চা বাগানের জন্য ১০০ কোটি দাবি রাজ্যের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
রাজ্যের চা বাগিচার শ্রমিকদের নানা পরিকাঠামোগত ব্যবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকার সাহায্য চেয়েছে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে এই কথা জানিয়েছেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। ওই টাকা নানা সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিক কল্যাণে ব্যবহার করা হবে বলে শ্রমমন্ত্রী জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, “রাজ্যের ২৭৮টি চা বাগানগুলির মধ্যে প্রায় ২৫টি বাগান রুগ্ন। ছ’টি বাগান বন্ধ। যেগুলি চালু রয়েছে সেখানেও শ্রমিকদের পানীয় জল, বিদ্যুৎ-সহ নানা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সেগুলির সমাধান করা দরকার। আমরা সম্প্রতি কেন্দ্রের কাছে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে দরবার করা হচ্ছে।”
গত সোমবার ডুর্য়াসে গিয়ে বন্ধ রেডব্যাঙ্ক গ্রুপের বাগানগুলি-সহ সমস্ত বাগানের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন শ্রমমন্ত্রী। সেখানে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব’ও উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনিক সূত্রের খবব, টি প্ল্যান্টেশন অ্যাক্ট মানা, শ্রমিক দুর্দশা, মালিকপক্ষের বাগান ছেড়ে চলে যাওয়া, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়গুলি সেখানে আলোচনা করা হয়। চা বাগিচাগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে শ্রম দফতরের তরফে একটি সমীক্ষাও করা হয়েছে। বর্তমানে সমীক্ষার বিস্তারিত রিপোর্ট হচ্ছে।
শ্রমমন্ত্রী বলেন, “গত তিন দশকে বাগানগুলির ঠিক কী অবস্থা তা নিয়ে কোনও সমীক্ষা করা হয়নি। আমরা ক্ষমতায় আসার পরেই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সমীক্ষার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তা শেষ হলেই পুরো ছবিটা পরিস্কার হয়ে যাবে। তার পরে তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার, চা পর্ষদ সকলের সঙ্গে কথা বলা হবে। এর মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি অন্যতম।” তিনি জানান, গত তিন বছরে চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ৬৭ টাকা থেকে ৯৫ টাকা হয়েছে। তা তা খুবই কম। আগামী ২০১৪ সালের মজুরি নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার মাথায় রাখবে। পাশাপাশি, চা বাগানের আগাছা পরিস্কার, নতুন গাছ লাগানোর কাজ যাতে ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে করা হয় তা দেখা হচ্ছে।
বর্তমানে ডুয়ার্সের ঢেকলাপাড়া, নিদাম, দলসিংহপাড়া এবং রেডব্যাঙ্ক গ্রুপের তিনটি বাগান-সহ মোট ৬টি বাগান বন্ধ রয়েছে। সেগুলি দ্রুত খোলার জন্য সরকার চেষ্টা করছে বলে শ্রমমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন। তিনি জানান, জেলাস্তরে শ্রম দফতরের তরফে বৈঠক হচ্ছে। তাতে কাজ না হলে রাজ্যস্তরে মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হবে। আইন মেনে মালিকেরা যাতে কাজকর্ম করেন তা অবশ্যই সরকার দেখবে। আমরা কোনও মালিক গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধে যেতে চাই না। তবে প্রয়োজন হলে অবশ্যই আইনের রাস্তায় হাঁটব। আর বন্ধ চা বাগানগুলিতে রেশন, চিকিৎসা, পানীয় জল এবং বিদ্যুতের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে দেখা হচ্ছে। এরজন্য একটি মনিটারিং কমিটিও গড়া হয়েছে। আর এই ব্যাপারে শ্রম, খাদ্য, শিল্প এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সমন্বয় করে কাজ করছে।
বন্ধ চা বাগানের অনাহারে মৃত্যুর বিষয়টি অবশ্য মানতে চাননি শ্রমমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “এটা অনাহারে মৃত্যু নয়। দীর্ঘদিন ধরে সঠিক পুষ্টিকর খাওয়ার অভাব, চিকিৎসার দীর্ঘদিনের অভাবে ঘটনাগুলি ঘটছে। আমরা আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছে, কোথাও এই ধরণের সমস্যার কথা শুনেই দ্রুত রেশনের ব্যবস্থা করতে।” একাংশ শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মালিকপক্ষের যোগসাজশেও শ্রমিকেরা অনেক সময় নানা বিষয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে শ্রমমন্ত্রী এদিন অভিযোগ করেছেন। তবে সুনির্দিষ্টকরে তিনি কোনও সংগঠন বা বাগানের কথা বলেননি। এদিন শিলিগুড়ির দুই মাইল এলাকায় পরিবহণ শ্রমিকদের রাতে থাকার জন্য ২০ শয্যার ভবনের উদ্বোধন করেছেন শ্রমমন্ত্রী। |