মনে হয়নি। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তও ছিল না। বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসার ভাল পরিকাঠামো থাকায় তাঁকে প্রাথমিক কিছু ওষুধ দিয়ে সেখানে পাঠিয়ে দিই। পরে বাঁকুড়া মেডিক্যালে তাঁকেদেখেও এসেছিলাম।”
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু অবশ্য বলেন, “সাপে কাটা রোগীকে আগে এভিএস দেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, খোঁজ নিতে হবে।” স্টেট স্নেকবাইট ম্যানেজমেন্টের বিশেষজ্ঞ তথা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদারের মতে, “ওই রোগিণীকে প্রথমেই স্থানান্তর না করে পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত ছিল। তার পর লক্ষণ দেখে এভিএস দেওয়া প্রয়োজন কি না, সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।” রাজ্যের অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের সাপে-কাটা রোগীর চিকিৎসা করার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ থাকলে এই ধরনের রোগীকে বাঁচানো সহজ হবে বলেও তিনি মনে করেন। |