গোটা রাজ্যে আগামী এক মাসের মধ্যে গ্রামীণ সড়ক যোজনার কাজ চালু হয়ে যাবে। মঙ্গলবার ইলামবাজারে বীরভূম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা জানান।
অভিনব উপায়ে এই কাজের সূচনা করার পরিকল্পনা আছে মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি জানান, এক মাসের মধ্যে একটি দিন ঠিক করা হবে। সে-দিন রাজ্যের সব জেলার সব গ্রামে একই সময়ে একটি করে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হবে। তিনি নিজেও কোনও একটি রাস্তা তৈরির কাজে হাত লাগিয়ে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। সেটা নিছক ফিতে কাটা নয়। তিনি নিজের হাতে রাস্তার ইট পাততে চান। কোন দিন ওই কাজের সূচনা হবে, তা পরে ঠিক করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিনের বৈঠকে জানান, ওই সব রাস্তাকে গ্রামের কৃষিজমির সঙ্গে যুক্ত করা হবে। গ্রামীণ সড়ক যোজনার এই কাজ ধারাবাহিক ভাবে চালু থাকবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে হাজির বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলছিলেন মমতা। তারই মধ্যে সকলের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ঠিকাদারদের স্বার্থ দেখা আমাদের কাজ নয়। আমার সরকার ঠিকাদারের সরকার নয়। জেলা থেকে ব্লক স্তর পর্যন্ত সরকারি যে-কোনও প্রকল্পের কাজ করতে হবে সমন্বয়ের ভিত্তিতে। আমরা সাধারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। কোন ঠিকাদার কাজ পেলেন আর কে পেলেন না, তার জন্য কাজ যেন না-আটকায়।”
বিপিএল কার্ড দেওয়ার প্রসঙ্গটিও ওঠে এ দিনের বৈঠকে। দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষদের বিপিএল কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে জন্ম-তারিখের শংসাপত্র বাধ্যতামূলক করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর যুক্তি, গ্রামাঞ্চলে এখনও বহু মহিলার বাড়িতেই প্রসব হয়। সব মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রসব করানোর মতো বাস্তব পরিস্থিতি নেই। এই অবস্থায় যত দিন না সেটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে, তত দিন বিপিএল কার্ডের ক্ষেত্রে জন্ম-তারিখের শংসাপত্র বাধ্যতামূলক করাটা ঠিক হবে না।
তা হলে বিকল্প কী হবে, তারও সূত্র দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, “এলাকায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর নিন। ওই পরিবার সম্পর্কে পাড়ার লোকেদের সঙ্গে কথা বলুন। পরিবারের লোকেদের ভোটার পরিচয়পত্র আছে কি না, জানতে চান। এবং এ-সবের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হলে বিপিএল কার্ড দিয়ে দিন।”
বৈঠকে এ প্রসঙ্গেই বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে কথা হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য বিশেষত যে-সব এপিএল (দারিদ্রসীমার উপরে থাকা) পরিবার আবেদন করেছে, তাদের দ্রুত সংযোগ দিতে হবে। এই কাজে অগ্রগতি কেমন হচ্ছে, দু’মাস অন্তর তা ‘মনিটর’ অর্থাৎ খতিয়ান নেওয়ার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বীরভূমের সিউড়ি, নলহাটির মতো এলাকায় ১০০ দিনের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করেন মমতা। ওই সব এলাকায় ‘বিশেষ শিবির’ করে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনোর নির্দেশ দেন তিনি। |