অস্বাস্থ্যকর খুপরি ঘরে চলে থানার কাজ |
জমি পড়ে, ভবন না হওয়ায় ক্ষোভ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শামুকতলা |
পঞ্চায়েত অফিসের পুরনো কাঠের কয়েকটি ছোট খুপরি ঘর। সারা ঘরে চাল চুঁইয়ে জল পড়ে। শৌচাগারের যাওয়ার রাস্তায় পড়ে থাকছে নোংরা। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। গত ১১ বছর ধরে ঠাসাঠাসি করে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে শামুকতলা থানা। অথচ, স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য শামুকতলা সকরেটোলা এলাকায় সাড়ে ছয় বিঘা জমি নির্দিষ্ট করে থানার সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে। এর পরেও জলপাইগুড়ি জেলার অসম ও ভূটান সীমান্তে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ থানার স্থায়ী ভবন এমনই। |
শামুকতলা থানার প্রস্তাবিত জমি। |
শামুকতলা থানার পুলিশকর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে যে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এগারো বছর আগে জঙ্গি অধ্যুষিত প্রত্যন্ত এলাকা শামুকতলায় পূর্ণাঙ্গ থানা স্থাপন হয়। থানা স্থাপনের জন্য প্রায় ছ’বিঘা জমিও নির্দিষ্ট করা হয়। সে জমি থানার নামে হস্তান্তরও করা হয়। কয়েক দফায় পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করেন। তার পরেও থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা কাজ শুরু করার দাবি তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে ফ্যাক্স পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাসিন্দার জানান, শামুকতলা থানার অধীন কুমারগ্রামের রায়ডাক, তুরতুরিখণ্ড, হাতিপোতা, চুনিয়া, ফাস খোয়া, জয়ন্তী এবং আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকে ভাটিবাড়ি, শামুকতলা, মাঝের ডাবরি, টটপাড়া ও পারোকাটার মতো জনবহুল এলাকা। ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ ১১টি বাগানের বেশ কিছু প্রত্যন্ত দুর্গম জনপদ রয়েছে। শামুকতলা থানা এলাকা এমনিতেই জঙ্গি উপদ্রুত। এর উপরে এলাকায় চুরি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে। সক্রিয় হয়ে উঠছে আন্তঃরাজ্য মোটরবাইক চোরাই চক্র, নারীপাচার চক্র। তাই এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, অবিলম্বে শামুকতলা থানার ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হোক। এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন এলাকার রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনগুলিও।
আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “শামুকতলা থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য জমির ম্যাপ-সহ সমস্ত কাগজ রাজ্য সরকারের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশ এলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।” |
পঞ্চায়েত অফিসের পুরনো কয়েকটি ঘরে চলে কাজ। |
শামুকতলা নাগরিক মঞ্চের তরফে সভাপতি অমরশঙ্কর সান্যাল বলেন, “এই পরিবেশে অন্তত কোনও থানার কাজ চলতে পারে না। আমরা চাই, দ্রুত স্থায়ী ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হোক।” সিপিএমের আলিপুদুয়ার ২ জোনাল কমিটির সদস্য অসীম সরকার ও আরএসপির সম্পাদক গুরুদাস ভৌমিক বলেন, “যে ভাবে পর পর চুরি, নারী নির্যাতন এবং অসামাজিক কাজ হচ্ছে, এই পরিবেশে থেকে পুলিশের কাজ করা সত্যি কঠিন। শামুকতলা থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণ করা জরুরি।” আলিপুরদুয়ার ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি কাজল দত্ত বলেন, “কাজের পরিবেশ ভাল হলে কাজও ভাল হয়। থানার স্থায়ী ভবন দ্রুত যাতে শুরু হয়, সে বিষয়ে প্রসাশনিক স্তরে যোগাযোগ রাখছি।”
|