পাচারকারী ধরতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ |
সীমান্তের চোরাকারবারীদের খোঁজে তল্লাশি চালাতে গিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের আক্রমণের মুখে পড়তে হল পুলিশকে। হামলার সময়ে পাথর-ঢিল ছোড়া তো বটেই, পুলিশের দু’টি গাড়িও ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় কর্তব্যরত ওই পুলিশ কর্মীরা প্রায় ১০ রাউন্ড শূন্যে গুলি চালান বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। গত সোমবার ভোরে ভারত-নেপাল সীমান্তের দার্জিলিং জেলা পুলিশের নকশালবাড়ি থানার তারাবাড়ির নয়াবস্তিতে ঘটনাটি ঘটেছে। যদিও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এমনকী, ঘটনার পর এলাকায় কয়েকশো মহিলা, পুরুষ থানায় গিয়ে বিক্ষোভও দেখান। পরে তাঁদের বুঝিয়ে শুনিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, সীমান্তের চোরাকারবার নিয়ে সম্প্রতি দার্জিলিং জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের কাছে কিছু অভিযোগ যায়। বিষয়গুলি দেখার পরে দার্জিলিং সদর থেকে একজন রিজার্ভ ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে ১৪ জন কমব্যাট ফোর্সের জওয়ানকে নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করে এলাকায় পাঠানো নয়। গভীর রাতে দলটি নকশালবাড়ি পৌঁছে তারাবাড়িতে অভিযান শুরু করে। বিষয়টি সীমান্তের নকশালবাড়ি কিংবা খড়িবাড়ি থানার অফিসারেরা জানতেন না বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি। না। ভোর সাড়ে ৪টা নাগাদ গোলমালের খবর পৌঁছায় দার্জিলিং সদরে। সেখান থেকে খবর পাঠানোর পরে লাগোয়া বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশ কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে কেউ আহত হননি। সুনির্দিষ্টভাবে মামলাও করা হয়।
নকশালবাড়ি থানার ওসি দীপাঞ্জন দাস কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “তারাবাড়ির ওই এলাকায় চোরাচালানের পণ্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে খবর ছিল। জেলা সদর থেকে একটি বিশেষ দল তৈরি করে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু এলাকার একাংশ বাসিন্দা পুলিশকর্মীদের আক্রমণ করে। তাদের দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে আটকে রাখা হয়। দু’জনকে ধরে কিছু মালপত্র উদ্ধার হয়। গুলি চালানো হয়নি।”
এলাকায় বাসিন্দাদের অভিযোগ, “রাতের অন্ধকারে সাদা পোশাকের ওই পুলিশ কর্মীরা অভিযান শুরু করে। এমনকী, যে দুটি গাড়িতে করে পুলিশ কর্মীরা এসেছিল সেগুলির গায়েও পুলিশ লেখা ছিল না। পাশাপাশি, রাতের বেলায় বাড়ি বাড়ি ঢুকে মহিলাদেরও হেনস্থা করা হয়। দলটিতে কোনও মহিলা পুলিশ কর্মী ছিল না। বাসিন্দারা রুখে দাঁড়ালে পুলিশ শূন্যে গুলিও চালায়। এলাকার কয়েকটি বাড়িতে গুলির চিহ্নও রয়েছে। ক্ষোভের জেরে একাংশ বাসিন্দা পুলিশের উপর হামলা চালায়।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মাধ্যক্ষ পৃথ্বীশ রায় বলেন, “পুলিশ ওই এলাকায় গুলি চালিয়েছ বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। দুটি গাড়ি ভাঙচুর হয়। মহিলা পুলিশ না নিয়ে অভিযান চালানোয় গোলমাল হয়েছে।”
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, নকশালবাড়ি বাজার থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে তারাবাড়ি এলাকায়। একেবারে নেপাল সীমান্ত ঘেঁষা এলাকাটিতে অনেক সময়ই চোরা কারবারের মালপত্র এনে মজুত করা হয় বলে অভিযোগ। এলাকায় একাংশ মহিলা এবং পুরুষ ওই মালপত্র শিলিগুড়িতে নিয়ে বিভিন্ন নির্দিষ্ট দোকানে তা সরবরাহ করেন। মূলত জ্যাকেট, সোয়েটার-সহ নানা শীতবস্ত্র, চটি-জুতো, ক্যামেরা, ইমারজেন্সি লাইট এবং প্রসাধনী সামগ্রী চোরাপথে নেপাল থেকে এনে আনা হয়। সীমান্তে মোতায়েন সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) এবং পুলিশ মাঝেমধ্যেই এলাকায় অভিযান চালায়।
সোমবার ভোরের ঘটনার খবর পৌঁছেছে ভারত-নেপাল সীমান্তে মোতায়েন এসএসবি-র রাণীডাঙার সদর দফতরেও। এসএসবি-র রাণিডাঙার এক শীর্ষ কর্তা জানান, নয়বস্তিতে পুলিশের উপর আক্রমণ হয়েছে। সীমান্তে কয়েক রাউন্ড গুলিও চালানো হয়েছে বলে এসএসবি-র কাছেও খবর পৌঁছেছে। |