আর ৫ দিন
উৎসবের আবহে বিতর্ক উস্কে দিলেন বোর্ডকর্তা
‘সৌরভ সবাইকে সে দিন জামা
ওড়াতে বলেছিল, থামায় সচিন’
ক মরাঠা মহাযোদ্ধার চব্বিশ বছরের সাম্রাজ্যপতন ঘিরে যদি প্রতি মুহূর্তে দেশ আবেগের সমুদ্রগর্জন শুনতে থাকে, যদি আরব সাগরের তীরে বসে পড়ে আস্ত একটা ক্রিকেট-কার্নিভাল, যদি সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অক্লান্ত ভাবে সচিন রমেশ তেন্ডুলকর নিয়ে ব্রায়ান লারা-মহম্মদ আজহারউদ্দিনদের অক্লান্ত স্মৃতিচারণে তৈরি হয় মায়াবী বিভ্রম, তা হলে কী ভাবে উৎসবের মন্তাজ সাময়িক নষ্ট করা যায় সেটাও দেখে রাখল মঙ্গলবারের মুম্বই।
প্রেক্ষাপট বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব শুক্ল-র দু-দু’টো বিতর্কিত মন্তব্য। পরিণতি ভারতীয় ক্রিকেটের দু’জন সর্বকালীন মহাতারকার পরোক্ষে জড়িয়ে যাওয়া। এক জন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অন্য জন, সচিন তেন্ডুলকর!
বিকেল সাড়ে চারটে। নরিম্যান পয়েন্টের অভিজাত হোটেলে যখন বোর্ড মহাকর্তা উত্তরোত্তর বিতর্ক বাড়িয়ে চলেছেন, তখন সচিন বা সৌরভ, কারওরই সেটা শোনার উপায় ছিল না। মরাঠা অধীশ্বর ততক্ষণে বিদায়ী টেস্টের প্রথম প্র্যাকটিস সেশন সেরে টিম হোটেলে ফেরার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মুম্বই শহরেই নেই, আছেন কলকাতায়। বাণিজ্য-নগরীতে ঢুকছেন আজ, বুধবার। এবং কথাবার্তাগুলো দু’জনের কানে গেলে তাতে সন্তুষ্টির যে বিশেষ জায়গা নেই, বলা বাহুল্য।
সে দিন লর্ডসে। সৌরভের পাশে ম্যানেজার রাজীব শুক্ল।
ঠিক দু’টো ঘটনা এ দিন টেনে আনেন শুক্ল। দু’টোই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অধিনায়কত্ব-জমানায়। প্রথমটা বহুখ্যাত লর্ডসে সৌরভের জামা ওড়ানো। যে সময় শুক্ল ভারতীয় দলের ম্যানেজার ছিলেন। আর এ দিন এক ঘর মিডিয়ার সামনে বলে বসলেন, “সৌরভ চেয়েছিল টিমের সবাই জামা খুলে ওড়াক। বোধহয় ফ্লিনটফ কাণ্ডের বদলাটা ও ভাবেই চাইছিল। সচিন সেটা আটকায়।” শুক্ল-র কথা ধরলে সচিন নাকি তখন গিয়ে তাঁর কানে কানে বলেন যে, ক্রিকেটটা জেন্টলম্যানস গেম। সৌরভ চাইলে নিজে করুক, কিন্তু বাকিরা নয়। দ্বিতীয়টাও পরোক্ষে সৌরভকে ঘিরে এবং সচিনের হস্তক্ষেপে নাকি শেষ পর্যন্ত মিটমাট। যে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে বীরেন্দ্র সহবাগ এবং জন রাইট। তৎকালীন ভারতীয় কোচ নাকি ওভালে সহবাগের উপর রেগে গিয়ে তাঁকে চড় মেরে বসেছিলেন। সহবাগকে বিশ্রী মেজাজে ঘুরতে দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করে যা জানতে পারেন শুক্ল। এবং ওই ঘটনার পর পর নাকি সৌরভ বলে দেন, রাইটকে ক্ষমা চাইতে হবে সহবাগের কাছে। নইলে টিম ড্রেসিংরুম থেকে বেরোবে না। “রাইট আমাকে বলেছিলেন যে সহবাগের থেকে সেঞ্চুরি চাইছিলেন তিনি। কিন্তু সহবাগ সেই একই ভুল করে লিফট করতে গিয়ে আউট হওয়ায় রাইট মেজাজ হারিয়ে বসেন। কিন্তু উনি ওটা করেছিলেন সহবাগকে শিষ্যের মতো দেখতেন বলে,” এ দিন বলে দেন শুক্ল। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “সৌরভ জোর দিচ্ছিল এটা বলে যে সহবাগের কাছে রাইটকে ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু সচিন তখন আমাকে বলে যে কোনও ভাবেই রাইটকে যাতে ক্ষমা চাইতে না হয়, সেটা যেন আমি দেখি। কারণ সেটা হলে কোচের মানসম্মান বলে আর কিছু থাকবে না। সহবাগকে সেটা বলাতে ও পরে বোঝে।”
পাল্টা প্রতিক্রিয়ার জন্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বারবার ফোনে ধরার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। কিন্তু ততক্ষণে যে বিস্ফোরণ হওয়ার হয়ে গিয়েছে। রাত সাড়ে ন’টাতেও ক্রিকেট-কার্নিভালে উপস্থিত বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিনিধিদের বলতে শোনা গেল, এত দিন কিছু না বলে কেন এমন উৎসবের আবহের মধ্যে কথাগুলো বলতে গেলেন বোর্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট? ঘটনা যদি সত্যি হয়েও থাকে, তা হলেও তো দরকার ছিল না দশ বছর আগের ভারতীয় ড্রেসিংরুমের অন্দরমহলের গূঢ় তথ্যগুলোকে এ ভাবে প্রকাশ্যে নিয়ে আসার। সচিনের মহত্ব বোঝাতে বিতর্কিত প্রসঙ্গ টেনে আনার খুব দরকার ছিল কি?
এ সবের পরে উৎসবে বোধহয় আর মনও বসে না।
অথচ যাবতীয় উপাদান ছিল। যে মহম্মদ আজহারউদ্দিনকে সচিন নিয়ে বিশেষ কথাবার্তা বলতে শোনা যায় না, তিনিও এ দিন কিছুটা আবেগতাড়িত। এক সময়ের ঝাঁকড়া চুলের কিশোর টিমমেট নিয়ে তাঁর এখনও মনে পড়ে যায়, ’৮৯ সফরে এক রাতের কথা। যখন রাত তিনটেয় উঠে তিনি আর ডব্লিউ ভি রামন প্রত্যক্ষ করেছিলেন, না ঘুমিয়ে কী ভাবে একা একা শ্যাডো করে যাচ্ছেন কিশোর সচিন। মনে পড়ে যায়, এক চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে ইন্ডিয়া ‘এ’ বনাম ইন্ডিয়া ‘বি’ ম্যাচ। যেখানে সচিনের কথা শুনে ফিল্ডার বদল কাজে এসেছিল, যেটা নিয়ে আজহার বললেন, “লোকে সে দিন আমার ক্যাপ্টেন্সির প্রশংসা করেছিল। কেউ জানতও না সচিনের কথাতে ফিল্ড চেঞ্জ করে উইকেটটা এসেছিল।” আজহার এখনও ভোলেননি পারথে ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি। আগের নিউজিল্যান্ড সফরে কী রকম বিমর্ষ দেখাত সচিনকে। বলছিলেন, “আসলে ওই সফরে তো সেঞ্চুরি পায়নি সচিন। পেলে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্লেয়ার হিসেবে সেঞ্চুরিটা ওরই হত। অত কম বয়সে ও রকম ধুরন্ধর ক্রিকেটীয় মগজ আর আমি দেখিনি। সচিনকে দেখে আমার একটা কথা বারবার মনে হত। ও দু’নম্বর হওয়াকে ঘৃণা করে। বরাবর একে থাকতে চায়।” স্যর ডন ব্র্যাডম্যান, স্যর গারফিল্ড সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস সবাইকে ধরেই ব্রায়ান লারার আবার মনে হয় সর্ব শ্রেষ্ঠ ক্রিকেট কেরিয়ারের মুকুট যদি কাউকে দিতে হয়, তা হলে তিনি সেটা সচিনকে দেবেন। অন্য কাউকে নয়। গৌতম গম্ভীর আবার আগামী ১৮ নভেম্বরের পরে সচিনের থেকে কোনও কিছু স্মারক হিসেবে চান না। চান, তাঁর স্মৃতিকে স্মারক হিসেবে নিজের কাছে জমা রাখতে। তাঁর কাছে সচিন এক কথায় ‘জিনিয়াস’। রামিজ রাজার কাছে ‘দ্য ওয়ান’। লারার সমীকরণে গ্রেটেস্ট। সেরার সেরা। আজহারের কাছে গ্রেটেস্ট আবার ‘সুনীল গাওস্কর প্লাস সচিন’।
শুধু এ সবের মাঝে রাজীব শুক্ল নামক ‘বিতর্ক’ শব্দটা যে কোথা থেকে জুড়ে গেল!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.